শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২

সুইস ব্যাংকে ‘নজিরবিহীন’ আমানত বাড়ছে বাংলাদেশিদের

যাযাদি ডেস্ক
  ১৯ জুন ২০২৫, ২০:২৫
সুইস ব্যাংকে ‘নজিরবিহীন’ আমানত বাড়ছে বাংলাদেশিদের
ফাইল ছবি: সংগৃহীত

সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশি ব্যক্তি ও ব্যাংকের আমানত বাড়ছে। গত এক বছরে ১৮ মিলিয়ন ফ্রাঁ থেকে লাফিয়ে বেড়ে এই আমানতের পরিমাণ দাাঁড়িয়েছে ৫৮৯.৫৪ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁতে (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা) পৌঁছেছে।

সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) প্রকাশিত বার্ষিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে আমানতের এই উল্লম্ফন নজিরবিহীন।

২০২৩ সালে যেখানে বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোর আমানত ছিল মাত্র ৩.৪৮ মিলিয়ন ফ্রাঁ, ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৭৬.৬১ মিলিয়নে। এটি ১৬৫ গুণেরও বেশি বৃদ্ধি। যদিও ব্যক্তি পর্যায়ের আমানত কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ১২.৬২ মিলিয়নে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ কম।

এই অঙ্ক ১৯৯৬ সাল থেকে রেকর্ডকৃত তথ্যের মধ্যে পঞ্চম সর্বোচ্চ এবং গত পাঁচ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সর্বোচ্চ পরিমাণ ছিল ২০২১ সালে—৮৭১.১ মিলিয়ন ফ্রাঁ।

হঠাৎ এই উল্লম্ফনের পেছনে কী?

বিশ্লেষকদের মতে, দেশের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, ডলার সংকট এবং বিদেশে অর্থ স্থানান্তরের সহজলভ্য পথ হিসেবে সুইস ব্যাংকগুলো আবার আলোচনায় এসেছে। বিশেষ করে ব্যাংক পর্যায়ের আমানতের এই বিস্ফোরক বৃদ্ধি অর্থ পাচার বা বৈদেশিক বিনিয়োগের নামে অর্থ স্থানান্তরের ইঙ্গিত দিতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।

তবে এসএনবি-এর পরিসংখ্যান কেবল আমানতের পরিমাণ নির্দেশ করে, কোন অর্থ বৈধ বা অবৈধ—তা আলাদা করে উল্লেখ করে না।

স্বচ্ছতা ও তথ্য বিনিময়ে বাংলাদেশের অনাগ্রহ

২০১৮ সাল থেকে অর্থ পাচার ও কর ফাঁকি রোধে আন্তর্জাতিকভাবে শুরু হয় অটোমেটিক এক্সচেঞ্জ অব ইনফরমেশন (এইওআই)। ২০২৪ সালে সুইস ফেডারেল ট্যাক্স প্রশাসন (ইএসটিভি) বিশ্বের ১০৮টি দেশের সঙ্গে প্রায় ৩.৭ মিলিয়ন হিসাব সংক্রান্ত তথ্য বিনিময় করেছে।

তবে ওইসিডি-র ২০২৫ সালের মার্চের সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশ এখনো এইওআই-তে আনুষ্ঠানিকভাবে অংশগ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেয়নি। অথচ প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান ইতিমধ্যেই এই প্ল্যাটফর্মে সক্রিয়ভাবে যুক্ত।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অর্থনীতিবিদ বলেন, “বাংলাদেশ এই প্ল্যাটফর্মে অংশ না নেওয়ায় দেশটির নাগরিকদের বিদেশে অর্থ লুকিয়ে রাখার ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। তথ্য পেতে হলে বাংলাদেশকে আগে নিজেকে স্বচ্ছতার আওতায় আনতে হবে।”

মাত্র একজনের তথ্য দিয়েছে সুইজারল্যান্ড

২০২২ সালে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএআইএউ) অর্থ পাচারের অভিযোগে সন্দেহভাজন ৬৭ বাংলাদেশির ব্যাংক তথ্য চেয়ে সুইস কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানায়। তবে তথ্য পাওয়া গেছে মাত্র একজনের।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ এখনও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী কার্যকর আইনি কাঠামো তৈরি না করায় সুইস ব্যাংকগুলো বাধ্য নয় তথ্য দিতে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে