ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র ৫ দিন। তবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে কোরবানি পশুর বাজারগুলোতে ক্রেতার চাপ নেই। চট্টগ্রাম নগরে সিটি কর্পোরেশন অনুমোদিত একমাত্র স্থায়ী ছাগলের হাট পোস্তারপাড়। সাধারণত বছরজুড়ে ছাগল বিক্রি হয় এই হাটে। আসন্ন কোরবানির ঈদ ঘিরে কয়েকশ ছাগল বিক্রির জন্য আনা হয়েছে এই হাটে। তবে বিক্রি শুরু হলেও গেলো কয়েকদিনের বৃষ্টিতে এখনও ক্রেতাশূন্য হাটটি। তাই বিক্রির পরিমাণও শূন্যের কোঠায়।
গত পাঁচ দিন ধরে হওয়া বৃষ্টির কারণে পশুর হাটগুলো ক্রেতা শূণ্য হয়ে পড়েছে। ক্রেতা না থাকায় বিক্রেতারা হতাশ। যাও অল্প সংখ্যক ক্রেতা আসছেন তারাও দরদাম করে না কিনেই ফিরে যাচ্ছেন। এতে বিক্রেতা ও হাটের ইজারাদারেরাও পড়েছেন বিপাকে।
মাহমুদ রহমান নামের এক বিক্রেতা বলেন, সকাল থেকে বৃষ্টি আর বৃষ্টি। আজ কোন বিক্রি হয়নি। সকাল থেকে বৃষ্টির মধ্যে বইস্যা আছি। প্যাক-কাদায় বাজার ভরে গেছে। এইরহম দুর্ভোগের মধ্যে আছি যে কওনের মত না।
নগরীর দেওয়ানহাট এলাকায় এই হাট ঘুরে দেখা যায়, ত্রিপল টাঙানো থাকলেও বৃষ্টিতে ভিজছিল ছাগলের খুপড়িগুলো। হাটের কোথাও কোথাও কিছুটা পানিও জমতে দেখা গেছে। এর মধ্যে ছাগলকে পানি থেকে রক্ষা করতে কোন কোন ব্যাপারিকে কয়েক ইঞ্চি সিমেন্টের বেষ্টনী দিতে দেখা গেছে। ভারী বৃষ্টিতে ছাগলসমেত দুর্ভোগে পড়েছেন বিক্রেতারা।
সিটি কর্পোরেশনের তথ্যানুযায়ী, এবার নগরে ১০টি অস্থায়ী ও তিনটি স্থায়ী হাটে কোরবানির পশু বিক্রি হওয়ার কথা রয়েছে। এর বাইরে জেলার ১৫ উপজেলায় বসবে আরও দুই শতাধিক হাট।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, এবার সবমিলিয়ে আট লাখ ৯৬ হাজার ২৬৯টি কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে চট্টগ্রামে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৮৫ হাজার ২৫০টি পশুর চাহিদা রয়েছে সন্দ্বীপে। সবচেয়ে কম ২৯ হাজার ৭৪২টি পশুর চাহিদা রয়েছে বোয়ালখালীতে। চট্টগ্রামে কোরবানির ঈদ ঘিরে এবার প্রস্তুত করা হয়েছে সবমিলিয়ে আট লাখ ৬০ হাজার ৮৮২টি পশু। সে হিসেবে ৩৫ হাজার ৩৮৭টি পশুর ঘাটতি রয়েছে এবার। তবে বন্দরনগরীর হাটে আশপাশের জেলা ও উত্তরবঙ্গ থেকে খামারিরা চট্টগ্রামে পশু বিক্রির জন্য নিয়ে আসায় সেই ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
বিক্রেতারা জানান, প্রতিবছরের মতো এবারও রাজশাহী, পাবনা, বগুড়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ছাগল নিয়ে এসেছেন তারা। অবশ্য তাদের কেউ কেউ নিয়মিতই ছাগল নিয়ে আসেন এই হাটে। তবে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার এখনও ক্রেতা কম। বৃষ্টি কমলে ক্রেতা বাড়তে পারে বলে ধারণা তাদের।
এদিন রাজশাহী থেকে ছাগল বিক্রি করতে আসা ব্যাপারি শামসুল আলম বলেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মনসা পূজার সময়ও আমি কিছু ছাগল নিয়ে এসেছিলাম। এর বাইরে প্রতিবছর কোরবানির ঈদে বেশকিছু ছাগল বিক্রির জন্য এই হাটে আনি। এবারও কোরবানিতে বিক্রির জন্য ছোটবড় ৩০টি ছাগল নিয়ে এসেছি; কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র একটি ছাগল বিক্রি করতে পেরেছি।
পোস্তারপাড় হাটের ইজারাদারদের প্রতিনিধি মোহাম্মদ আলী বলেন, বৃষ্টির কারণে বেশ সমস্যা হচ্ছে। বিক্রি নেই বললেই চলে। সারাদিনে কেবল দুটো ছাগল বিক্রি হয়েছে। গতকালও মাত্র দুটি ছাগল বিক্রি হয়েছে। এখনও মানুষ হাটে আসছে না। হয়তো বৃষ্টির কারণে আসতে পারছে না।