শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

স্বপ্ন

শশধর চন্দ্র রায়
  ৩০ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

ভোর পঁাচটায় ঘুম থেকে উঠে বিছানা ছাড়ে অরিন্দম। একাকী ঘর হতে বেরিয়ে পড়ে প্রাতঃভ্রমণের জন্য। বাসার পাশেই স্টেডিয়াম। স্টেডিয়াম মাঠে কিছুক্ষণ হঁাটাহঁাটির পর গ্যালারিতে বসে আনমনে ভাবতে থাকে সে। আজ মনটা তার বেশি ভালো নেই। সে মধ্যরাতে ঘুমের মাঝে একটি স্বপ্ন দেখেছে। সেই স্বপ্নের রাজ্যে তার মন এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। স্বপ্নে দেখা ঘটনা তার মনে গভীরভাবে দানা ব^াধতে শুরু করেছে। যদি স্বপ্নে দেখা সবকিছুই সত্য হয়ে যায়।

স্বপ্ন সবসময় সত্য হয় না। আবার স্বপ্ন একেবারেই যে মিথ্যা দিয়ে ভরা হয় তা-ও নয়। মনের ভাবনা-কল্পনা হতেই স্বপ্নের সৃষ্টি। ভাবনা যেরূপ, স্বপ্নও সেরূপ। ঘুমের মাঝে সে স্বপ্নে দেখেছে প্রেমিকা সুনন্দিতা অন্যকে বিয়ে করে তারই সামনে দিয়ে স্বামীর হাত ধরে চলে যাচ্ছে। এটা সে মেনে নিতে পারে না।

আর কিছুই ভাবতে পারছে না অরিন্দম। বাসায় এসে সকালের নাস্তা সেরে গালে হাত দিয়ে বিছানায় আধশোয়া ভঙ্গিতে বালিশে হেলান দিয়ে চুপচাপ আছে। ঘরে ঢুকে মা ছেলের এমনভাব দেখে অবাক হন।

Ñ অরিন্দম, তোমার কি শরীর খারাপ করেছে?

Ñ না, মা। সুনন্দিতা আমাকে বিয়ে করার জন্য খুব চাপ দিচ্ছে।

সুনন্দিতাকে অরিন্দম খুব ভালোবাসে। তাদের গভীর ভালোবাসার কথা মা বাসন্তীবালার অজানা নয়। চিঠি চালাচালি আর মোবাইল ফোনে কথোপকথনের মাধ্যমে প্রেম এগিয়ে চলছে।

ছোটবেলা হতেই কবিতা লেখার ঝেঁাক ছিল অরিন্দমের। ছাত্রাবস্থায় বিদ্যালয়ের দেয়ালপত্রিকায় তার লেখা ছাপা হতো। এখন সে পত্রিকায় লেখে। গতবছর হতে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় সাহিত্য পাতায় তার লেখা প্রকাশিত হচ্ছে। লেখার মানও ভালো। তার কবিতায় শব্দ-ছন্দ যেন চমৎকার সূত্রে গঁাথা। কিছুদিন আগে সাহিত্য পাতায় তার একটি কবিতা ছাপা হয়। ওই পাতায় সুনন্দিতা নামের এক মেয়ের লেখা কবিতা তার চোখে পড়ে। কবিতাটি খুব ভালো লাগে অরিন্দমের। কবিতার নিচে ছোট একটি ঠিকানা ছিল। সেই সূত্রে সিলেটের মেয়ে সুনন্দিতার সাক্ষাৎ করার জন্য সে ব্যাকুল হয়ে ওঠে। এক সময় ঠিকানা খুঁজে পেলে অরিন্দম চলে যায় সিলেট।

সুবিশাল সুসজ্জিত চোখধঁাধানো প্রাসাদপম দালান। পঁাচ তলার এই বাড়িটিতেই বাস করে সুনন্দিতা। তার বাবা বিরাট ব্যবসায়ী। সুন্দর ছিমছাম গড়নের আকষর্ণীয় চোখের অধিকারিণী সুনন্দিতা। তার সাথে পরিচয় ও কথাবাতার্ হয় অরিন্দমের। দুজনের মন ভালোবাসার ভাগ্যাকাশে উড়তে থাকে। উভয়কেই উভয়ের পছন্দ হয়। উভয়ের ভালোবাসা নিজস্ব গতিতে গভীর হতে গভীরতর হতে থাকে।

অসুস্থ বাবার কথা মনে পড়ে যায় অরিন্দমের। বাবার আদরের একমাত্র ছেলে সে। তাই সে পরদিনেই চলে আসে লালমনিরহাটের নিজ বাড়িতে। সদর হাসপাতালে অসুস্থ বাবাকে ভতির্ করায় সে। ভালো চিকিৎসকের তত্ত¡াবধানে সুচিকিৎসা চলে। সপ্তাহখানেক চিকিৎসা শেষে বাবা মারা গেলে অরিন্দম নিবার্ক হয়ে যায়। এ পৃথিবীতে বাবাই ছিল তার অতি আপন। কিন্তু কার সাধ্য আছে মৃত্যুকে রুখবার?

