গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, "বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা নিজেদের মতো করে বিক্ষিপ্তভাবে উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করছে। এইভাবে অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে প্রতি বছর কৃষিজমি নষ্ট হচ্ছে। জাতীয় স্থানিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে কৃষি জমি ও পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। পরিবেশের নিয়ম মেনে চলার মাধ্যমে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করলে, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে জীববৈচিত্র্য বজায় থাকবে। কৃষি জমি সুরক্ষায় আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে"।
আজ (১০ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) এর তিন দিনব্যপী নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনাবিষয়ক ৪র্থ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
“নগর, অঞ্চল এবং গ্রামীণ এলাকার বৈষম্যহীন উন্নয়নে স্থানিক (Spatial) পরিকল্পনা” প্রতিপাদ্য নিয়ে শুরু হওয়া সম্মেলনের উদ্বোধন করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘ মানব বসতি কর্মসূচি (ইউএন-হ্যাবিট্যাট) এর নির্বাহী পরিচালক আনাক্লাউদিয়া রসবাখ (Anacláudia Rossbach), গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম এবং বিআইপির উপদেষ্টা পরিষদের আহবায়ক মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন।
সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তব্যে করেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পরিবেশ রক্ষায় কেবল আইন-নীতিমালা যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধের পরিবর্তন। সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে পরিবেশবান্ধব হতে হবে। হাউজিং প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি নগর পরিকল্পনায় প্রত্যেক খাতের প্রভাব বিবেচনায় নেওয়া জরুরি।
তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট প্রতিটি সংস্থাকে ক্ষমতায়ন করতে হবে এবং সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় পর্যায়ের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার ফলে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। প্রকৃত পাহাড় দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে শুধু শ্রমিকদের দায়ী করা যথাযথ নয়।
বিআইপির সভাপতি ড. আদিল মুহাম্মদ খানের সভাপতিত্বে সম্মেলনের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান, সূচনা বক্তব্য দেন বিআইপির যুগ্ম সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ তামজিদুল ইসলাম।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পূর্ত সচিব নজরুল ইসলাম সারাদেশকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় নগর পরিকল্পনার ওপর গুরুত্ব প্রদান করেন।
বিআইপির এবারের সম্মেলনে সবমিলিয়ে অন্তত ৬০ টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন দেশী-বিদেশী পরিকল্পনাবিদ এবং পেশাজীবীবৃন্দ। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানী, ইরান, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, সুইডেনসহ অন্তত ১৫ টি দেশের ৩৫ জন বিদেশী ডেলিগেট সম্মেলনে অংশগ্রহন করবেন।
এবারের ৪র্থ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, বিশ্বজুড়ে নগর, অঞ্চল এবং গ্রামীণ পরিকল্পনার বিভিন্ন ক্ষেত্রের সাথে সম্পর্কিত পরিকল্পনাবিদ, পেশাজীবী, শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, গবেষক এবং নীতিনির্ধারকদের একত্রিত করা। এর মাধ্যমে পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে গবেষণালব্ধ অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের বিনিময়, সাম্প্রতিক উন্নয়ন সম্পর্কে অবহিত করা এবং পরিবর্তিত বাস্তবতায় আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে একটি সুষম টেকসই দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পরিকল্পনাগত দিক থেকে প্রয়োজনীয় সুপারিশমালা নির্ধারণ।