মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

৪০ বছর ধরে পথে পথে বাঁশি বিক্রি করে সংসার চালান পোড়াদহ বাবলু

দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) প্রতিনিধি
  ০১ জুলাই ২০২৫, ১৩:০৩
৪০ বছর ধরে পথে পথে বাঁশি বিক্রি করে সংসার চালান পোড়াদহ বাবলু
বাঁশি বিক্রি করে সংসার চালান পোড়াদহ বাবলু -যাযাদি

জীবনের বাঁশির সুর মানব জীবনের দুঃখ -আনন্দ,প্রেম-বিরহ এবং প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্কের গভীরতা প্রকাশ করে।

তাই বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর কবিতার সাথে পোড়াদহের বংশীবাদক বাবলুর জীবন যেন এক সুত্রে গাঁথা।

প্রায় মাঝে মাঝে বংশীবাদক বাবলুকে দেখা যায় চুয়াডাঙ্গা, দামুড়হুদা, দর্শনাসহ বিভিন্ন শহরে ও গ্রামগন্জে। ঠিক তেমনি গতকাল মঙ্গলবার দেখা মেলে চুয়াডাঙ্গার সরকারী কলেজ রোডে।

বাবলু জীবনের ৪৫ বছর বাশি বাজিয়ে পার করছেন পোড়াদহের ইয়াকুব আলীর ছেলে বাবলু।

বয়স ৬০ ছুঁই ছুঁই। এই বয়সে শহর,গ্রাম, রেলস্টেশন আর পথে পথে ঘুরে সুর তুলে বিক্রি করছেন বাঁশের বাঁশি।

প্রকার ভেদে প্রতিটি বাঁশি বিক্রি করেন ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। কিভাবে বাঁশি বাজাতে হয় তা আবার ক্রেতাকে সুন্দর ভাবে শিখিয়ে দেন।

সেই ১৫ বছর বয়সে গ্রামের ওস্তাদ ইস্রাফিলের কাছে বাবলুর বাঁশি বাজানো শেখা। সেই থেকে সুরও আয়ত্ত করেছেন কয়েক শত গানের। পল্লিগীতি, ভাওয়াইয়া, লালনগীতি, বিচ্ছেদ ও পুরোনো বাংলা সিনেমার গানের সুরও তুলতে পারেন বাবলু।

দীর্ঘদিন পথে পথে, বাজারে, রেলস্টেশনে, পার্কে, বাঁশি বিক্রি করেন । অনেক সময় বাঁশি বাজিয়েও অনেকে টাকা দেন। কীভাবে বাঁশি বাজাতে হয়, তা আবার ক্রেতাকে শিখিয়ে দেন।

এদিয়ে যা আয় হয়। তাই দিয়ে সংসার চালান বাবলু। দুই মেয়ে ছেলে আর স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। লেখাপড়া তেমন কিছু জানলেও প্রাথমিক গন্ডি পার করতে পারিনি।

জন্মর পর থেকেই দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত বাবলু। যার কারণে পড়ালেখা হয়নি। অল্প বয়স থেকেই আয় রোজগারের দিকে ঝুঁকতে হয়েছে তাকে।

এখনো তাই বেশি আয়ের আশায় এক শহর থেকে আরেক শহর ও এক গ্রাম হতে অন্য গ্রামের পথে পথে সংসারের ব্যয় মিটানোর জন্য বাঁশি বিক্রি করে থাকেন বাবলু।

বাঁশি বিক্রি করে যা আয় হয় তাদিয়ে ছেলেমেয়েদের লেখা পড়া ও সংসার চালান বাবলু।

বাবলু বলেন, প্রতিদিন সকালে পোড়াদহ হতে ট্রেন যোগ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শহরে ও গ্রামে বাশি বাজিয়ে, বাঁশি বিক্রি করে থাকি।

প্রতিদিন গড়ে খরচ খরচা বাদে ৮০০ থেকে ১১০০ টাকা থাকে। তা দিয়ে কোনমতে সাংসার চলে যায়।পথে পথে ঘুরে বাঁশির সুর তোলা আর মানুষকে আকৃষ্ট করাই আমার ব্যবসা । কেউ বাঁশি শুনে খুশি হয়ে এক কাপ চা খেতে বলে। আবার কেহ বক্সশিস দেয়। কেউবা বাঁশি কিনে নেয়।

এসময় বাবলু আক্ষেপ করে বলেন, অনিশ্চিত জীবন নিয়েই দেশের দরিদ্র মানুষেরা বেঁচে আছেন। জন্মই যেন আজন্ম পাপ।

তাই অনেক সময় নীরবে বসে বসে কাদে আর বেদনার সুর তোলেন এই বংশীবাদক।

কথা শেষ হতেই বাশিতে সুর তোলেন, পুরাতন সিসেমার গান "ওরে ও বাশি আওয়লা আমারি মনে জালা, সইতে যে আর পারি না, পিরিত মানেই যন্ত্রণা"।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে