শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
চট্টগ্রামের বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণের একবছর

‘বেঁচে আছি সেটার জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া’

নুরউদ্দীন খান সাগর, চট্টগ্রাম
  ০৪ জুন ২০২৩, ২৩:১৪

চট্টগ্রামে জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলায় বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। গেল বছরের ৪জুন এ বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটেছে। বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণে নিহত হন ৫১ জন। আহত হন দুই শতাধিক। তবে এক বছর পরে এসে ডিপোর মালিক পক্ষ বলছে এটি নিছক একটি দুর্ঘটনা মাত্র। শনিবার রাতে বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানিয়েছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে জানান আন্তর্জাতিক ও জাতীয় নীতিমালা অনুযায়ী সব ব্যবস্থা নেওয়ার পরও কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘২০২২ সালের ৪ জুনের আকস্মিক অগ্নিকাণ্ড একটি দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় নীতিমালা অনুযায়ী সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার পরও দুর্ঘটনা ঘটে। আকস্মিক এই দুর্ঘটনায় আমরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত তারপরও দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছি।’

কর্তৃৃপক্ষ জানায়, সব নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা। তাদের পরিবারের সব সদস্যদের জন্য রইল গভীর সমবেদনা। দুর্ঘটনায় যারা আহত হয়েছেন এবং যারা জীবন বাজি রেখে অগ্নিকাণ্ড নির্বাপনে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমরা প্রতিশ্রুতি মোতাবেক নিহতদের পরিবার ও আহতদের চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দিয়েছি। ক্ষতিপূরণ প্রাপ্যদের সর্বশেষ তালিকা যাচাই-বাছাই সম্প্রতি শেষ হয়েছে। অতি শিঘ্রই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মাধ্যমে সার্বিক কার্যক্রমের সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে।’

দূর্ঘটনা পরবর্তী বিএম ডিপোকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অফডক হিসেবে পুনরায় গড়ে তোলার সামগ্রিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলেও জানায় কর্তৃপক্ষ। তারা জানায়, অত্যাধুনিক অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থার নির্মাণকাজ গত ১০ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়েছে। এবং বর্তমানে সমগ্র ডিপো ফায়ার হাইড্রেন্ট সিস্টেম ও ফোম সিস্টেমের আওতাধীন। কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য অফডক নীতিমালার নির্দেশনা মোতাবেক সামগ্রিক অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা, প্রশিক্ষিত জনবল এবং অত্যাধুনিক অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা রয়েছে। গ্রাহকদের দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ সমন্বিত কমপ্লায়েন্স টিমের সন্তুষ্টি প্রকাশের পর পুনরায় আমদানি-রফতানি কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

তবে ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন ভিন্ন কথা।কেউ কেউ দাবী করছেন কোন ধননের সহযোগিতা পাননি তারা এবং মালিক পক্ষ তাদেও খোঁজ খবরও রাখেনি ।

রবিউল ইসলাম (২৭) নামের এক ফায়ার সার্ভিস সদস্য ডিপোতে আগুন নেভাতে গিয়ে নিখোঁজ হন। এখনও তার লাশের হদিস পায়নি স্বজনরা। নওগাঁ জেলার চকপাথুরিয়া মহল্লার পূর্বপাড়ার খাদেমুল ইসলামের ছেলে রবিউল। এক বছর ধরে রবিউলকে হারানোর শূন্যতা বয়ে বেড়াচ্ছেন স্বজনরা।

এখনও ক্ষত শুকায়নি। শরীরের বিভিন্ন স্থানে এখনও যন্ত্রণা হয় বলে জানান কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ। চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ খাচ্ছি। বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হন সুলতান। সাড়ে সাত মাস বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর এখন কিছুটা সুস্থ। সম্প্রতি তিনি আবারও কর্মস্থল সীতাকুণ্ড কুমিরায় যোগ দিয়েছেন।

সুলতান মাহমুদ বলেন, শরীরে বুকে, পায়েসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাত পেয়েছি। এখনও পুরোপুরি সেরে ওঠেনি হাত। চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ সেবন করে যাচ্ছি। এরপরও বেঁচে আছি সেটার জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।’

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে