সূর্য মামা ক্লান্ত হয়ে, গেলেন একা ঘরে,
মেঘের পালক বিছিয়ে এখন আকাশ হাসে তরে।
আকাশজোড়া মেঘের নাচন, সাদা-কালোর খেলা,
মনটা যেন হারিয়ে যেতে চায় সে মেঘের মেলা।সন্ধ্যা নামে ধীরে ধীরে, নিভে যায় সোনার আলো,
সূর্য মামা বিশ্রামে যায়, মেঘে ঢাকে কালো।
বিষণ্ণ মনে আনন্দ নামে, ঢেউ তোলে বুকের ভেতর,
মেঘের সাথে উড়তে চায় প্রাণ, বৃষ্টি দেয় সে ঘোর।স্কুলের মাঠে শিশুরা দৌড়ে, “আয় বর্ষা” গান,
সুভাষ স্যার দাঁড়িয়ে দেখেন, জুড়ে হাসির প্রাণ।
শিক্ষকেরাও মুগ্ধ হয়ে, ভুলে যান ক্লাসের ধারা,
এমন অপার সৌন্দর্যে মুগ্ধ, সবারই মন হারা।নূরী স্যার চেয়ে দেখে, হাসি মুখে মধুর কন্ঠে কয়,
"এই বরিষায় গান উঠে, প্রাণে বাজায় সয়!"
ছাত্র-ছাত্রীরা মাঠে নেমে, ভিজছে সবার মাঝে,
কেউ দিচ্ছে ঝাঁপ জলেতে, কারো হাসি বাজে।শিরিন ম্যাডাম বলে, “ওহে কবি ভাই, কলম ধরো হাতে,
এমন বর্ষা যেন না যায়, শুধু চোখের পাতেই।”
চারিদিকে নিঃসাড় ধ্বনি, গাছের পাতায় কান্না,
প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে সব, কবে আসবে বন্যা?দেখেই বর্ষা দূর আকাশে, মাঠে দৌড়ে যায়,
পাড়ার ছেলে, হাঁসের পালা, হৈ হৈ চিৎকার তায়।
কৃষক ছুটে মাঠের দিকে, লাঙল কাঁধে ধরে,
কেউ বা বলে "চল ভাইরে", কৈ মাছ ধরতে চরে।বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে মাখে, কেউ বা উঠে নাচে,
শিশুরা তখন স্কুল না গিয়ে, খুশিতে হাসে কাঁচে।
কেউবা বাড়ির উঠানভরা, লাঠি দিয়ে মাপে,
পানির উচ্চতা কত হলো — হিসেব করে দেখে।ছোট্ট নালায় কাগজ নৌকা, ছেড়ে দিয়ে যায়,
ভেসে চলে সে ছোট্ট মন, চোখে খুশির ছায়।
আলোর ঝলক থেমে আসে, তর্জন গর্জনে বুকে টান,
কোণে বসে কাঁপে শিশুটি, কবির ছেলে তাজরিয়ান।তাজরিয়ান বলে,"বাবা বৃষ্টির পানি কোথা থেকে আসে?"
কবি তখন মৃদু হাসে, কোলে তুলে তাকে স্বপ্নভাসে।
বাবা ডাকে, “আয় খোকা রে, ঘুমের দেশে চল,”
কোলের মাঝে বৃষ্টি শোনায়, নরম কথার দল।বিদ্যুৎ নাই, ফোনও বন্ধ, চার্জার দেয় না কাজ,
বন্ধু কোথায়, খবর কই পাই — মনটা কাঁদে আজ।
গ্যাস না থাকলে রান্না নয়, সবাই বসে চুপ,
মুড়ি-চানাচুরে চলে দিন, মুখে নেই আর রূপ।দিন মজুরের ঘরে শুধুই হাহাকার আর হায়,
ভাতের বদলে চোখে জলই প্রতিদিনের চায়।
কেউ খোঁজে ভাত, কেউ খায় জল, তবু হাসি রাখে মুখে,
ভাঙা ঘরে বৃষ্টি পড়ে, শিশু কাঁপে দুঃখে।পুকুর, খাল, রাস্তাঘাটে, পানি সব একসাথে,
কোনটা রাস্তায় কোনটা বিল — বুঝা যায় না হাতে।
ঘরবাড়ি ভেসে ধুলো মিশে, দুঃখে অন্ধকার নেমে,
কষ্টের জলে মুছে যায় হাসি, অশ্রু ঝরে পথে পনে।শহরের রাস্তায় পানি ভরে, গাড়ি চলে ডুবে,
নালায় পড়ে কেউবা মরে, খোঁজে সবাই রবে?
ভেজা রাস্তায় কাঁপে পা, পরীক্ষা তার দূরে,
চলে কেউ ধীরে ধীরে, ভেজা নৌকায় চড়ে।গাড়ি পায় না ঠিক সময়ে, পরীক্ষা হয় দেরি,
ভাড়া বাড়ায় চালকরা,আমরা যাত্রী,আমরা কষ্টে মরি।
ব্যবসায়ীও ছাড়ে না ধান্দা, দাম বাড়ায় পালা-পালি,
ভোগে গরিব, ভাঙে চাল, কান্না ঝরে ঝলমলি।গ্রামের ঘরে জল ঢুকে, সবই ডুবে যায়,
নদীর ধারে ঘর ভাসে, কান্না মুখে লয়।
গরু-মহিষ নদী কূল, হাঁস-মুরগি সাঁতার দেয়,
ছাগল কাঁদে কাতর কণ্ঠে, মায়ের কাছে ছুটে যায়।গরু গেলো পুকুর পাড়ে, ভাবলো নেবে ডুব,
সাঁতার জানে না যে মোটেই, হলো জলের ভুব।
মহিষ বোঝে না পানির ধারা, তলিয়ে গেলো চুপ,
ভেসে উঠলো দুইদিন পরে, বাচ্চারা করলো হুপ!ঘরের কোণে হাঁস-মুরগি নেই, গরুও গেল ভেসে,
কৃষকের মুখে বিষন্নতা এখন, কপালে শুধু হেসে।
তবুও গাইছে কৃষাণ কণ্ঠে, হালচাষের গান,
“আবার জমি ফলবে ধান, আবার হবে প্রাণ।”সাপ ঢুকে পড়ে কবির ঘরে, শিশু তাজরিয়ান ভয়ে,
ঘরের কোণে চুপটি শিশু বলে, "বাবা, ঐ সাপ কই রে?”
বাবা তাড়ান সাপটা দূরে, তাজরিয়ান হাসে খিলে,
মা বলেন — “এবার আয় তো, খাতাটা তোর খুলে।”শিক্ষকগণ প্রাইভেট ছাড়ে, কোচিং যায় না হৃদয়,
ছাত্র বলে “বৃষ্টি হোক ভাই, ছুটি পাই প্রতিদিনয়।"
বৃষ্টিতে মাটির গন্ধে মগ্ন থাকে মন চঞ্চল,
ছুটির খুশিতে ভাসে সকলের হাসি আলো জল।স্কুলে যেতে মন তো চায় না, খাতা থাকে ভেজা,
বইয়ের পাতায় কালি মিশে, লেখা পড়ে লেজা।
বাসে উঠি, পানিতে নামি, প্যান্ট হয়ে যায় নোংরা,
স্যার বলে “এই কী হাল!” দেয় না কোনো জবাব ওরা।বন্ধু বলে — “চুপ কর ভাই, রকি স্যারও তো ভিজে,
এই বর্ষায় কে বা বাঁচে, ছাতা উধাও নিজে!”
বৃষ্টি মানেই ছুটি চাই, মন চায় শুধু ঘুম,
মা বলেন “যা, স্কুলে যা”, আমি কাটি ধুম!বৃষ্টির দিনে হাসে সবাই, লেখাপড়ায় নেই ভয়,
ভিজে খাতা, ঠাণ্ডা লাগা — “ফেল কইরো না ভাই!”
রাস্তাঘাটে স্লিপ করে গাড়ি, ঘটে অনেক দুর্ঘটনা,
পরীক্ষার দিনে দুর্ভোগ চরম, করে শুধু আহা-না।নৌকা, সাম্পান ভরসা তখন, ঢেউয়ের মাঝে চলে,
পরীক্ষা দিতে আসে যারা, ভেজা ফাইল নিয়ে দলে।
অনেক শিশু হারায় জীবন, স্রোতে গা ভাসে,
খুঁজে পায় না আপন জন, কাঁদে সবাই বেশে।বন্যার জলে ঘর ভেসে যায়, কান্নায় ভরে মালা,
চোখের জলে দিন গুণে মা, হাতে নেই আর চালা।
ভাঙা তক্তায় ঘুমায় শিশু, স্বপ্নে খেলে বৃষ্টি,
আকাশ জানে বুকে কত — নিরব কান্নার কৃষ্টি।তবুও বর্ষা নিয়ে কবি, কলম হাতে তোলে,
এই জীবনের আনন্দ-বেদনা, কবিতার সুরে বলে।
বৃষ্টি নামলেই মনে হয়, নতুন স্বপ্নের ছবি,
লিখে যায় হৃদয় গভীরে সে — বর্ষার দিনলিপি।রচনাকাল : ০১ জুন ২০২৫ ইং।