বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২

ফটিকছড়িতে খোঁজ মেলেনি গৃহবধূ রেজিয়ার, ফের নিখোঁজ শিশু

ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
  ১৯ জুন ২০২৫, ১৯:০০
ফটিকছড়িতে খোঁজ মেলেনি গৃহবধূ রেজিয়ার, ফের নিখোঁজ শিশু
ছবি: যায়যায়দিন

চট্টগ্রাম ফটিকছড়িতে খালে গোসল করতে গিয়ে রেজিয়া বেগম (৪৭) নামে এক মহিলা নিখোঁজের ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। এদিকে তার মধ্যেই এ ঘটনার পরদিন হালদা নদীর পাড়ের এক বাসীন্দার শিশু কন্যা নিখোঁজ হয়েছেন।

জানা যায়- ১৮ জুন উপজেলার কাঞ্চনগর ইউপির ২নং ওয়ার্ডের ধুরুং খালের কালাপানির মুখ এলাকায় বেলা ৩টার দিকে গোসল করতে যায় রেজিয়া বেগম। সেখান থেকে দীর্ঘক্ষণ তিনি না ফেরাতে পরিবারের লোকজন খুঁজতে গেলে খালের পাড়ে তার কাপড় থাকলেও তাকে আর পাওয়া যায়নি।

বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় শতশত মানুষ খালে রাতভর হাতজাল সহ বিভিন্নভাবে তল্লাশি চালিয়ে খোঁজে বের করার চেষ্টা করে। তাতেও রেজিয়ার সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে ডুবুরি দল খোঁজাখোজি করে তারাও ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায়। ১৯জুন এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত (সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা) রেজিয়ার সন্ধান পাওয়া যায়নি।

এদিকে এ ঘটনা শেষ না হওয়ার আগেই উপজেলার পূর্ব সুয়াবিল হালদা নদীর পাড়ের বাসিন্দা মানিক ড্রাইভারের দেড় বছরের শিশু কন্যা তাহিয়াকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সকাল ১১টা থেকে ওই শিশু এখনো নিখোঁজ। স্থানীয়দের সন্দেহ সে কোন ভাবে নদীতে পড়ে গিয়েছে তা না হলে খোঁজে পাওয়া যেত। এ ঘটনার পর এলাকায় শোকের মাতম চলছে।

তবে এতেই শেষ নয়, বিগত কিছু দিনের মধ্যে হালদা নদী এবং ধুরুং খালে ৫টি দূর্ঘটনা ঘটেছে। তন্মধ্যে ৩টি ঘটনায় ৪জনের মৃত্যু হয়েছে এবং অন্য ২টি ঘটনায় ২জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। এ ঘটনা গুলোর পর এলাকায় চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির পাশাপাশি জনমনে ভয় বিরাজ করছে।

এ বিষয়ে কাঞ্চননগরের ভিডিপি দলনেতা সাজেদুল ইসলাম বলেন, "খালগুলোতে আপাতদৃষ্টিতে পানির গভীরতা কম মনে হলেও, এর তলদেশ অপ্রত্যাশিতভাবে গভীর বা অসম হতে পারে। এছাড়া, বর্ষায় উজানের পানি নেমে আসায় খালের প্রবাহ হঠাৎ বৃদ্ধি পায়, যা শক্তিশালী স্রোতের সৃষ্টি করে এবং অপ্রত্যাশিত টান তৈরি করতে পারে। এই অদৃশ্য বিপদ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের অসচেতনতাও দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ।"

হালদা পাড়ের বাসীন্দা কৃষক মো: সোহেল বলেন- ফটিকছড়ি হালদা এবং ধুরুং এ প্রতিবছর মানুষ মারা যায়। অনেকে বলে পানিতে ডুবে মারা যায়, তবে শুধু পানিতে ডুবে মারা গেলে লাশ স্রোতে ভেসে নিয়ে যাওয়ার কথা, কিন্তু ঘটনার কয়েক ঘন্টা পর ঠিকই একই জায়গায় লাশ পাওয়া যায় অথচ যে জায়গায় লাশ পাওয়া যায় সেখানে এর আগেও একাধিকবার খোঁজা হয়েছিল। এ মৃত্যু গুলোর পেছনে নিশ্চয় অদৃশ্য বা অলৌকিক কোন কারণ আছে।

এদিকে এসব ঘটনা ঘটার পর পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ধরনের সহযোগিতা পাওয়া যায়না। ফায়ার সার্ভিসের টিম গেলেও তারা পানিতে না নেমে চট্টগ্রাম থেকে ডুবুরিদের নিয়ে আসেন, ২-৩ ঘন্টা পর ডুবুরি দল আসলেও ততোক্ষণে শুধুমাত্র লাশটিই পাওয়া যায়। আবার অনেক সময় লাশ ও পাওয়া যায়না।

এ ব্যাপারে সমাজকর্মী নাজমুল তারেক বলেন- নদী খাল বেষ্টিত ফটিকছড়ি হওয়াতে বর্ষা মৌসুমে এসব নদী খাল এলাকার মানুষ থাকে অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে। কেউ যখন ডুবে যায় বা হারিয়ে যায় তাদের তৎক্ষণাৎ উদ্ধার করা যায়না ডুবুরি দলের অভাবে। এমন কোন নজীরও নেই যে খালে বা নদীতে নিখোঁজের পর কাউকে জীবিত উদ্ধার করতে পারার।

এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে এলাকার সচেতন মহল স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের প্রতি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। তারা খালের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করে সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড স্থাপন, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে গোসল বা চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির কথা বলছেন।

ফটিকছড়ির খালগুলো স্থানীয়দের জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও, সাম্প্রতিক ঘটনাবলী প্রমাণ করছে এগুলো এখন মরণফাঁদে পরিণত হচ্ছে। দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে আরও বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে