বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২

কর্তৃপক্ষের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ

শ্রীপুর(গাজীপুর)প্রতিনিধি
  ২৪ জুন ২০২৫, ২১:০০
কর্তৃপক্ষের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ
ছবি: যায়যায়দিন

গাজীপুরের শ্রীপুরে নার্স ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় জায়েদা মাল্টিকেয়ার হাসপাতালে নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর মঙ্গলবার বিকেলের দিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে উপজেলা প্রশাসন।

এসময় হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে কর্তৃপক্ষকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আতাহার শাকিল। সঙ্গে ছিলেন শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম।

ভুক্তভোগী পরিবারের লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত ২২ জুন সকাল ১১ টার দিকে মিথিলা আক্তার (২৪) নামে এক অন্তঃসত্তা নারীকে শ্রীপুর পৌর শহরের জায়েদা মাল্টি কেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজনেরা । মিথিলা আক্তার শ্রীপুর সদর এলাকার শহিদুল ইসলামের স্ত্রী। শারীরিক পরীক্ষার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেদিনই মিথিলার সিজারিয়ান অপারেশন করতে পরামর্শ দেয়। স্বজনেরা সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য রোগীকে অন্য হাসপাতালে নিতে চাইলে জায়েদা মাল্টি কেয়ার হাসপাতালের ব্যবস্থাপক মো. নাজমুল ও মো. মেহেদী তাদের ওই হাসপাতালেই রাখার জন্য অনুরোধ করেন। পরে সেখানেই সিজারিয়ান অপারেশন হয়। দুপুর ২টায় টায় মিথিলা আক্তার ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় রাতে নবজাতক কান্না শুরু করে।

বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানায় নবজাতকের কোনো সমস্যা নেই। এর কিছুক্ষণ পর নবজাতকের কান্না থামানোর জন্য একজন নার্স এসে শিশুকে গ্যাস ( নেবুলাইজেশন) দেয়। তখন শিশুর কান্না থেমে যায়। এই অবস্থায় একজন নার্স নবজাতকের পেটে চাপ দেন। এরপর থেকে নবজাতকের গায়ের রং নীল হতে থাকে। পরবর্তীতে ২৩ জুন রাত সাড়ে ১১ টায় নবজাতকের মৃত্যু হয়।

এই ঘটনায় বাদি হয়ে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন মিথিলা আক্তারের দেবর মেহেদী হাসান আশিক।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ওই হাসপাতালের নার্স ও কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে তার ভাতিজার মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি তিনি শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন।

এ সম্পর্কে বক্তব্য জানতে জায়েদা মাল্টি কেয়ার হাসপাতালের প্রতিনিধি (একাউন্ট এসিস্টেন্ট) নাজমুল হুদা বলেন,' আমাদের কাগজপত্র আছে। আমরা আবেদন করেছি। আমরা অবৈধ হলে সিভিল সার্জন অবশ্যই আমাদেরটা আগেই বন্ধ করে দিতো। আমরা প্রতি মাসেই আমরা একটা নির্দিষ্ট টাকা দেই।' শুধু আবেদন করেই কার্যক্রম চালানো যায় কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি চলবে বলে জানান।

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: শফিকুল ইসলাম বলেন, ওই হাসপতালে অপারেশনের দিন কোনো চিকিৎসক ছিল না। তা ছাড়া নার্সরা নিজেদের সনদ দেখাতে পারেননি। ভ্রাম্যামাণ আদালত তাদের ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। এ ছাড়াও হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আতাহার শাকিল বলেন, 'নিবন্ধন ছাড়া পরিচালিত সকল হাসপাতাল ও ক্লিনিকে অভিযান পরিচালনা করা হবে। স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে এমন অভিযান নিয়মিত চলবে।'

গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা: মামুনুর রহমান বলেন,' নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনা অবগত হয়ে সঙ্গে সঙ্গেই শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাকে সেখানে পরিদর্শনের নির্দেশনা দিয়েছি। ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও তাদের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। একই সাথে এ ঘটনা তদন্তে ৩সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে