শেরপুরের শ্রীবরদীতে সুদের টাকা না দেওয়ায় এক ব্যবসায়ীকে ‘গরুচোর’ অপবাদ দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ১৫ জুন রবিবার দুপুরে উপজেলার খড়িয়া কাজিরচর ইউনিয়নের ভাটিলংগরপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নির্যাতনের শিকার ওই যুবকের নাম নূর আলম (৩৮)। তিনি উপজেলার খড়িয়াকাজিরচর ইউনিয়নের ভাটি লংগরপাড়া গ্রামের নূর ইসলামের ছেলে ও পেশায় একজন ধান ব্যবসায়ী।
এদিকে ১৬ জুন সোমবার ওই ব্যবসায়ীকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জেলাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর আগে শ্রীবরদী উপজেলার ভাটি লংগরপাড়া এলাকার মো. জলিলের কাছ থেকে এক লাখ টাকা মাসিক দশ শতাংশ হারে সুদে ঋণ নেন ধান ব্যবসায়ী নূর আলম। ঋণ নেওয়ার পর সুদের টাকা কয়েক মাস নিয়মিত দিয়েছেন তিনি।
পরে সুদের টাকা অনিয়মিত হয়ে পড়ায় কথা কাটাকাটি হয় উভয়ের মাঝে। ওই ঘটনায় মারধরের অভিযোগ তুলে আদালতে মামলা করেন ঋণদাতা জলিল।
গত এক বছর যাবৎ মোটরসাইকেলটি জলিলের বাড়িতেই আছে। মোটরসাইকেলটি আটক করে রাখার পর নুর আলম শ্রীবরদী থানা একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাননি। এসব ঘটনা নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ ও উত্তেজনা চলছিল বেশ কিছুদিন যাবৎ।
এক পর্যায়ে গতকাল রোববার দুপুরে টাকা আদায়ের জন্য নূর আলমকে লংগরপাড়া বাজার থেকে ধরে নিয়ে বাড়িতে গাছের সাথে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখেন জলিল ও তার কয়েকজন সহযোগী। এক পর্যায়ে গরু চুরির অপবাদ দিয়ে তাঁকে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ নূর আলমের।
ওইসময় জলিলের বাড়ির সবাই মিলে তাঁকে লাঠিপেটা করাসহ শরীরের কাপড়ও ছিঁড়ে ফেলা হয়। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, নূর আলমের দুই হাত গাছে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। এক নারী তার জামার কলার ধরে তাঁকে নির্যাতন করছেন। তাঁকে মারধরের সময় বলতে শোনা যায়, ‘এ …. একটা গরু চোর, তাই ধইরি (ধরে) বান্ধিছি। মাইনষের টাইন (কাছ থেকে) ট্যাহা নিছে। আংগর টাইন ৬ লাখ ট্যাহা নিছে।’
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী নূর আলম বলেন, ‘সুদের টাকা বাকি পড়ার কারণে আমার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল আটক করে রেখেছে জলিল। পরবর্তীতে জলিল বলেছে, আমার টাকা-পয়সা আর কোন দাবি-দাওয়া নাই। এছাড়াও সে আমার বিরুদ্ধে কোর্টেও মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সেই মামলা কোর্টে পরিচালনা করছি।
রোববার আমাকে লংগরপাড়া বাজার থেকে ৬-৭ জন সন্ত্রাসী দিয়ে জোর করে উঠিয়ে নিয়ে তার বাড়িতে গাছের সাথে বেঁধে রেখেছে। উল্টা বলতেছে আমি নাকি গরু চোর। এভাবে তারা আমার মানসম্মানটাকে নষ্ট করে দিয়েছে। আমি প্রশাসনের কাছে এর বিচার চাই।’
ঘটনার ব্যাপারে খড়িয়া কাজিরচর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আশরাফুল কবীর রূপা বলেন, ‘আমি ঘটনা শোনার পর আব্দুল জলিলের বাড়িতে গিয়ে দেখি নূর আলম বাঁধা অবস্থায় আছে এবং বাড়িতে প্রায় শতাধিক মানুষ ভিড় করেছে।
আমি তাদেরকে বলি, এভাবে মানুষ আটকে রাখা যাবে না। পরে আমি উভয় পক্ষের সাথে কথা বলে আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে দুই পক্ষকে সম্মত করি। তবে বেঁধে রাখার বিষয়টা নিয়ে আমরা সামাজিকভাবে জলিলকে তিরস্কার করেছি।’
তবে অভিযোগের বিষয়ে মো. জলিল বলেন, ‘আমি তার কাছে অনেকদিন যাবৎ টাকা পাই। তাই তাকে বাজার থেকে ধরে এনেছি। তাকে আমি কোন মারধর করি নাই।
আমি নিয়ে আসার পরে তাকে বাড়িতে স্বাভাবিক অবস্থায় রেখে দিয়েছিলাম। পরে তাকে যখন আটকাতে পারতেছি না তখন বেঁধে রেখেছিলাম। পরে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও পুলিশ এসে আমাকে টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিলে তাকে ছেড়ে দিয়েছি।’
এ ব্যাপারে শ্রীবরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার জাহিদ বলেন, ‘এক ব্যক্তিকে গাছে বেঁধে রাখার খবর পাওয়ার সাথে সাথে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। তবে ঘটনাস্থলে গিয়ে নূর আলমকে গাছে বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায়নি।
তার আগেই স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে বিষয়টি সমঝোতা হয়েছে বলে জেনেছি। তাদের কোন অভিযোগ থাকলে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’