সোমবার, ০২ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
প্রতিবাদে বিক্ষোভ

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হোস্ট টিচারদের গণহারে চাকরিচ্যুত

উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
  ৩১ মে ২০২৫, ১৯:২৮
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হোস্ট টিচারদের গণহারে চাকরিচ্যুত
কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হোস্ট টিচারদের গণহারে চাকরিচ্যুত করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ: ছবি যায়যায়দিন

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন এনজিওতে কর্মরত আড়াই হাজারের অধিক স্থানীয় হোস্ট টিচারকে কোনো ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ একযোগে গণ ছাটাই করা হয়েছে। এরই প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন হোস্ট টিচাররা।

শনিবার (৩১ মে) সারাদিন উখিয়া শহীদ মিনার চত্বরে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করার প্রতিবাদে ও পুনরায় চাকরি পূর্ণবহাল দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা। অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়।

1
দাবি পূরণ না হলে আইএনজিও এবং এনজিও সংস্থার কোনো গাড়ি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঢুকতে দেওয়া হবে না।

বিক্ষোভকারী শিক্ষকরা জানান, ব্র্যাক, কোডেক, ফ্রেন্ডশিপ, মুক্তি, কোস্ট ফাউন্ডেশন ও জেসিএফসহ বিভিন্ন এনজিও সংস্থা রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য পরিচালিত স্কুলগুলোতে স্থানীয় ও রোহিঙ্গা উভয় সম্প্রদায়ের শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছিল।

তবে হঠাৎ করে ‘অর্থ সংকটের’ কারণ দেখিয়ে শুধু স্থানীয় ১২৫০ জন শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা হয়, যেখানে রোহিঙ্গা শিক্ষকরা বহাল থাকেন।

অভিযোগ রয়েছে, আরও প্রায় ৩ হাজার শিক্ষককে ছাঁটাইয়ের প্রস্তুতি চলছে।

এদিকে চাকরিচ্যুতের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চাকরি পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। অন্যথায় আগামীকাল রোববার (১ জুন) থেকে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ পরিচালনাকারী কোনো এনজিও ও আন্তর্জাতিক সংস্থার গাড়ি প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

ভুক্তভোগী শিক্ষক মোহাম্মদ শামীম হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা শিক্ষকরা যদি কাজ করতে পারে, তাহলে আমরা কেন পারব না? অথচ শুধু আমাদেরই চাকরিচ্যুত করা হলো। এ বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নেব না।’

উখিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সরওয়ার জাহান চৌধুরী বলেন, ‘তহবিল সংকট থাকলে স্থানীয়দের বাদ দিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম চালানো যৌক্তিক নয়। বরং শিক্ষা প্রকল্পই বন্ধ করে দেওয়া উচিত।

উখিয়া উপজেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব সাদমান জামী চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ফান্ড সংকট যুক্তি দেখিয়ে স্থানীয় হোস্ট টিচারদের চাকরিচ্যুত করা অন্যায় ও অমানবিক। স্থানীয়দের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আন্দোলন গড়ে তুলা হবে।

ব্যারিস্টার সাফাত ফারদিন রামীম তার ভেরিফাই ফেসবুকে লিখেছেন, ‘হোস্ট এরিয়া উখিয়া টেকনাফ মগের মুল্লুক নয়, যে যখন যা খুশি সিদ্ধান্ত নেবেন। হোস্ট কমিউনিটির ৪ হাজার টিচারকে অন্যায়ভাবে অপসারণের চেষ্টা করা হলে আমরা ছাড় দেব না। সব কিছুর ফান্ড থাকে হোস্ট কমিউনিটির বেলায় ফান্ড থাকে না, এই খেলা বন্ধ করতে হবে।’

এ বিষয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, ইউনিয়সেফের অর্থায়নে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন এনজিও ক্যাম্পে শিক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে।

কিন্তু অর্থ সংকটের কারণে শিক্ষা প্রকল্পটি বন্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে। এ বিষয়টি ইউনিসেফ চিঠি যোগে সরকারকে অবহিত করেছে। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্প চালানোর অর্থ তাদের রয়েছে বলে চিঠিতে বলা হয়েছিল।

এর অংশ হিসেবে কিছু সংখ্যক শিক্ষক চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে যারা আন্দোলন করছে তারা ইতিমধ্যে তার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদেরকে বিষয়টি বিস্তারিত জানানোও হয়েছে।

জানতে চাইলে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, অর্থ সংকটের কারণে শিক্ষা প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে