ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে সহ-সভাপতি পদে প্রার্থী হিসেবে থাকছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন।
আর সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী রাখা হয়েছে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে।
রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে এক সংবাদ সম্মেলনে ডাকসু নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করেন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস।
সনজিতকে ছাত্রলীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে দেয়া হয়েছে।
ছাত্রলীগের প্যানেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদের প্রার্থী হিসেবে।
ডাকসু নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ছাড়াও হল সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে ছাত্রলীগ।
দীর্ঘ ২৮ বছর পর আগামী ১১ মার্চ ডাকসুর পাশাপাশি হল ছাত্র সংসদের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
গত বছরের আগস্টে শোভনকে সভাপতি ও রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি গঠিত হয়। তখনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি গঠিত হয়, যাতে পদ পান সাদ্দাম। তারা তিনজনই আইনের শিক্ষার্থী ছিলেন।
শোভনের বাড়ি কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে, তার দাদা ও বাবা দুজনই আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন। রাব্বানীর বাড়ি মাদারীপুরে, সাদ্দামের বাড়ি পঞ্চগড় জেলায়।
এই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের শেষ সময় ২৫ ফেব্রম্নয়ারি। প্রার্থী হওয়ার শেষ সময় ২ মার্চ, পরদিন বাছাই শেষে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
১১ মার্চ সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হলগুলোতে স্থাপিত ভোটকেন্দ্রে শিক্ষার্থীরা পরিচয়পত্র দেখিয়ে ভোট দেবেন।
ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল
সহ-সভাপতি (ভিপি) রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানী, সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) সাদ্দাম হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক সাদ বিন কাদের, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আরিফ ইবনে আলী, কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক বিএম লিপি আক্তার, আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাহরিমা তানজিনা অর্নি, সাহিত্য সম্পাদক মাজহারুল কবির শয়ন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক শামস ই নোমান, ক্রীড়া সম্পাদক শাকিল আহমেদ তানভীর, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক রাকিব হাওলাদার, সমাজসেবা সম্পাদক আজিজুল হক সরকার।
সদস্য: চিবল সাংমা, নজরুল ইসলাম, রাকিবুল হাসান, রাকিবুল ইসলাম ঐতিহ্য, তানভীর হাসান সৈকত, রাইসা নাসের, সাবরিনা ইতি, ইশাত কাশফিয়া ইরা, নিপু ইসলাম তন্বী, হাইদার মোহাম্মদ জিতু, তিলোত্তমা শিকদার, জুলফিকার আলম রাসেল ও মাহমুদুল হাসান।
ছাত্র মৈত্রীর প্যানেল
এদিকে ছাত্রলীগ নেতৃত্বাধীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ একসঙ্গে প্যানেল দেয়ার কথা থাকলেও রোববার আলাদা প্যানেল ঘোষণা করেছে এ জোটের শরিক সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী।
দুপুরে মধুর ক্যানটিনে আলাদা প্যানেল ঘোষণা করেন ওয়ার্কার্স পার্টি সমর্থক এই বাম সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী আবদুল মোতালেব জুয়েল।
২৫ সদস্যের প্যানেলে ছাত্রমৈত্রীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রাসেল শেখকে ডাকসুর সহ-সভাপতি প্রার্থী করা হয়েছে।
অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি সনম সিদ্দিকী শিতিকে ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক এবং আরেক সহ-সভাপতি সানজীদা বারীকে সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী করা হচ্ছে।
ছাত্রদলের অবস্থান কর্মসূচি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন তিন মাস পেছানোসহ সাত দফা দাবিতে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি সমর্থক ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী রোববার বেলা ১২টার দিকে ছাত্রদলের দেড় শতাধিক নেতাকর্মী মধুর ক্যানটিন থেকে মিছিল করে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে যান।
এরপর সেখানে অবস্থান নিয়ে তারা 'খালেদা জিয়া, জিয়া খালেদা', 'হলে ভোটকেন্দ্র, মানি না মানব না'- ইত্যাদি স্স্নোগান দিতে থাকেন। দেড় ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালনের পর সেখান থেকে সরে যান তারা।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান অবস্থান কর্মসূচিতে বলেন, ডাকসু নির্বাচনের ব্যাপারে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কতটা আন্তরিক তা আপনারা দেখেছেন। আমরা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এমন একটি সময়ে ডাকসু নির্বাচনকে স্বাগত জানিয়েছে যখন ঢাকাসহ বাংলাদেশের প্রতিটি জনপদে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা গুম, ক্রসফায়ার, হামলা মামলায় জর্জরিত হয়ে নিজের এলাকায়, নিজের বাড়িতে পর্যন্ত যেতে পারছেন না।
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে
ছাত্রদল নেত্রীর রিট
ভোটার তালিকায় নাম না থাকায় ডাকসু (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ) নির্বাচন নিয়ে হাইকোর্টে রিট করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এক ছাত্রী।
রোববার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করা হয়। রিটকারী ফাহমিদা মজিদ উষা একই সঙ্গে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক।
তার আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল সাংবাদিকদের বলেন, ভোটার তালিকায় রিটকারীর নাম না থাকায় হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। রিটে নির্বাচনের তফসিল স্থগিত চাওয়া হয়েছে। বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ রিটের ওপর শুনানি হতে পারে।
রিট আবেদনে প্রকাশিত ভোটার তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত না করা এবং ভোট করতে না দেয়া কেন অবৈধ হবে না, এই মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে।
এ রুল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় নির্বাচনের তফসিল স্থগিত রাখতে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
রিটের বিবাদীরা হচ্ছেন, শিক্ষা সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে উপাচার্য, ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. এস এম মাহফুজুর রহমান ও রোকেয়া হলের প্রভোস্টকে।