সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মরহুম মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস সহ একাধীক ব্যক্তির স্বাক্ষর জাল করে বদরিজ্জামান সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের ঘটনার চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। অবশ্য, ইতি মধ্যে নিয়োগপ্রাপ্ত সেই শিক্ষককের এমপিও স্থগিত করা হয়েছে।
জালিয়াতির নেপথ্যে থাকা বিজয়রামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার পাইনের বিরুদ্ধে বিধি সম্মতভাবে ব্যবস্থা নিতে সচ্চোর হয়েছে ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী।
সোমবার (২৩জুন) সকালে জালিয়াতির বিষয়ে কৈফিয়ত নিতে বিজয়রামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আসেন ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী।
যদিও প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার পাইন সভাপতির অনুমতি ছুটি ছাড়াই অনুপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ে। যে কারণে ক্ষুদ্ধ জনতার রোশানলে পড়েন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির বর্তমান সভাপতি জাহিদুল ইসলাম।
সরেজমিনে জানা যায়, বিজয়রামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার পাইন। তিনি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে মো: বদরুজ্জামানকে সহকারি শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান) পদে নিয়োগের যাবতীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করেন বলে অভিযোগ। একই সাথে বদরুজ্জামানকে এমপিওভূক্ত করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠান। যার সবই ছিল জাল জালিয়াতির। বিষয়টি ফাঁস হবার পর সংবাদ মাধ্যমে শিরোনাম হয়।
এক পর্যায় সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষগণ তাৎক্ষনিক আমলে নিয়ে নোটিশ জারি করেন। তবে, এরই মধ্যে প্রধান শিক্ষকসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে ফুসে উঠেন ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী। তারই জের হিসেবে সোমবার বিদ্যালয় খোলা মাত্রই ক্ষুদ্ধ জনতা জবাব নিতে বিদ্যালয়ে আসেন। এ সময় বদরুজ্জামানের নিয়োগ জাল জালিয়াতির বিষয়টি জনতার সামনে তুলে ধরেন বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। তিনি জালিয়াতির বিষয়টি সম্পূর্ণ প্রধান শিক্ষক তাপস পাইনের উপর দায় চাপিয়ে বলেন, আমিও এর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্নার দারস্থ হয়। কিন্তু তিনি জানান এ বিষয়টি নিয়ে আমার কোন কতৃত্ব নেই।
এডহক কমিটির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম এলাকাবাসীর উদ্দ্যেশে বলেন, সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর বিষয়টি জানতে পেরে প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার পাইনকে বারংবার বলেছি। কিন্তু প্রধান শিক্ষক তা আমলে না নিয়ে তিনি অতি গোপনীয়তার সাথে বদরুজ্জামানের বেতন-ভাতা করাতে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দুটি প্রত্যায়নপত্র দাখিল করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে।
সংবাদ মাধ্যমে শিরোনাম হওয়ার পর চলতি বছরের ৩ জুন ৪৩৮৯ নং স্মারক পত্রে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খুলনা অঞ্চল কার্য্যালয় থেকে এমপিও স্থগিত করতে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে পত্র দেয়া হয়। একই সাথে ১০ কর্ম দিবসের তদন্ত পূর্বক সুস্পষ্ট প্রতিবেদন দাখিল করতে চিঠি দেন জেলা শিক্ষা অফিসার যশোরকে।
এদিকে, সোমবার ক্ষুদ্ধ জনতা যখন বিদ্যালয় হাজির হন, তখন মরহুম মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস এর ছেলে মুফতি রশিদ-বিন ওয়াক্কাস, সাবেক প্রধান শিক্ষক ইনছার আলীসহ তৎকালীন কমিটির অন্যান্য সদস্যরা বিদ্যালয়ে আসেন। জালিয়াতির জন্য বর্তমান প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার পাইনের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে বিদ্যালয়ের সভাপতি জাহিদুলকে প্রধান করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়। এই কমিটিতে সাবেক প্রধান শিক্ষক ইনছার আলী, সহকারী শিক্ষক আব্দুল মান্নান'সহ এলাকার বিশিষ্টজনদের রাখা হয়েছে।
বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার পাইন মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, বিদ্যালয়ে কি হয়েছে তা আমার জানা নেই। এদিন আমি বিদ্যালয়ে ছিলাম না।
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এ এস এম আব্দুর রশিদ বলেন, তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের প্রক্রিয়া চলছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না বলেন, ঘটনা শুনেছি। জালিয়াতির অভিযোগ যাচাই বাছাই করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মরহুম মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস ও তৎকালীন প্রধান শিক্ষক ইনছার আলীর স্বাক্ষর জাল জালিয়াতি করে ব্যাকডেটে বদরুজ্জামানকে সহকারী শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান) হিসেবে যোগদান দেখানো হয়। শুধু তাই নয় ! ২০২৪ সালে সভাপতি ঝন্টু পাটোয়ারীর স্বাক্ষরিত যে রেজুলেশনে বদরুজ্জামানকে মূল প্যাটার্নে পদায়ন দেখানো হয়েছে সেই রেজুলেশনের সব স্বাক্ষরই জাল।