ইসরায়েলের একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় রাজধানী তেহরানে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, প্রাণ বাঁচাতে হাজারো মানুষ শহর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে।
গতকাল রোববার (১৫ জুন) তেহরানের পেট্রল পাম্পগুলোতে ছিল দীর্ঘ লাইন, যেখানে জ্বালানি সংগ্রহের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন ঘর ছাড়তে প্রস্তুত বাসিন্দারা।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা সংবাদমাধ্যমকে জানান, “মানুষজন চরম আতঙ্কে ভুগছে। প্রতিটি পেট্রল পাম্পে উপচে পড়া ভিড়, সবাই দ্রুত নিরাপদ স্থানে যেতে চাইছে।”
পেট্রল পাম্পে জ্বালানির স্বল্পতাও চোখে পড়ছে। অনেকেই অভিযোগ করছেন, চাহিদামতো পেট্রল পাওয়া যাচ্ছে না। আরেকজন বাসিন্দা হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, “রাজধানীতে আশ্রয় নেওয়ার মতো কোনো নিরাপদ জায়গা নেই। যদি হামলা হয়, আমরা কোথায় যাব?”
তেহরানের অধিকাংশ বাসিন্দা উত্তর দিকের গ্রামীণ এলাকাগুলোকে তুলনামূলক নিরাপদ মনে করে সেদিকেই ছুটছে। কিন্তু এই গণপলায়নের কারণে মহাসড়কগুলোতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে, যা চলাচলকে অত্যন্ত ধীর ও কষ্টসাধ্য করে তুলেছে।
গতকালই ইসরায়েল তাদের অস্ত্র কারখানার আশেপাশে বসবাসকারী ইরানিদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে অনুরোধ জানিয়েছিল। একই দিনে ইরানও ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও বৈজ্ঞানিক স্থাপনার আশেপাশে বসবাসকারী ইসরায়েলিদের সরে যাওয়ার অনুরোধ জানায়, যা উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তোলে।
রয়টার্স-এর প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, আহত ও আতঙ্কিত বহু মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে। এই সংঘাতে নিহতদের বেশিরভাগই সাধারণ বেসামরিক নাগরিক, যা উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে।
এদিকে, ইসরায়েলের বন্দরনগরী হাইফায় ইরানের হামলায় বহু মানুষ আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তেল আবিব থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরের এই শহরটিতে হামলার খবর নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম।
তারা জানিয়েছে, হামলার শিকার এলাকাগুলোতে ভয়াবহ আগুন দেখা যাচ্ছে। ইরানের এই সর্বশেষ হামলার পর ইসরায়েলের জরুরি সেবার কর্মীরা দ্রুত উদ্ধার ও ত্রাণ কাজে নেমে পড়েছেন। ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, সোমবার ভোরে ইরানের সম্ভাব্য ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিহত করার উদ্দেশ্যেই ইসরায়েল ইরানে পাল্টা হামলা চালিয়েছে।
এর আগে, তেহরানে ইসরায়েলের হামলায় ইরানের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান, তার একজন সহকারী এবং একজন কমান্ডারের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে ইরান।
গতকাল সন্ধ্যায় ইরানের হামলায় ইসরায়েলে মোট আটজন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে হাইফা শহরেই সাতজন প্রাণ হারিয়েছে। এই চলমান সংঘাত দুই দেশের সাধারণ মানুষের জীবনে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে এসেছে।