টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার আটিয়া ইউনিয়নের গোমজানি গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা কৃষিবিদ শাকিল আহমেদ শুভ আধুনিক পদ্ধতিতে বেশ কয়েকটি উচ্চ মূল্যের সবজি চাষে স্বাবলম্বী হয়েছেন । শিক্ষিত হলেই শুধু চাকুরির পেছনে ছুটতে হয় এমন ধারনা বদলে দিয়েছেন তরুণ উদ্যোক্তা শাকিল আহমেদ । এলাকায় আধুনিক পদ্ধতিতে উচ্চমূল্যের বিদেশী জাতসহ প্রায় ১০ রকম সবজি চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন । শাকিলের সবজি চাষ দেখে স্থানীয় অনেক কৃষকই অনুপ্রাণিত হচ্ছে। গোমজানি সহ আশপাশের গ্রামের অনেক কৃষক ও বেকার যুবকরা শাকিলের পরামর্শ নিয়ে আধুনিক পদ্ধতি সবজি ও ফলমূল চাষে ঝুঁকছে ।
জানা গেছে, ২০২০ সালে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি বিজ্ঞান বিষয়ে বিএসসি পরীক্ষা শেষ করে শাকিল আহামেদ বেশ কয়েকটি দপ্তরে চাকুরি পরীক্ষা দেন। এতে ১০/১২ হাজার টাকা বেতনে মার্কেটিং চাকুরির জন্য তাকে ডাকা হয় । অথচ মাত্র ১০/১২ হাজার টাকা দিয়ে শহরে থাকাটাই কষ্টকর ব্যাপার মনে করেন সে। ্জীবিকার ব্যয়বারের কথা চিন্তা করে গ্রামে ছুটে আসে শাকিল । গ্রামে ফিরে বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি অনুসরণ করে বিদেশী জাতের এক প্রকার সবজি স্কোয়াশ চাষ করেন । প্রথম বছর স্কোয়াশ বিক্রি করে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি লাভ করেন তিনি । ফলে কৃষি চাষাাবাদে উৎসাহিত হয়ে এবছর প্রায় ১০ রকম সবজি ও ফল চাষ করেছেন । সেখান থেকে ১০ লাখ টাকা বিক্রি করে ৬ লাখ টাকা লাভ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তার চাষকৃত উল্লেখযোগ্য সবজি ও ফল হলো রেড ক্যাবেজ, ব্রোকলি,রক মেলন, তরমুজ, পাতাকপি, লাউ ও লাল শাক ইত্যাদি ।
উপজেলা কৃষিবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গোমজানি গ্রামের তরুণ উদ্যাক্তা শাকিল আহমেদ শুভ উচ্চমূল্যের প্রায় ১০ প্রকার সবজি ও ফল চাষ করেছে । এতে ওই এলাকা সহ আশপাশের গ্রামের কৃষকরাও অনুপ্রাণিত হচ্ছে । চলতি মৌসুমে শাকিল আহমেদ ৪২ শতাংশ জমিতে স্কোয়াশ, ৪০ শতাংশ জমিতে ক্যাপসিকাম, ৫০ শতাংশ জমিতে শসা, ১২৫ শতাংশ জমিতে সমন্বিত মিশ্র ফল ও সবজি চাষ চাষ করছেন। সমন্বিত সবজি চাষের একই জমিতে রয়েছে পেঁপে,টমেটো, শসা, রেড ক্যাবেজ, ব্রোকলি,রক মেলন তরমুজ, পাতাকপি, লাউ ও লাল শাক। একটি জমিকে পুরোপুরি ব্যবহার করতে সমন্বিত চাষ শুরু করেন। তিনি মোট ২৫৭ শতাংশ জমিতে বিনিয়োগ করেছেন প্রায় ৬ লাখ টাকা। ১০ লাখ টাকা বিক্রির টার্গেট নিয়ে কাজ করছে । বর্তমানে তার উৎপাদিত সবজি ও ফল স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকা সহ বেশ কয়েকটি জেলায় বিক্রি হচ্ছে ।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কৃষিবিদ ও তরুণ উদ্যোক্তা শাকিল আহমেদ শুভ তার জমিতে প্রায় ১০ প্রকার উচ্চমূল্যের বিদেশী সবজিসহ ফল চাষ করেছেন । এয়াড়া আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করে বিষ প্রয়োগ ব্যতিত পোকা দমন, ক্ষতিকারক সার ব্যবহার না করে কম্পোস্ট সারের ব্যবহার, পোকা পালন করে মুরগি ও মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি, মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদে পানি ও সারের অপব্যবহার রোধ করা, অনলাইনে কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করে পরামর্শের মাধ্যমে আধুনিকরণ করে কৃষিকাজে বিশেষ ভূমিকা রেখে অল্প দিনেই প্রশংসিত হয়েছেন ।
কৃষিবিদ ও তরুণ উদ্যোক্তা শাকিল আহম্মেদ জানান, বিএসসি পরীক্ষা শেষ করে ২০২০ সালে করোনা ভাইরাস (কোভিডে-১৯) এর প্রভাবে আর্থিক সংকটে যখন সময় কাটছিল । ওই সংকট সময়ে মানুষের ধারে ধারে ঘুরে একটি ভাল চাকুরির খুঁজে না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পরেন তিনি । সেই সময়ে মাথায় আসে গ্রামে গিয়ে চাষাবাদ করবে । যেই ভাবনা সেই কাজ গ্রামে ফিরে বাবার কাছ থেকে স্বল্প পরিমানে টাকা নিয়ে ৪০ শতাংশ জমিতে শুরু করেন স্কোয়াশ চাষ । এতে দ্বিগুনেরও বেশি লাভ হয় । প্রথমেই লাভের মুখ দেখে আধুনিক পদ্ধতিতে সবজি চাষে ঝুঁকেন তিনি । এতে দেলদুয়ার উপজেলা কৃষি বিভাগ ও ঔষধ কোম্পানির কর্মীরাও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেন । বর্তমানে শাকিলের কাছ বেশ কিছু কৃষক ও বেকার যুবকরা পরামর্শ নিয়ে সবজি চাষে লাভবান হয়েছে জানান তিনি ।
এছাড়া ফার্মনেট এশিয়া নামের একটি অনলাইন ভিত্তিক কোম্পানী চালু করেন তিনি। যার কাজ কৃষক- ভোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের আধুনিক উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয় । ফলে কৃষক ও ভোক্তা উভয় শ্রেণীর মানুষ উপকৃত হবে
দেলদুয়ার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শোয়েব মাহমুদ বলেন, গোমজানি গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা কৃষিবিদ শাকিল আহমেদ শুভ উচ্চমূল্যের প্রায় ১০ প্রকার সবজি ও ফল চাষ করে সফল হয়েছে । তরুণ উদ্যাক্তা শাকিল আহমেদ শুভকে দেলদুয়ার উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে সব ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে ।
যাযাদি/ এস