ঈদুল আজহার টানা ছুটিতে চট্টগ্রাম বন্দরে আবারও কন্টেইনার জটের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও ছুটিতে সচল ছিল বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম। তবে আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং বেশিরভাগ শিল্প কারখানা বন্ধ থাকায় কন্টেইনার খালাস কম হয়েছে।
স্বাভাবিক সময়ে বন্দর থেকে দিনে গড়ে ৪ হাজারের বেশি কন্টেইনার খালাস হয়। তবে ঈদের ছুটির দিনগুলোতে বন্দর থেকে গড়ে খালাস হয়েছে দিনে প্রায় দেড় হাজার করে। ফলে বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনার জমতে থাকে, যা ছুটির শেষ দিনে এসে ৪২ হাজার টিইইউস (২০ ফুট দৈর্ঘ্যের একক) ছাড়িয়ে যায়।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি ১৯ ডিপো থেকে বেশি কন্টেইনার বন্দরে এলেও সে অনুপাতে কন্টেইনার ডিপোতে না যাওয়াতে বন্দরের অভ্যন্তরে কন্টেইনার জট তৈরি হয়েছে।
বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ঈদ-উল-আজহার ছুটির আগে ৪ জুন চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার ছিল ৩৬,২১৫ টিইইউস। এর মধ্যে ১১ দিনে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি করা কন্টেইনার নেমেছে ৪২,৭৯৫ টিইইউস এবং রপ্তানিপণ্যবাহী কন্টেইনার জাহাজীকরণ হয়েছে ৪২,০৪২ টিইইউস।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বন্দর অভ্যন্তরে ৮,৮৮৮ টিইইউস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি ও বহির্নোঙর মিলে পণ্য ও কন্টেইনারবাহী ৯৮টি জাহাজ বর্তমানে অবস্থান করছে। এর মধ্যে ৫৫টি জাহাজ থেকে কন্টেইনার ও বাল্ক পণ্য খালাস চলছিল। অন্যদিকে গত ৪ জুন চট্টগ্রাম বন্দরে জেটি ও বহির্নোঙরে জাহাজ ছিল ১৪৭টি।
বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় জাহাজ থেকে কন্টেইনার বন্দরে নেমেছে ৫,২০৬ টিইইউস, ঢাকা আইসিডি (ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো) থেকে এসেছে ১৮৬ টিইইউস।
একইভাবে, ৩,৬৮২ টিইইউস কন্টেইনার জাহাজীকরণ হয়েছে। ৮৯ টিইইউস কন্টেইনার ঢাকা আইসিডিতে পাঠানো হয়েছে। অফডকগুলোতে আমদানিপণ্য ভর্তি কন্টেইনার পাঠানো হয়েছে ১,২১১ টিইইউস।
বন্দর থেকে ৯৯২ টিইইউস খালি কন্টেইনার অফডকগুলোতে পাঠানো হয়েছে। ৪৩৭ টিইইউস আমদানিপণ্যবাহী কন্টেইনার অনচেচিজ সরাসরি আমদানিকারকদের ডেলিভারি দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি বন্দর অভ্যন্তর থেকে ৭৮৮ টিইইউস কন্টেইনার পণ্য খালাস দেওয়া হয়েছে।চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘ছুটির কারণে পণ্য ডেলিভারি কমে যাওয়ায় কন্টেইনার জমেছে। আমরা পরিস্থিতি দেখছি এবং আমদানিকারকদেরকে দ্রুত পণ্য খালাস করার জন্য বলছি। আশা করছি, দুয়েকদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ‘ছুটিতে ব্যাংক, কাস্টমস ও পরিবহন বন্ধ থাকায় আমদানিকারকরা চাইলেও পণ্য খালাস করতে পারেননি। এখন সব খুলেছে। তাই আশা করি দ্রুত পণ্য ডেলিভারি বাড়বে এবং জট কমবে।’
জটের প্রভাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কন্টেইনার জট বাড়লে জাহাজের বার্থিংয়ে দেরি হয়। তাই আমদানিকারকদের অতিরিক্ত মাশুল দিতে হয়। যার প্রভাব শেষ পর্যন্ত পণ্যের দামের ওপর পড়ে।’
উল্লেখ্য, গত মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির প্রতিবাদে কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মসূচি পালন করে। এতে বন্ধ হয়ে যায় শুল্কায়নসহ কাস্টমসের অন্যান্য কার্যক্রম। মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে জটের কবলে পড়েছিল চট্টগ্রাম বন্দর। ওইসময় বন্দরে কন্টেইনার সংখ্যা ৪১ হাজার টিইইউস ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কর্তৃপক্ষের নানা চেষ্টায় ধীরে ধীরে জট কেটে যায়। ঈদের ছুটির আগে ৪ জুন বন্দরে আমদানি কন্টেইনার ছিল ২৮ হাজার টিইউস।
এরপর গত ৫ জুন থেকে শুরু হয় কোরবানির ঈদের টানা আট দিনের সরকারি ছুটি; সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি দুদিন। ছুটির সবশেষ দিন গত ১৪ জুন ৪২ হাজার ছাড়িয়ে যায়। রোববার (১৫ জুন) থেকে ঈদের ছুটি শেষে প্রত্যেক সরকারি দপ্তর খুলেছে। কর্মকর্তাদের আশা এখন সচল হবে বন্দর।