দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতে সরকার চারটি অগ্রাধিকারের ওপর জোর দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
রাজধানীর বিনিয়োগ ভবনে বাসসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে আশিক চৌধুরী এসব কথা বলেন।
আশিক চৌধুরী বলেন, এই সরকার একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন হলেও, আমরা বিনিয়োগের গতি ধরে রাখতে চাই। বিনিয়োগকারীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা ও আশ্বাস দেওয়ার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি যেন বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগ নিরাপদ ও লাভজনক হয়।
বিডা প্রধান বলেন, সরকারের লক্ষ্য হলো গতি অব্যাহত রাখা, যদিও এটি একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন। বিনিয়োগকারীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা এবং বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগ সুরক্ষিত ও লাভজনক হয় তা নিশ্চিতের জন্য আমরা উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন- ২০২৫ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে আশিক চৌধুরী উল্লেখ করেন, সরকার পরিকল্পিত লক্ষ্যের চেয়েও বেশি সফল হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বিনিয়োগকারী, উন্নয়ন সহযোগী এবং অংশীজনদের কাছ থেকে অত্যন্ত ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। অনেক বিনিয়োগকারী নবায়নযোগ্য জ্বালানি, তথ্য প্রযুক্তি, উৎপাদন, অবকাঠামো এবং স্বাস্থ্যসেবায় বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, এই শীর্ষ সম্মেলন স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে, বিশ্ব ব্যবসায়ী সম্প্রদায় বাংলাদেশকে একটি প্রতিশ্রুতিশীল এবং নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে দেখে।
তিনি আরো বলেন, এই সামিটের মাধ্যমে আমরা সরকারের বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ ও বিশ্বমানের অবকাঠামো তৈরির প্রচেষ্টা তুলে ধরতে পেরেছি। এর ধারাবাহিকতায়, আমরা সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের একটি শক্তিশালী পাইপলাইন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা এই সাফল্যে অনুপ্রাণিত এবং এই আগ্রহকে বাস্তব বিনিয়োগে রূপান্তর করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বিডা প্রধান বলেন, সামিট-পরবর্তী সময়ে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা।
তিনি বলেন, আমরা অংশগ্রহণকারীদের একটি বিস্তৃত ডেটাবেজ তৈরি করেছি এবং এখন তাদের বিনিয়োগ চক্র অনুযায়ী পার্সোনালাইজড সহায়তা দিচ্ছি। আমরা এই বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে এবং তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রতিটি ধাপে পাশে থাকতে চাই।
সামিটে অংশগ্রহণকারী বিনিয়োগকারী ও বিভিন্ন অংশীজনদের নীতিগত পরামর্শগুলো সরকারের পক্ষ থেকে বিবেচনা করা হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই। আমাদের দৃষ্টিতে বিনিয়োগকারীরা কেবল ব্যবসায়িক অংশীদার নয়, বরং উন্নয়নের অংশীদার। তাদের মতামত অত্যন্ত মূল্যবান।
আশিক মাহমুদ বলেন, সামিটের প্রতিটি সেশনে অংশগ্রহণকারীদের মতামত সতর্কভাবে নথিভুক্ত করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, মূল আলোচ্য বিষয়গুলো আমাদের পূর্বনির্ধারিত অগ্রাধিকার খাতের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল: নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও সবুজ প্রবৃদ্ধি, ডিজিটাল অর্থনীতি ও প্রযুক্তি রূপান্তর, উন্নত ও টেকসই টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক, স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধশিল্প, এবং কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ ও খাদ্য মূল্য শৃঙ্খলা। আমরা এসব ক্ষেত্রে দ্রুত অগ্রগতি নিশ্চিত করতে চাই।
চার দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট- ২০২৫’ ৭ এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে দেশের ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ সম্ভাবনা ও অর্থনৈতিক সংস্কারগুলো তুলে ধরা হয়।
সামিটে ৫০টি দেশের ৪১৫ জন বিদেশি প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। এই সামিট থেকে প্রাথমিকভাবে প্রায় ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা সমমূল্যের বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। এছাড়া আরো বেশ কিছু বিনিয়োগ প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।