সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

এবার বাড়ল চালের দাম

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৬ মার্চ ২০২৪, ০৯:৪৯

নিত্যপণ্যের বাজারে চলমান অস্থিরতা এ সপ্তাহেও অব্যাহত রয়েছে। যদিও রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে শুল্কছাড়সহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর তৎপরতার কোনো কমতি ছিল না। রমজানের প্রথম শুক্রবারও যথারীতি চড়া বেশিরভাগ পণ্যের দাম। এছাড়া বেঁধে দেওয়া দামেও পণ্য বিক্রি করছেন না বেশিরভাগ ব্যবসায়ী। এমন পরিস্থিতির মধ্যে এবার নতুন করে বেড়েছে চালের দাম।

এদিকে এখনো স্বস্তি ফেরেনি সবজি-পেঁয়াজসহ রমজানে প্রয়োজনীয় বেশিরভাগ পণ্যে।

শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে নিত্যপণ্যের দামে এমন চিত্রই দেখা গেছে। এদিন রাজধানীর বাজারে বিআর-২৮, পাইজাম, গুটি ও মিনিকেট চালের প্রতি কেজিতে প্রায় ২ থেকে ৩ টাকা এবং বস্তায় ১শ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

বিক্রেতারা জানিয়েছেন, জানুয়ারিতে চালের দাম কেজিতে ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছিল। এরপর কিছুটা কমে মাস দেড়েক স্থিতিশীল ছিল। এখন আবার মিল পর্যায়ে প্রতি বস্তা চালের দাম ৫০ থেকে ১শ’ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এদিন বাজারে গুটি স্বর্ণা বস্তা ২৩শ’ টাকা থেকে বেড়ে ২৪শ’ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মিনিকেট চালের দাম। বাজারে ১৫৫০ টাকার বিক্রি হওয়া মিনিকেট ২৫ কেজির বস্তা এদিন বিক্রি হয়েছে ১৭শ’ টাকা দরে। একইভাবে পাইজাম চালের দাম প্রতিকেজিতে প্রায় ৩ টাকা বেড়ে ৫৩-৫৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

এদিকে ভোজ্যতেল থেকে শুরু করে চিনি, খেজুর, পেঁয়াজ ও ছোলাসহ চড়াই রয়েছে মসলা ও মাংসের বাজার। এ ছাড়া সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে খেজুর বিক্রি হতে যায়নি বেশিরভাগ বাজারে। শুক্রবারও সাধারণ মানের খেজুর বিক্রি হয়েছে প্রায় ৪০০ টাকা দরে। যা গত বছর রমজানে বিক্রি হয়েছিল ২শ’ থেকে ২২০ টাকা দরে। এ ছাড়া ভালো মানের প্রিমিয়াম কোয়ালিটির খেজুর ৮শ’ টাকা থেকে শুরু করে বিক্রি হয়েছে ১৬শ’ টাকা দরে। যা গত রমজানে বিক্রি হয়েছে ৫শ’ থেকে ৯শ’ টাকার মধ্যে।

অন্যদিকে গত ৩ সপ্তাহ ধরে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির কথা বলা হলেও তা এখনো বাজারে এসে পৌঁছায়নি। ফলে বাজারে পেঁয়াজের বাড়তি দাম অব্যাহত রয়েছে। এদিনও প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকার ওপর।

তবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে ভারত থেকে পেঁয়াজের প্রথম ট্রাক আসবে। রমজানের আগে এ পেঁয়াজ দেশে আনার চেষ্টা করা হলেও নানা কারণে হয়নি বলেও জানান তিনি। সব মিলিয়ে পর্যায়ক্রমে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ দেশে আসার কথা রয়েছে।

এদিন বাজারে চড়া বিক্রি হয়েছে শসা, লেবু বেগুনসহ চাহিদা সম্পন্ন বেশিরভাগ সবজি। তবে রমজানের প্রথম দিনের তুলনায় দাম কিছুটা কমেছে। এদিনও বাজরে প্রতি কেজি শসা বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ১শ’ টাকার মধ্যে আর দেশি শসা বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়া ২০ টাকা হালির লেবু বিক্রি হয়েছে সর্বনিম্ন ৪০ টাকা দরে। একই অবস্থা বেগুনে। ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া লম্বা বেগুন বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকা দরে। এ ছাড়া বাজারে বেশিরভাগ সবজি বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকার ওপর।

এদিন ছোলা কেজি বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকা থেকে শুরু করে ১৩০ টাকা দরে। খেসারি ডালের কেজি বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা কেজি দরে। অন্য ডালের মধ্যে মাঝারি ও সরু দানার মসুর ডালের কেজি ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মানভেদে প্রতি কেজি অ্যাঙ্কর ডাল বিক্রি হয়েছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। আর মুগ ডালের কেজি বিক্রি হয়েছে ১৩০ থেকে ১৮০ টাকা দরে। অপরিবর্তিত দামে বিক্রি হয়েছে চিনি, প্রতি কেজি ১৪৫ টাকা দরে।

এদিকে শুক্রবারও রাজধানীর অস্থায়ী কেন্দ্রেগুলোয় ক্রেতা ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। গরুর মাংসের পাশাপাশি দুধ ও ডিম কিনেছেন বেশিরভাগ ক্রেতা। সুলভ মূল্যের পণ্য বিক্রির কয়েকটি স্পট ঘুরে দেখা যায়, সুলভ মূল্যে পণ্য কেনাকাটায় মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে এবং একই সঙ্গে খানিকটা স্বস্তি এনে দিয়েছে। কারণ বাজারে যেখানে ৮শ’ টাকায় গরুর মাংস কিনতে হচ্ছে, সেখানে ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে ৬শ’ টাকায় একই মানের গরুর মাংস কিনতে পারছেন। একইভাবে বাজারে যেখানে ২৩০ টাকা কেজি দরে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে, সেখানে ক্রেতারা পুরো ড্রেসিং করা মুরগি কিনেছেন ২৫০ টাকা কেজি দরে। সুলভ মূল্যের ভ্রাম্যমাণ দোকানে ১৩৫ টাকার (এক ডজন) ডিম বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকায়। ৯০০ টাকা মূল্যে খাসির মাংস ও মিল্ক ভিটার দুধ ৯০ টাকা লিটার হিসেবে বিক্রি হয়েছে। ঢাকার এমন ২৫টি স্থানে ও ৫টি স্থায়ী দোকানে এই বিক্রয় কার্যক্রম চলছে। এর বাইরে মৎস্য অধিদপ্তর আলাদা ঢাকার আটটি স্থানে ২৪০ টাকা দরে রুই, ১৩০ টাকা দরে পাঙ্গাশ ও তেলাপিয়া এবং ৩৩০ টাকা দরে পাবদা মাছ বিক্রি করা হয়েছে।

তবে বাজারে বাড়তির দিকেই রয়েছে সব ধরনের মাছ ও মাংসের দাম। এদিন প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৮শ’ টাকায়। এ ছাড়াও অন্যদিকে প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা ও সোনালি মুরগি বিক্রি হয়েছে ৩৩০ টাকা দরে।

তবে প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে সবজি ও মাছের বাজার। এদিন মাঝারি আকারের রুইয়ের কেজি বিক্রি হয়েছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, বড় কাতল ৪শ’ টাকা, বড় পাঙ্গাশ ২৫০ টাকা, চাষের কই (ছোট) ৩৩০ টাকা, তেলাপিয়া আড়াইশ টাকা ও শিং মাছ ৬শ’ টাকা, শোল মাছ ৮শ’ টাকা, পাবদা ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা, ট্যাংরা মাছের কেজি আকার ভেদে ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকা, মলা মাছ ৫শ’ টাকা, বাইলা ১ হাজার টাকা, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪শ’ টাকা, মাঝারি আকারে বোয়াল ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা, গুঁড়ামাছ ৩শ’ টাকা, ছোট চিংড়ি ৫শ’ টাকা, গলদা ৭শ’ এবং বাগদা ৮শ’ থেকে ৯শ’ টাকা ও রূপচাঁদা ৯শ’ টাকা দরে।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে