"দেশি ফল বেশি খাই, আসুন ফলের গাছ লাগাই" এ প্রতিপাদ্যে হাটহাজারীতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে উপজেলা কৃষি অফিসার আল মামুন শিকদারের সভাপতিত্বে ফল মেলা-২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে কৃষি অফিসারের কার্যালয় কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত মেলায় প্রধান অতিথি ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম মশিউজ্জামান।
উপ সহকারী কৃষি অফিসার মো. হাসানের সঞ্চালনায় মেলায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা প্রকৌশলী জয়শ্রী দে, নির্বাচন অফিসার পরান্টু চাকমা, সমবায় কর্মকর্তা মো. বখতিয়ার উদ্দিন, হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. আকরাম উদ্দিন, প্রেস ক্লাব সভাপতি কেশব কুমার বড়ুয়া, হাটহাজারী সাংবাদিক ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. বোরহান উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন পল্লব।
এসময় দেশীয় ফলের কদর, উপকার ও রোপনের গুরুত্বারোপ করতে গিয়ে সরকার আকাশমনি ও ইউক্যালিপটাস গাছ রোপণ ও বিক্রয় নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন জানিয়ে এর কারণ হিসেবে বক্তারা বলেন, আকাশমনি ও ইউক্যালিপটাস দুটি গাছ যেমন পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর তেমনি ক্ষতিকর অন্যান্য গাছের জন্য। গবেষণায় গাছ যে মানুষের জন্য কত ভয়ংকর তা বেরিয়ে এসেছে।
তারা বলেন, আকাশমনি গাছের ফুলের রেনু ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। মানুষ আক্রান্ত হয় নিউমোনিয়ায়।শ্বাসকষ্ট জনিত বা হাঁপানি রোগীদের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। এছাড়া যারা সাইনাসের সমস্যা তাদের জন্য হুমকিস্বরুপ। বেড়ে যায় এলার্জির প্রবণতা।
এ গাছের ফুলের রেনু শিশু এবং প্রবীণদের জন্য এতই বেশি ক্ষতিকারক যে এই গাছের পাশে গেলে মাক্স ইউজ করা কে মাস্ট বলে দাবি করেন চিকিৎসকরা।
এই গাছটি রাত-দিন ২৪ ঘন্টা মাটি থেকে পানি শোষণ করে এবং বাতাসে ছেড়ে দেয় এর ফলে মাটিতে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। এই গাছের পাতায় প্রচুর পরিমাণ টক্সিন থাকায় আশেপাশে অন্য কোন প্রজাতির গাছ জন্মগ্রহণ করতে পারেনা। পাতা গাছের গোড়ায় পড়ে গোড়ার আশেপাশের মাটিকে অনেক বেশি বিষাক্ত করে তোলে। গাছের মূল থেকে নির্গত কিছু বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ মাটির গুনাগুনকে নষ্ট করে দেয়। অপরদিকে ইউক্যালিপটাস গাছ মাটির গভীর থেকে বিপুল পরিমাণ পানি শোষণ করে নেয়।
ফলে আশেপাশের মাটি শুষ্ক হয়ে পড়ে, যা কৃষিকাজ এবং অন্যান্য উদ্ভিদের জন্য ক্ষতিকর। শুধু তাই নয়, এই গাছের মূল ও পাতা থেকে নির্গত বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ আশেপাশের গাছগুলোর বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে এবং মাটির উর্বরতা কমিয়ে দেয়। এই গাছদুটি জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি। পাখি, পোকামাকড় এমনকি ক্ষুদ্র প্রাণীকুল পর্যন্ত এই গাছে বাসা বাঁধে না এমনকি খাদ্য খুঁজে পায় না কোন প্রাণীকুল। মূলত এই গাছদুটি পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে, যার ফলে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তাই আমরা যদি পরিবেশকে রক্ষা করতে চাই, তাহলে শুধু নীতিমালা প্রণয়ন যথেষ্ট নয়, তা বাস্তবায়ন করাও জরুরি।
প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব পরিবেশবান্ধব বৃক্ষরোপণে অংশগ্রহণ করা। স্কুল, কলেজ, অফিস এমনকি নিজ বাড়ির আশেপাশে দেশীয় প্রজাতির গাছ লাগানো যেতে পারে। সামাজিক বনায়ন কর্মসূচিতে স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে।
এদুটি গাছ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তকে শুধুমাত্র প্রশাসনিক পদক্ষেপ হিসেবে না দেখে, এটিকে আমাদের পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে দেখা উচিত বলেও উল্লেখ করেন বক্তারা। এসময় অনুষ্ঠানের শেষে পৌরসভা ও বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকদের মাঝে প্রণোদনা (বীজ, গাছের চারা) বিতরণ করা হয়।