তাদের ভালোবাসার বয়স তিন বছর পার হতে চলছে। এর মধ্যে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি জোটে অরিন্দমের। অরিন্দম দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তাই সে সুনন্দিতার মতো ধনাঢ্য ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করতে দ্বিধাগ্রস্ত হয় বারবার। সে ভাবে সুনন্দিতাকে বিয়ে করে তাকে সুখে রাখার কোনোকিছুই তো তার টিনের চালাঘরে নেই। শুধু হৃদয়ের ভালোবাসা ছাড়া দেবার মতো অন্যকিছু নেই। সুনন্দিতা তাকে অনেক ভালোবাসে। কিন্তু সেই ভালোবাসা যদি কোনো কারণে তার দারিদ্র্যপীড়িত পরিবারে এসে বিলীন হয়ে যায় এমন ভাবনায় উদ্বিগ্ন হয় অরিন্দম। অরিন্দম সুনন্দিতাকেও অন্তরের অন্তঃস্থল হতে ভালোবাসে বলেই তাকে ঠকাতে চায় না। সুনন্দিতার সুখের জন্য সে ভালোবাসাকে ত্যাগ করতে সদাই প্রস্তুত। তাই তো সে মোবাইল ফোনে ইনিয়েবিনিয়ে নানা কথা বলে। সুনন্দিতা সব কথা বিশ্বাস করে না। কিন্তু একসময় সে অরিন্দমের এ ধরনের আচরণের কারণ বুঝতে পারে।

মা বাসন্তিবালা অরিন্দমের বিয়ে দেন মুন্সিগঞ্জের পূণির্মা নামের এক সুন্দরী মেয়ের সাথে। শান্ত স্বভাবের পূণির্মা সংসার গোছাতে শুরু করে। নতুন সংসারে নতুন বউ। পূণির্মাকে সবসময় খুশি রাখার চেষ্টা করে অরিন্দম।

ইতোমধ্যে একটি গল্প লিখে ফেলেছে অরিন্দম। গল্পের নাম ‘হারানোর ব্যথা’। গল্পটি সুনন্দিতাকে নিয়ে লেখা। গল্পটি একটি পত্রিকার সাহিত্য পাতায় গল্পটি প্রকাশ পায়। সুনন্দিতা জানতে পারে যে, অরিন্দম বিয়ে করে ফেলেছে। সেও একটি গল্প লিখেছে। গল্পের নাম ‘ব্যথার দহন’। তার লেখা গল্পটিও সাহিত্য পাতায় প্রকাশিত হয়। পত্রিকায় গল্পটি পড়ে অরিন্দমের ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার দৃশ্য স্ত্রী পূণির্মা গোপনে অবলোকন করেছে।

এদিকে খ্যাতনামা এক চিকিৎসকের সাথে বিয়ে হয় সুনন্দিতার। সে স্বামীর সাথে কানাডায় থাকে। দূরে থাকলেও সুনন্দিতাকে ভুলতে পারে না অরিন্দম। রাতে ঘুমের মাঝে সে প্রায়ই স্বপ্ন দেখে। গত সপ্তাহে বিকালবেলায় অফিসের কাজ শেষে বাড়ি ফিরে এলে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। ঘুমের মাঝে তিনি স্বপ্ন দেখেন, সুনন্দিতা তার স্বামীর সাথে ঢাকার এক বিলাসবহুল বিপণিতে খরচ করতে এসেছে। শাড়ি কিনছে সুনন্দিতা। অরিন্দম দূর থেকে দঁাড়িয়ে দেখছে সুনন্দিতাকে। সুনন্দিতার চোখ হঠাৎ তার উপর পড়ে। চোখের আড়াল হতে চেষ্টা করে অরিন্দম।

Ñ এই অরিন্দম, কোথায় যাও?

সুনন্দিতা তার দিকে ছুটে যায়।

Ñ কেমন আছ, অরিন্দম?

Ñ ভালো।

হঠাৎ ঘুম ভাঙে অরিন্দমের। পরদিন সকালের নাস্তা খাওয়ার সময় সে একটি কবিতা লিখে। কবিতার শিরোনাম ‘সুনন্দিতা, আজো তোমায় ভালোবাসি ’। হঠাৎ মোবাইল ফোনে রিং আসে। সুনন্দিতার ফোন। অরিন্দম অবাক হয়। ভাবে, এটা স্বপ্ন না বাস্তব। ফোন ধরতেই অপর প্রান্ত হতে সুনন্দিতার কান্নাবিজড়িত কণ্ঠ

Ñ অরিন্দম, আমার সবর্নাশ হয়েছে। আমি বঁাচতে চাই। আমি তোমার কাছে যাব।

Ñ কী হয়েছে, সুনন্দিতা?

Ñ আমার স্বামী গতকাল দুঘর্টনায় মারা গেছে।

ফোন রেখে দেয় অরিন্দম। নতুন স্বপ্নের দোলাচলে ভাসতে থাকে তার ক্ষত মনটা। সুনন্দিতাকে কাছে পেতে ইচ্ছা হয় তার। একসময় নিজেই তাকে দূরে ঠেলে দিয়েছে, এখন তাকে কাছে পেয়ে ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে চায়।

তাহলে পূণির্মার কী হবে? পূণির্মার কিছু হবে না। পূণির্মার কোলজুড়ে এখনো কোনো সন্তানের আগমন ঘটেনি। চিকিৎসকের পরীক্ষামতে পূণির্মার সন্তান ধারণে সমস্যা রয়েছে। তাই অরিন্দম ভাবে যে, পূণির্মাকে বিষয়টি বুঝিয়ে বললে অমত করবে না।

অরিন্দম পূণির্মাকে সুনন্দিতার বিষয়টি খুলে বলে। পূণির্মা রাজি হয়। সামাজিক বিধান মেনে আত্মীয়-স্বজনকে সাক্ষী রেখে অরিন্দম দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে মযার্দা দেয় সুনন্দিতাকে। এক বছরের মাথায় সুনন্দিতার কোলজুড়ে আসে পুত্রসন্তান। অরিন্দম অনেক ভেবেচিন্তে পুত্রের নাম রাখে ‘স্বপ্ন’।

সদস্য

জেজেডি ফ্রেন্ডস ফোরাম

লালমনিরহাট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<19996 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1