খুলনার পাইকগাছা সীমান্তবর্তী সাতক্ষীরার-তালা উপজেলার সাথে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণের কাজ ফেলে পালিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার।
গত পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি সাতক্ষীরার তালা উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগের এই গুরুত্বপূর্ণ সেতুটি। দীর্ঘদিন অর্ধঅবস্থায় পড়ে থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যেনো কোন মাথাব্যথা নেই।
স্থানীয়রা জানান,পাইকগাছা ও তালা উপজেলার সীমান্তবর্তী রাড়ুলী ইউনিয়নের কাটিপাড়া-খেশরা গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কপোতাক্ষ নদ নব্বয়ের দশকে ভরাট হয়ে সরু খালে পরিণত হয়। ১৯৯৮ সালে খেশরা ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান এমএম ফজলুল হক ও রাড়ুলী ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের উদ্যোগে একটি বাসের সাঁকো নির্মাণ করা হয়। এ সময় জনসাধারণের চলাচলের সুবিধার জন্য ওই স্থানটিতে পাকা রাস্তা নির্মাণ করা হয়।
২০১৩ সালে পাখিমারা টিআরএম ও কপোতাক্ষ পুনঃখনন প্রকল্পের আওতায় নদীটি খনন করার সময় রাস্তাটি ভেঙে ফেলা হয়। তখন থেকে জনগণের দুর্ভোগ শুরু হয়। জনসাধারণের সাময়িক চলাচলের জন্য স্থানীয় জনগণ খেশরা ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান এসএম লিয়াকত হোসেন ও খেশরা পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জের সমন্বয়ে একটি ঘাট কমিটি তৈরি করে নিজেদের অর্থায়নে সেখানে একটি সাঁকো তৈরি করেন।
স্থানীয় সরকার পাইকগাছা প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) থেকে সর্বশেষ ২০২৫ সালে এস এ-জেডটি(জেভি), দক্ষিণ টুটপাড়া ক্রস রোড-২ খুলনা কে বারংবার তাগিদ প্রদান করার পরেও কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ফলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কোন ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায়, গত ২০২৩ সালের মার্চ মাসের ১০ তারিখে নির্বাহী প্রকৌশলী খুলনা বরাবর ব্রীজ নির্মাণ কাজে ২৮ দিনের চুড়ান্ত নোটিশ প্রদান এবং কাজ বাতিলের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করে স্থানীয় প্রকৌশলী অধিদপ্তর পাইকগাছা।
কাটিপাড়া বাজারে বস্ত্র ব্যাবসায়ী গোবিন্দ বলেন, আমাদের তালা উপজেলার হরিহর নগর বাজারে বস্ত্র ব্যাবসা রয়েছে। সেখানে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করতে হয়। যখন বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হতে হয় তখন ভয় হয় না জানি ভেঙে নদীতে পড়তে হয়। তিনি আরো বলেন ব্যবসায়ী কাজ শেষ করে যেতে অনেক রাত হয়।এই বৃষ্টি কাঁদার সময় মটরসাইকেল পার হতে গেলে চাকা পিছলে যায়।
কাঁচা মাল ব্যবসায়ী, তারক চন্দ্র বলেন, আমি সকালে কাটিপাড়া বাজারে কাঁচা মাল বিক্রয় করে দুপুরে পর ওই পারে হরিহর নগর বাজারে মাল বিক্রয় করতে যায়। ভ্যান করে মাল নিয়ে বাসের সাঁকো পার উঠলে শরীরটা কেপে উঠে। নড়বড়ে সাঁকো দোল খায়, মনে হয় ভ্যান সহ নদীতে ভেঙে পড়বে।
তালা উপজেলার শালিখা গ্রামের শিক্ষার্থী রাসেল সরদার, হরিহর নগরের মাছুম বিল্লাহ, মুড়াগাছা গ্রামের শাকিবুর রহমান, আফসানা মিমি ও বালিয়া গ্রামের সুমন দাশ জানান, কাটিপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও রাড়ুলী কলেজে পড়েন এই শিক্ষার্থীরা, প্রতিদিন তাদের স্কুল কলেজে এ বাসের সাঁকো পার হয়ে আশা-যাওয়া করতে হয়।এই নড়বড়ে সাঁকো দিয়ে পার হতে গেলে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বৃষ্টির সময় সাইকেল নিয়ে পার হতে গেলে সাইকেলের চাকা সরে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কমলমতি শিক্ষার্থীদের দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সেতুর কাজ শেষ করার।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এস এ-জেডটি(জেভি)'র স্বত্বাধিকারী জিয়াউল আহসান মুঠোফোনে জানান, আগামী সপ্তাহে কাজ শুরু হবে।
পাইকগাছা উপজেলা প্রকৌশলী মো. শাফিন শোয়েব জানান, শালিখা সেতুর কাজ শেষ করতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে একাধিকবার নোটিশ দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু বারবার তাগাদা দিয়েও তার পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায়। তাই বাধ্য হয়ে, গত ২০২৩ সালের মার্চ মাসের ১০ তারিখে নির্বাহী প্রকৌশলী খুলনা বরাবর ব্রীজ নির্মাণ কাজে ২৮ দিনের চুড়ান্ত নোটিশ প্রদান এবং কাজ বাতিলের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাঠানো হয়েছে।তিনি আরো বলেন, ঠিকাদার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে আবারও কাজ শুরু হবে।
খুলনার পাইকগাছা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহেরা নাজনীন বলেন, সেতুটি দুই জেলার সংযোগ স্থাপনকারী অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো। এলজিইডির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।