ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে টানা ১২ দিনের যুদ্ধের ধাক্কা এখনো না কাটতেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন এক অশনি সঙ্কেত!
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য যুদ্ধ পরিকল্পনায় যুক্ত হতে যাচ্ছে ভারত ও ইসরায়েল—এমন বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষক মহল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ শেষ হলেও আঞ্চলিক উত্তেজনা থেমে নেই। এবার লক্ষ্যবস্তু পাকিস্তান।
অক্টোবরের আগেই ভারত-ইসরায়েল যৌথভাবে পাকিস্তানে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে দাবি উঠেছে একাধিক আন্তর্জাতিক সূত্রে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সম্পর্ক শুধু কৌশলগত নয়, মতাদর্শগতও। একদিকে জায়নবাদ, অন্যদিকে হিন্দুত্ববাদ—এই দুই চরমপন্থী মতবাদের জোট যেন নতুন রণকৌশল গড়ে তুলছে।
সাউথ আফ্রিকার বিশিষ্ট সাংবাদিক আজাদ এসা বলেন, “কাশ্মীর ও ফিলিস্তিন—দুই ভূখণ্ডেই একই ধরনের দমননীতি প্রয়োগ করছে ভারত ও ইসরায়েল।” এসার মতে, এই দুটি রাষ্ট্র এখন ঘনিষ্ঠ সামরিক জোটে পরিণত হয়েছে।
২০১৭ সালে মোদি প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইসরায়েল সফর করেন। সেই সময় থেকেই সামরিক ও গোয়েন্দা সহযোগিতায় অভাবনীয় অগ্রগতি হয়েছে দুই দেশের মধ্যে।
‘মডার্ন ডিপ্লোমেসি’ নামের ইউরোপীয় থিংকট্যাঙ্ক গত ২৪ জুন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে কানাডার কনকর্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক রাজনীতির অধ্যাপক ড. জুলিয়ান স্পেন্সার-চার্চিল মন্তব্য করেন:
“ইরানকে দমন করার পর পাকিস্তান হবে পরবর্তী টার্গেট। ভারতকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে ড্রোন, ক্রুজ মিসাইল ও বিমান হামলার মাধ্যমে পাকিস্তানের পরমাণু স্থাপনাগুলিতে হামলার পরিকল্পনা রয়েছে।”
একই সুরে হিব্রু ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও প্রাক্তন প্রতিরক্ষা উপমন্ত্রী মেইর মাসরি ১৮ জুন এক্স (সাবেক টুইটার)-এ আরবিতে লেখেন:
“ইরান অভিযান শেষে পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংস করা হতে পারে।”
এই মন্তব্যের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বহু ভারতীয় এক্স-ব্যবহারকারী ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর নামে পাকিস্তানকে পরমাণুহীন করার আহ্বান জানান।
পাকিস্তানের সতর্ক বার্তা: "আমরা ইরান বা গাজা নই"
পাকিস্তানের সামরিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তান ইরান বা লেবাননের মতো নয়। এর সামরিক সক্ষমতা আরও উন্নত ও সুসংগঠিত।
২০২৫ সালের মে মাসে পাকিস্তান চারটি রাফায়েলসহ সাতটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে আলোড়ন তোলে। পাকিস্তান বিমান বাহিনীর শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তখনই ইঙ্গিত দেয়, যে কোনো আগ্রাসনের জবাব প্রস্তুত।
সম্প্রতি আদানি গ্রুপ ও ইসরায়েলের এলবিট সিস্টেমের যৌথ উদ্যোগে ভারতে তৈরি হচ্ছে হায়-টেক ড্রোন হার্মিস ৯০০, যা ইতোমধ্যেই গাজা ও ইরানে ব্যবহৃত হয়েছে। পাকিস্তান দাবি করেছে, এই ড্রোন দিয়েও ভারতের হামলা প্রতিহত করা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, আদানির হাইফা বন্দরে বিনিয়োগ এবং ইসরায়েলি অস্ত্র কারখানা ভারতে গড়ে তোলা—সবই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বড় পরিকল্পনার ইঙ্গিত বহন করে।
বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও এই আগ্রাসী পরিকল্পনার পেছনে অন্যতম চালিকাশক্তি। আসন্ন বিহার নির্বাচনকে সামনে রেখে মোদির সরকার হয়তো জাতীয়তাবাদ উস্কে দিতে পাকিস্তানবিরোধী আগ্রাসনের পথ বেছে নিতে পারে।
ফারুক আবদুল্লাহর মতো কাশ্মীরি নেতারাও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “যদি আলোচনার মাধ্যমে কাশ্মীর সংকটের সমাধান না হয়, তবে কাশ্মীরও একদিন গাজায় পরিণত হতে পারে।”
যদিও ভারত-ইসরায়েলের পক্ষ থেকে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণার কোনো বার্তা আসেনি, কিন্তু সামরিক প্রস্তুতি, আন্তর্জাতিক ভাষ্য, সোশ্যাল মিডিয়া বার্তা ও গোয়েন্দা তৎপরতা—সব মিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনার বারুদের গন্ধ স্পষ্ট।
বিশ্বজুড়ে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কোনো উস্কানি বা ভুল বোঝাবুঝি থেকেই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
তবে পাকিস্তানের একটাই বার্তা—"আমরা গাজা নই, ভুল করেও তা ভাববেন না!"
সূত্র: জিও নিউজ, মডার্ন ডিপ্লোমেসি, এক্স, আন্তর্জাতিক বিশ্লেষণ