রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

চিনির বাজারে অস্থিরতা

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:০২
চিনির বাজারে অস্থিরতা

নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে দেশের চিনির বাজারে। শুল্কহ্রাসের পরও বেড়েই চলছে রমজানে অতিপ্রয়োজনীয় এই ভোগ্যপণ্যের দাম। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দাম বৃদ্ধির ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর তা প্রত্যাহার করা হলেও বাজারে তৈরি হয় বিশৃঙ্খলা। এতে রাতারাতি খোলা চিনির দাম দেড়শ’ ছাড়িয়ে যায়।

এদিকে শীতজুড়েই সবজির দাম ছিল সাধারণের নাগালের বাইরে। তবে গত দু-সপ্তাহ ধরে সব ধরনের সবজির দাম কমতির দিকে রয়েছে। অন্যদিকে আমদানির খবরেও অপরিবর্তিত পেঁয়াজ বাজার, রমজান যত ঘনিয়ে আসছে ততই দাম বাড়ছে মাংসসহ সংশ্লিষ্ট খাদ্যপণ্যের। শুক্রবার রাজধানীর বাজারে নিত্যপণ্যের দামে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

রমজানে দাম সহনীয় রাখতে চাল, চিনি, তেল ও খেজুরের শুল্কহ্রাস করা হলেও বাজারে এখন পর্যন্ত এর প্রভাব দেখা যায়নি। যদিও লিটারে ১০ টাকা কমিয়ে ভোজ্যতেলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, তবে তা কার্যকর হবে ১ মার্চ থেকে। অন্যদিকে জটিলতা তৈরি হয়েছে চিনির দাম নিয়ে।

শুল্ক হ্রাসের পরও বৃহস্পতিবার দুপুরে সরকারি মিলে চিনির দাম কেজিতে ২০ টাকা বাড়ানোর ঘোষণায় অস্থিরতা তৈরি হয় চিনির বাজারে। তবে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টার ব্যবধানে চিনির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত করে শিল্প মন্ত্রণালয়।

দুপুরের দাম বাড়ানোর এ ঘোষণায় প্রতি কেজি চিনি সরকারি মিলে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ২০ টাকা বাড়িয়ে ১৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক ও দেশীয় চিনির বাজার মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চিনির বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন থেকে করর্পোরেশনের ৫০ কেজি বস্তা চিনির মিলগেট বিক্রয়মূল্য ১৫০ টাকা (এক কেজি) ও ডিলার পর্যায়ে বিক্রয়মূল্য ১৫৭ টাকা (এক কেজি) নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া করপোরেশনের এক কেজি প্যাকেটজাত চিনির মিলগেট বা করপোরেট সুপারশপ বিক্রয়মূল্য ১৫৫ টাকা; পাশাপাশি, বিভিন্ন সুপারশপ, চিনি শিল্প ভবনের বেজমেন্টে ও বাজারে সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১৬০ টাকা। এর আগে সর্বশেষ প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনির দাম ১৪০ টাকা নির্ধারণ করেছিল বিএসএফআইসি।

তবে এই দাম ঘোষনার পরপরই দেশের বাজারে হঠাৎ চিনির দাম কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়ে যায়। এমনকি সন্ধ্যায় দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হলেও বৃহস্পতিবার রাত জুড়েই বাড়তি দামে চিনি কিনতে হয়েছে ভোক্তাকে। শুক্রবার সকালে বাজার স্বাভাবিক হলেও চিনির কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছেন অনেকেই।

কল্যাণপুর বাজারের ব্যবসায়ী বিশ্বনাথ জানান, বৃহস্পতিবার সকালেও প্রতিকেজি খোলা চিনি ১৪৫ টাকা বিক্রি হলেও বিকালে বিক্রি করেছেন ১৬০ টাকা দরে। তবে

শুক্রবার দাম কিছুটা কমে প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা দরে। সে হিসেবে সপ্তাহ ব্যবধানে প্রতিকেজি চিনির দাম বেড়েছে প্রায় ১০ টাকা।

এদিকে গত ৮ ফেব্রুয়ারি চিনি আমদানিতে প্রতি টনে আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১ হাজার টাকা করা হয়েছে, আগে যা ছিল ১ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু শুল্ক হ্রাসের পরও পাইকারি পর্য়ায়ে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩৮ টাকা দরে, যা এক সপ্তাহ আগে ১৩২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এর আগে গত নভেম্বরে চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে আমদানি শুল্ক ৫০ শতাংশ কমিয়ে ছিল রাজস্ব বিভাগ। এতে প্রতি টন চিনির শুল্কবাবদ ব্যয় ৩ হাজার টাকা থেকে কমে দেড় হাজার টাকা দাঁড়ায়। যা এখন আরও কমিয়ে ১ হাজার টাকা করা হয়েছে। তবুও গত ৪ মাসে চিনির দাম বেড়েছে খুচরা পর্যায়ে প্রায় ২৮ টাকা।

অন্যদিকে শুক্রবারও রাজধানীর বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১১০ থেকে ১২০ টাকার দরে। তবে বাজার নিয়ন্ত্রণে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিকারক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু এর প্রভাব এখনো বাজারে দেখা যায়নি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি পেঁয়াজ বাজারে না আসা পর্যন্ত এর কোনো প্রভাব পড়বে না। এ ছাড়া সীমিত পরিসরে আমদানি করে বাজারে দাম কমার সম্ভাবনা নেই বলেও মনে করছেন বিক্রেতারা। অন্যদিকে ফেব্রæয়ারির শেষদিকে এসে বাজারে কমতে শুরু করেছে সবজির দাম। সপ্তাহ ব্যবধানে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে বিভিন্ন সবজিতে। শীতের শিম, মুলা, ফুলকপির পিস ও শালগমের কেজি বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকার মধ্যে। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকার ওপর। এ ছাড়া বেগুন, টমেটো, শসার কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকার মধ্যে। আলুর কেজিতেও প্রায় ৫ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকার মধ্যে। তবে চিচিঙ্গা, কচুর লতি, বরবটি ও করলা ও লাউয়ের দাম এখনো বাড়তিই রয়েছে।

এদিকে বাজারে বেড়েই চলছে গরুর মাংসের দাম। এদিন যা আরও বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৭৫০ টাকা দরে।

গত সপ্তাহের দামে অপরিবর্তিত রয়েছে মাছের বাজারে। এদিন মাঝারি আকারের রুইয়ের কেজি বিক্রি হয়েছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, বড় কাতল ৪শ’ টাকা, বড় পাঙ্গাশ ২৫০ টাকা, চাষের কই (ছোট) ৩৩০ টাকা, তেলাপিয়া আড়াইশ টাকা ও শিং মাছ ৬শ’ টাকা, শোল মাছ ৮শ’ টাকা, পাবদা ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা, ট্যাংরা মাছের কেজি আকার ভেদে ৬শ’ থেকে ৭ শ’ টাকা, মলা মাছ ৫শ’ টাকা, বাইলা ১ হাজার টাকা, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪শ’ টাকা, মাঝারি আকারে বোয়াল ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা, গুঁড়ামাছ ৩শ’ টাকা, ছোট চিংড়ি ৫শ’ টাকা, গলদা ৭শ’ এবং বাগদা ৮শ’ থেকে ৯শ’ টাকা ও রূপচাঁদা ৯শ’ টাকা দরে।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে