সোমবার, ০২ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বাজেটে ভর্তুকি কমাতে পারে সরকার

অর্থ-বাণিজ্য রিপোর্ট
  ২৯ মে ২০২৫, ১৭:২১
বাজেটে ভর্তুকি কমাতে পারে সরকার
ছবি: সংগৃহীত

আগামী অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি ও প্রণোদনায় বরাদ্দের পরিমাণ চলতি অর্থবছরের চেয়ে কিছুটা কমতে পারে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। আগামী বাজেটে ভর্তুকি ও প্রণোদনায় প্রায় ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে, যা বর্তমান অর্থবছরের মূল বরাদ্দ ১ লাখ ২০ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকার চেয়ে সামান্য কম। বরাদ্দ কমার মূল কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে সার, জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম কমা এবং চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বকেয়া ভর্তুকির বড় অংশই পরিশোধ করে দেওয়া।

মূলত বন্ড ইস্যু করে এবং সংশোধিত বাজেটে বাড়তি বরাদ্দের মাধ্যমে গ্যাস ও বিদ্যুৎ ভর্তুকির বকেয়ার বড় অংশ পরিশোধ হওয়ার কারণে আগামী অর্থবছরের বাজেটে এই দুই খাতে ভর্তুকির চাপ কমে আসছে। এছাড়া কৃষি খাতে বকেয়া ভর্তুকি পরিশোধেও বন্ড ইস্যু করে সরকার।

1

সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, কৃষিতে ভর্তুকি দিতে কোনো কাপর্ণ্য করবেন না। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সার আমদানির জন্য যত টাকা ভর্তুকি লাগে, তা সরকার দেবে বলে জানান তিনি। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, 'ভর্তুকি কমাতে সম্প্রতি গ্যাসের দাম বাড়ানোর পর আমি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টাকে বলেছি এগুলোর দাম আর না বাড়াতে। গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম নতুন অর্থবছরে বাড়বে না। এই দুই খাতে যে পরিমাণ ভর্তুকির প্রয়োজন হবে, তা বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া হবে।'

কমবে বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকি

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্র তিমাসে বিদ্যুৎ খাতে গড় ভর্তুকির পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। তবে আগের অর্থবছরের বকেয়া ভর্তুকির অর্থ পরিশোধ করতে না পারায় চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এ খাতে ৪০ হাজার কোটি টাকা এবং এলএনজিতে ভর্তুকি বাবদ ৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। বকেয়া ভর্তুকি পরিশোধ করতে সংশোধিত বাজেটে এই দুই খাতে ৬২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম কমছে। 'এ অবস্থায় রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান স্থিতিশীল থাকবে। ফলে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বাবদ প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।'

গুরুত্ব পাবে গ্যাস অনুসন্ধান

ওই কর্মকর্তা বলেন, এলএনজি আমদানির চাহিদা আগামী বছরও বাড়বে। কিন্তু সরকার আমদানি বাড়ানোর পরিবর্তে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে গ্যাস অনুসন্ধ্যান ও উত্তোলন বাড়াতে চায়। 'নতুন অর্থবছরে পাঁচটি নতুন কূপ খননের জন্য প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া, সম্প্রতি নতুন সংযোগ ও বাড়তি লোডের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। ফলে এ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে।'

এলএনজির ভর্তুকি কমতে পারে

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এলএনজি আমদানিতে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ ছিল ৭ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের বাজেটে এটি কমে ৬ হাজার কোটি টাকা হতে পারে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে আগামী অর্থবছরের জন্য ২৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি চাওয়া হয়েছে। এ খাতে ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। কৃষি খাতে বরাদ্দ দেওয়া এই ভর্তুকি মূলত সার আমদানিতে দিয়ে থাকে সরকার। কোনো কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম বেড়ে গেলে বা টাকার অবমূল্যায়ন হলে এ খাতে প্রয়োজন অনুযায়ী ভর্তুকি বাড়াবে অর্থ মন্ত্রণালয়। আগামী অর্থবছরে সারের দাম বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।

খাদ্যে ভর্তুকি বাড়বে

আগামী অর্থবছরের মধ্যে মূল্যস্ফীতির হার বর্তমানের প্রায় ৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬.৫ শতাংশে নামানোর লক্ষমাত্রা অর্জনে খাদ্য সহায়তা ও টিসিবির মাধ্যমে কম মূল্যে খাদ্যপণ্য বিক্রির আওতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। এজন্য খাদ্য সহায়তা খাতে ভর্তুকি বাবদ ১০ হাজার কোটি টাকা এবং টিসিবির ভর্তুকি বাবদ ১৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। চলতি অর্থবছরে খাদ্য ভর্তুকি খাতে ৭ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা ও টিসিবির ভর্তুকি বাবদ ১৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে টিসিবির জন্য একই পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রয়েছে। টিসিবির এক কোটি কার্ডধারীদের সরকার কম মূল্যে খাদ্যপণ্য সরবরাহ করত। সরকার সেখান থেকে ৪৪ লাখ কার্ড বাতিল করেছে এবং আগের মতো খোলাবাজারে ট্রাকে টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করছে।

রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে একই প্রণোদনা থাকছে

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, আগামী বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হলে তখন থেকে রপ্তানিতে আর প্রণোদনা দেওয়া যাবে না। সেজন্য চলতি অর্থবছর থেকেই পর্যায়ক্রমে রপ্তানি প্রণোদনা কমানোর সিদ্ধান্ত ছিল সরকারের।

চলতি অর্থবছরে তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন খাতে রপ্তানি প্রণোদনার হার কমানোও হয়েছে। তবে চলমান বৈশ্বিক বাণিজ্যিক পরিস্থিতিতে রপ্তানি ব্যাহত হতে পারে, এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চায় না বর্তমান সরকার।

এ কারণে আগামী অর্থবছরের বাজেটে রপ্তানি প্রণোদনা বাবদ বরাদ্দ চলতি অর্থবছরের সমানই বরাদ্দ রাখার পরিকল্পনা করছে সরকার। এছাড়া, রেমিট্যান্সে যে ২.৫ শতাংশ প্রণোদনা রয়েছে, সেটিও অপরিবর্তিত রাখা হতে পারে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে রপ্তানি প্রণোদনা ও রেমিট্যান্স প্রণোদনা বাবদ ১৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। তবে রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি বাড়লে এ খাতে বাড়তি ব্যয়ের প্রয়োজন হবে বলে জানান কর্মকর্তারা।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে রপ্তানি প্রণোদনা বাবদ ৭ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা ও রেমিট্যান্স ভর্তুকি বাবদ ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর বাইরে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা প্রণোদনা থাকতে পারে।

এসব ভর্তুকির বাইরেও সরকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে নগদ ঋণ সহায়তা দিয়ে থাকে, যা ভর্তুকি হিসেবে দেখানো হয়। এ খাতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে