মদ বা নেশাজাতীয় বস্তু গ্রহণ করা যেমন হারাম, ঠিক তেমনি এর ব্যবসা করা, এ কাজে সাহায্য করা এবং এ কাজের জন্য বাড়িঘর ও দোকান ভাড়া দেয়া সম্পূর্ণ হারাম। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনুল করিমে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, 'মদ পান করা, তা বিক্রি এবং এর থেকে উপহার লাভ করা হারাম।' (বোখারি : ২২২৩)।
পবিত্র কুরআনে আলস্নাহ তায়ালা বলেন, '(হে নবী) লোকেরা আপনাকে মদ এবং জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে, আপনি বলে দিন, এ দুইটির মধ্যে রয়েছে মহাপাপ ও মানুষের জন্য (দুনিয়াবি সামান্য) উপকার, আর তার পাপ তার উপকারিতার চেয়ে অধিক বড়।' (সূরা বাকারা: ২১৯)।
মাদকদ্রব্য ও এ জাতীয় হারাম কোনো বস্তুর ব্যবসার হুকুম কী? যদি তা শুধু কাফেরদের সঙ্গে করা হয় এবং তার লভ্যাংশ জিহাদের কাজে ব্যয় করা হয়- এমন প্রশ্নের জবাবে ইসলামী চিন্তাবিদরা জানান, মাদকদ্রব্য ও এ জাতীয় হারাম কোনো বস্তুর ব্যবসা কোনো অবস্থাতেই বৈধ নয়। যদিও তা কেবল কাফেরদের সঙ্গে করা হয় এবং ভালো নিয়তে করা হয়।
এটি বরং অন্যায় ও নাফরমানির কাজে সহায়তা করারই নামান্তর, যা ইসলামে নিষিদ্ধ।
আলস্নাহ তাআলা এরশাদ করেন, 'তোমরা পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহযোগিতা করো না। আর আলস্নাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আলস্নাহ কঠোর শাস্তি দাতা। (সূরা মায়েদা : ২)
তিনি অন্যত্র এরশাদ করেন, হে ঈমানদারগণ! স্বীয় উপার্জন থেকে এবং যা আমি তোমাদের জন্যে ভূমি থেকে উৎপন্ন করেছি, তা থেকে উৎকৃষ্ট বস্তু ব্যয় কর। তার এমন নিকৃষ্ট অংশটি ব্যয় করতে মনস্থ করো না, যা তোমরা নিজেরা গ্রহণ করতে রাজি হবে না, তবে যদি চোখ বন্ধ করে নাও। জেনে রেখ, অমুখাপেক্ষী ও প্রশংসিত। প্রূরা বাকারাঃ ২৬৭)
হযরত আবু হুরায়রা রাযিঃ থেকে বর্ণিত, রাসুলুলস্নাহ সা: বলেছেন, নিশ্চয়ই আলস্নাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র জিনিসই কবুল করেন। তিনি মুমিনদেরকে তাই নির্দেশ দিয়েছেন যা রসুলদের দিয়েছেন। আলস্নাহ তায়ালা এরশাদ করেন, হে রাসুলগণ! আপনারা পবিত্র বস্তু আহার করুন এবং সৎকর্ম করুন। নিশ্চয়ই আপনারা যা কিছু করেন সে বিষয়ে আমি পরিজ্ঞাত। (সূরা মুমিনূনঃ ৫১) তিনি আরও এরশাদ করেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমার দেয়া পবিত্র বস্তুসমূহ থেকে খাও। (সূরা তহাঃ ৮১)
মাদক ব্যবসায় লিপ্ত ব্যক্তির কর্তব্য হলো, প্রথমে তাওবা করা, অতঃপর ব্যবসায় থেকে অর্জিত লভ্যাংশ জিহাদের ফান্ডে দান করা কিংবা গরিব-মিসকিনদের মাঝে ব্যয় করা। যদিও এটি সদকা হিসেবে গণ্য হবে না, তবে এটাই এজাতীয় সম্পদের সর্বোত্তম খাত।
এদিকে মাদক গ্রহণ সম্পর্কে আলস্নাহ তায়ালা বলেন, 'হে মোমিনরা! তোমরা (মদ পান করে) নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামাজের নিকটবর্তী হয়ো না।' (সূরা নিসা : ৪৩)। অপর আয়াতে এরশাদ করেন, 'হে মোমিনরা, নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা-দেবী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরগুলো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।' (সূরা মায়েদা : ৯০)।
ইসলামি শরিয়তে মদ পান সম্পূর্ণ হারাম; কিন্তু আলস্নাহ তায়ালা মদ পানকে ধীরে ধীরে কিংবা পর্যায়ক্রমে নিষিদ্ধ করেছেন। কেননা জাহেলি যুগে মদ পান ছিল একেবারে স্বাভাবিক ব্যাপার, দৈনন্দিন জীবনে মদ পানই ছিল তাদের কাছে সবচেয়ে প্রিয়। এতে তাদের মাঝে ঝগড়া-বিবাদ ও যুদ্ধ লেগেই থাকত। এ জন্য ইসলামি শরিয়ত মদ পানকে একসঙ্গে নিষিদ্ধ না করে তিনটি ধাপে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।
মদ ও নেশাজাতীয় দ্রব্যের হারাম হওয়ার ব্যাপারে রাসুল (সা.) থেকে অসংখ্য হাদিস বর্ণিত রয়েছে। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, 'প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী পানীয় হারাম।' বোখারি : ৫১৮৬)। এ ছাড়াও হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) কে 'বিত' (এক প্রকার নেশা সৃষ্টিকারী পানীয়) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বলেন, 'নেশা সৃষ্টি করে এমন যে কোনো পানীয় হারাম।' (মুসলিম : ৫০৪১)। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, 'নিশ্চয়ই আলস্নাহ তায়ালা মদ পান করা, জুয়া খেলা এবং ঢোল-তবলা বাজানো হারাম করে দিয়েছেন।' আবদুলস্নাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) এরশাদ করেন মা-বাবার সঙ্গে দুর্ব্যবহারকারী, জুয়াড়ি, উপকার করে খোটা দানকারী ও মাদক সেবনকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।' (মেশকাত : ৩১৮)।
রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, 'আমার রব তার মহাক্ষমতার কসম করে বলেছেন, আমার বান্দাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সামান্য এক ঢোক মদ পান করল, আমি নিশ্চয়ই তাকে অনুরূপ দোজখিদের পচা পুঁজ পান করাব।' (মেশকাত : ৩১৮)। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সূরা বাকারার সুদ-সম্পর্কিত আয়াত অবতীর্ণ হলে রাসুল (সা.) মসজিদে গিয়ে তা পড়ে শুনালেন। তারপর তিনি মদের ব্যবসা হারাম ঘোষণা করে দিলেন। (বোখারি : ৪৪৫)। বোখারি থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, 'যে ব্যক্তি দুনিয়ায় মদ পান করবে, আলস্নাহ তায়ালা পরকালে তাকে এমন মারাত্মক বিষ পান করাবেন, যা তার সম্মুখে আনার সঙ্গে তার চেহারার মাংস ও চামড়া বিষপাত্রে খসে পড়বে। আর যখন তা তাকে পান করানো হবে, তখন তার শরীরের সব মাংস ও চামড়া খসে পড়বে। তখন অন্যান্য দোজখিরও (জাহান্নামিরও) এ বিষক্রিয়ায় কষ্টবোধ করবে।'