কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ভুয়া ডিগ্রী পাশের সার্টিফিকেট দিয়ে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এ্যাডহক কমিটির সভাপতি হয়েছেন স্থানীয় বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম।
এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা এবং তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। রফিকুল ইসলাম চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিসা ইউনিয়ন বিএনপি’র সদস্য সচিব।
জানা যায়, গত বছর ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বতীকালীন সরকারের অধীনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একযোগে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটিগুলো বিলুপ্ত করে এডহক কমিটির নির্দেশনা জারি করে। নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি হওয়ার জন্য ডিগ্রি বা সমমান পাশের সার্টিফিকেট থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়।
সারা দেশের ন্যায় চৌদ্দগ্রামের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এডহক কমিটি গঠনও প্রায় শেষ পর্যায়ে। এরই ধারাবাহিতায় গত ১৬ মার্চ চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিসা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে বাতিসা ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব মোঃ রফিকুল ইসলামের নাম চুড়ান্ত অনুমোদন দেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, কুমিল্লার পক্ষে বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক।
সূত্রে জানা গেছে, বাতিসা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে মনোনীত হওয়া মোঃ রফিকুল ইসলাম কর্তৃক সংশ্লিষ্ট অফিসে তাঁর নামে জমা দেয়া ডিগ্রি সনদটি জাল তথা ভুয়া। অভিযোগ উঠার পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেকর্ডরুম সূত্রে সনদটি যাচাই করে জানা যায়, জমাকৃত যে সনদটি প্রদর্শন করা হয়, সেটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ইস্যু করা হয়।
আর সে সনদে উল্লিখিত মোঃ রফিকুল ইসলাম ঢাকা নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজে ১৯৮৭-৮৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র হিসেবে ১৯৮৯ সালে ডিগ্রি (বিএ) পাস করে। অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিতই হয়েছে ১৯৯২ সালের শেষের দিকে। আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যায়ের অধীনে ডিগ্রির প্রথম ব্যাচের পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেয় ১৯৯৩ সালে।
সনদ জাল কি না জানতে চাইলে সভাপতি মোঃ রফিকুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে উল্টো প্রশ্ন করেন আমি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট জমা দিয়েছি সেটা আপনি কিভাবে জানলেন? এছাড়া সার্টিফিকেট জাল কি না সাংবাদিকের এ প্রশ্নের আর কোন জবাব না দিয়ে তিনি মোবাইল ফোনের লাইন কেটে দেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শাহনাজ বেগম বলেন, সভাপতি মোঃ রফিকুল ইসলাম আমার কাছে তার ডিগ্রির সনদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছেন, আমি উপজেলা শিক্ষা অফিসে সেগুলো জমা দিয়েছি। তার সনদ জাল কি না সেটা যাচাই করার দায়িত্ব আমার নয়।'
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম মীর হোসেন জানান, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হওয়ার জন্য ডিগ্রি বা সমমান পাশের সার্টিফিকেট থাকা বাধ্যতামূলক। নিয়মানুযায়ী সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ সকল কাগজপত্র সঠিকভাবে যাচাই বাচাই করে সভাপতি পদে ৩ সদস্যের একটি প্যানেলের নাম আমার নিকট প্রস্তাব পাঠায়।
আর আমি সে প্রস্তাব উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়ের নিকট জমা দিই। তিনি সেটি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বোর্ড চেয়ারম্যানের নিকট সভাপতি হিসেবে অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করেন। বোর্ড চেয়ারম্যান এই তালিকা থেকে একজনের নাম চুড়ান্ত অনুমোদন দেন।
বাতিসা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় এডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে অভিযুক্ত মোঃ রফিকুল ইসলামের ডিগ্রী সার্টিফিকেট প্রথমে সত্যায়িত ব্যতীত জমা দেয়ায় আমি প্রধান শিক্ষিকাকে সত্যায়িত কপি জমা দিতে বলি। পরে তিনি সত্যায়িত কপি জমা দেন। তবে রফিকুল ইসলামের সার্টিফিকেট যে জাল, তা নির্ণয় করা আমার পক্ষে অতটা সহজ নয়।
তিনি সার্টিফিকেট নিয়ে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন বলে আমার কাছে মৌখিক অভিযোগ এসেছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই সভাপতি পদ থেকে তাকে বরখাস্ত করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সুপারিশ করা হবে। বিষয়টি আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়কেও জানিয়েছি।
রফিকুল ইসলামের ডিগ্রি সার্টিফিকেট সত্যায়নকারী চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মোঃ সাঈদ আল মনসুর (ইনাম) বলেন, অরিজিনাল সার্টিফিকেট কিংবা অন্য কাগজপত্র নিয়ে কেউ সত্যায়ন করতে আসলে তাতে আমরা সত্যায়ন করে দেই।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে সার্টিফিকেট আসল নাকি নকল তা যাচাই করার কোন টুলস্ বা পদ্ধতি আমার কাছে নেই।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জামাল হোসেন জানান, বাতিসা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি মোঃ রফিকুল ইসলামের ডিগ্রী সার্টিফিকেট জাল বলে আমি শুনেছি। তদন্ত করে সেটি প্রমাণিত হলে বিধিমোতাবেক সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।