সাপ্লাইয়ের পানি পান করেই ঈশ্বরদী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) গত দুই দিনে ৫ শতাধিক নারী শ্রমিক ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। বর্তমানে তারা ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
চিকিৎসক সংকটের কারণে এক সঙ্গে হাসপাতালে আসা রোগীদের জরুরী সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের। আর বেশ কয়েকজনের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাদের ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে পাবনা ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
শনিবার (৩১মে) সকালে ও শুক্রবার দুপুরে ঈশ্বরদী ইপিজেডের কয়েকটি কোম্পানি, ইপিজেডের নিজস্ব হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে বিভিন্ন সুত্রে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
আক্রান্তরা সবাই ইপিজেডের রেনেসাঁ, ডেনিম ভিনটেজ (এবা), নাকানো ইন্টারন্যাশনাল বিডি, স্টেলা হেয়ারসহ অন্যান্য কোম্পানির শ্রমিক।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও আক্রান্ত শ্রমিকরা জানান, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে তারা প্রতিদিনের মত খাবার খান। ইপিডেজের কোম্পানিগুলোতে দেওয়া সাপ্লাই লাইনের পানি পান করেন। এর কয়েকঘন্টা পর থেকেই শ্রমিকরা অসুস্থ হতে শুরু করেন। তাৎক্ষণিক কিছু শ্রমিক ছুটি নিয়ে বাড়িতে চলে যান।
ওইদিন (বৃহস্পতিবার) মধ্যরাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় শতাধিকের বেশি শ্রমিক ডায়রিয়াজনিত সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন হাসপাতালে। এ সময় প্রথমিক চিকিৎসা শেষে অনেকেই বাড়িতে চলেও যান। কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি হন। কিন্তু তাদের অবস্থার অবনতি হলে ১৪-১৫ জনকে গুরুতর অবস্থায় পাবনা ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বর্তমানে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নারী ও পুরুষ ওয়ার্ডে ৩২ জন রোগী ডায়রিয়া, বমি ও পেট ব্যথা নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।
শ্রমিকরা আরও জানান, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে খাবার সময় যে পানি পান করেন তাতে একটু দূর্গন্ধ ছিল। শুক্রবার সকালে ডিউটি করতে গিয়ে তাদের অনেকেই হঠাৎ অসুস্থ হতে থাকেন। একই সঙ্গে তাদের বমি শুরু হওয়ায় তারা হাসপাতালে ভর্তি হন। পানির কারনে সম্ভবত এমন সমস্যা হয়েছে বলে তারা ধারনা করছেন।
ঈশ্বরদী ইপিজেডের বেপজা হাসপাতালের চিকিৎসক ডাক্তার ফয়সাল হাসান বলেন, এটা ডায়েরিয়ার মৌসুম। বছরে দুইবার ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হওয়া স্বাভাবিক। এতে ভয়ের কোনো কারণ নেই। বেপজা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বেশি খারাপ হলে ঈশ্বরদী, পাবনা ও রামেক পাঠানো হচ্ছে।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার মো. সাহেদুল ইসলাম শিশির বলেন, ডায়েরিয়া রোগির সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। গত দুই দিনে ঈশ্বরদী ইপিজেডের শতাধিক শ্রমিক খাদ্য কিংবা পানিতে ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে শনিবার দুপুর একটা পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ৫১ জন। আর আগে শুক্রবার ভর্তি হন ৪২ জন। এর মধ্যে তিনজন মহিলা ও একজন পুরুষকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) পাঠানো হয়েছে। আর ৪৭ জনকে চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠানো হয়।
তিনি আরও বলেন, আক্রান্ত রোগির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পাবনা সিভিল সার্জনকে অবগত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ঈশ্বরদী ইপিজেড এর নির্বাহী পরিচালক (ইডি) এ বি এম শহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ‘শ্রমিক অসুস্থ্যের বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। বেপজা ও কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে আক্রান্তদের চিকিৎসার বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইপিজেডে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তাদের সঙ্গে আমরাও সাপ্লাইয়ের পানি পান করি। পানিতে সমস্যা হলে সকল শ্রমিকসহ আমাদেরও আক্রান্ত হওয়ার কথা।
কিন্তু সেখানে মাত্র কিছু শ্রমিক আক্রান্ত হয়েছেন। শনিবার সাপ্লাইকৃত পানি পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।