শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর

বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তারে চীন-ভারতের লড়াই

বাংলাদেশে এ বছরে নিবার্চন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। দৃশ্যপটের অন্তরালে অনেক কিছুই ঘটতে পারে। নিশ্চিতভাবেই দিল্লি ও বেইজিংয়ের লড়াই নিবার্চনে প্রভাব ফেলবে
যাযাদি ডেস্ক
  ০২ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তার নিয়ে চীন ও ভারতের মধ্যে লড়াই শুরু হয় ১৯৭৫ সালের ৩১ আগস্ট। যখন চীন বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। আর বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে নিজেদের সেনা মোতায়েন করে ভারত পরিষ্কারভাবে বাংলাদেশের অংশীদারে পরিণত হয়। সম্প্রতি ভারতের নৌবাহিনীপ্রধান বাংলাদেশের বন্দরনগরী চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো সমন্বিত টহল কাযর্ক্রম উদ্বোধন করেন। এতে বাংলাদেশ নিয়ে চীন ও ভারতের লড়াই আবারও খবরের শিরোনাম হয়েছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, নৌবাহিনীপ্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সফর করেন ভারতের নৌপ্রধান অ্যাডমিরাল সুনিল লানবা।

এ সময় দুই দেশের নৌপ্রধান ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ টহল কাযর্ক্রম ‘করপ্যাট’ উদ্বোধন করেন।

গত বছর চট্টগ্রাম বন্দরে চীনের তৈরি দুইটি সাবমেরিন মোতায়েন করে বাংলাদেশ। বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয়নি ভারত। চীনের কাছ থেকে সাবমেরিন কেনা ও বাংলাদেশ-চীনের সম্পকোর্ন্নয়নের বিষয়টিকে নেতিবাচকভাবে গ্রহণ করে ভারতীয়রা। এর পর পরই

গত বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশ সফরে আসেন লানবা। নৌপ্রধানের সফরের কয়েকদিনের মধ্যে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পরিকরও বাংলাদেশ সফর করেন। এ সময় লানবা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

এ সফর বাংলাদেশে ভারত ও চীনের প্রভাব সম্পকের্ কি বাতার্ দেয়? ইতিহাসে ফিরে তাকালে এর কিছুটা উত্তর পাওয়া যায়। ভারতের সরাসরি সামরিক সহায়তায় বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম নিয়েছে। আর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ দিল্লির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পকর্ রক্ষা করে চলে। ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান একদল সেনা কমর্কতার্র হাতে নিহত হওয়ার পর তারা ক্ষমতা হারায়। ওই বছরের আগস্টের পর নতুন সরকার বাংলাদেশের ক্ষমতায় বসে। তারা ভারতের একচেটিয়া প্রভাব দূর করতে চীনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। ১৯৭৫ সালের সেনাপ্রধান ও পরবতীর্ সময়ে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণকারী জিয়াউর রহমান এই কাযর্ক্রম শুরু করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। বতর্মানে বিএনপি ক্ষমতার লড়াইয়ে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ।

’৭৫-পরবতীর্ সময় ছিল চীন-বাংলাদেশের সামরিক ও বেসামরিক সহযোগিতার স্বণর্যুগ। বৈদেশিক নীতিতেও তা বজায় ছিল। তখন উত্তর-পূবর্ ভারতের বিদ্রোহীরা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। আর এতে সমথর্ন দিয়েছিল চীন। চীন ও ভারত নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে মেরুকরণ ঘটায়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসা পযর্ন্ত এই পরিস্থিতি বিরাজমান ছিল। এরপর আবারও ভারতের প্রভাব বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। তবে বাংলাদেশে দীঘির্দনব্যাপী চীনের সামরিক সহায়তা ও প্রশিক্ষণ ভারতের জন্য একটি প্রতিবন্ধকতা হয়ে দঁাড়ায়।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন আবারও ক্ষমতায় ফিরে আসে, ভারতের সঙ্গে গভীর সম্পকর্ রক্ষার ক্ষেত্রে দলটি আরও উদারতা দেখায়। ২০১০ সালে ভারত থেকে সহজ শতের্ এক বিলিয়ন ডলার ঋণ গ্রহণ করে বাংলাদেশ। এটি ছিল কোনো দেশকে দেয়া ভারতের সবচেয়ে বড় অংকের ঋণ। ২০১৭ সালে ভারত আরও পঁাচ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়ার ঘোষণা দেয়। এর মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ভারত থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার জন্য রাখা হয়।

এরপরও চীন বাংলাদেশের সোনাদিয়া দ্বীপে একটি গভীর সমুদ্র বন্দর নিমাের্ণ আগ্রহ প্রকাশ করে। ধারণা করা হচ্ছিল, ২০১৪ সালের চীন সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ-সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করবেন। কিন্তু তা কখনোই ঘটেনি। ওই প্রকল্প নিয়ে এখনো ধেঁায়াশা রয়েছে। বলা হচ্ছে, ওই প্রকল্পে বাধা দিয়েছে ভারত।

পরে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে দুইটি সাবমেরিন গ্রহণ করে। খুবই সস্তা দামে এগুলো কিনেছে বাংলাদেশ। তারপরও এতে খুশি হতে পারেনি ভারত। পরে বাংলাদেশের নৌবাহিনীকে সাবমেরিন প্রশিক্ষণ প্রদানের প্রস্তাব দেয় ভারত। ওই প্রস্তাবের প্রক্রিয়া কতদূর এগিয়েছে তা প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু লানবার সফর ও করপ্যাট নিয়ে ঘোষণা বাংলাদেশ ও এর নৌ-সীমানায় সরাসরি উপস্থিতির বিষয়ে ভারতের আগ্রহ প্রকাশ পায়।

বাংলাদেশে এ বছরে নিবার্চন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। দৃশ্যপটের অন্তরালে অনেক কিছুই ঘটতে পারে। নিশ্চিতভাবেই ঢাকার ওপর প্রভাব বিস্তার নিয়ে দিল্লি ও বেইজিংয়ের লড়াই নিবার্চনে প্রভাব ফেলবে। যদিও বাহ্যিকভাবে মনে হচ্ছে ভারত এগিয়ে রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে