সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২

কোরবানির চামড়ার দাম কমেছে ৪৫ শতাংশ: সিপিডি

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৩ জুন ২০২৫, ১৮:১৪
আপডেট  : ২৩ জুন ২০২৫, ১৮:৩৮
কোরবানির চামড়ার দাম কমেছে ৪৫ শতাংশ: সিপিডি
ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছরের কোরবানি ঈদে অন্তত ২১ শতাংশ গরুর চামড়ায় 'ফ্লে কাট' ক্ষত তৈরি হয়েছে, যা চামড়ার মান ও বাজারমূল্য দুটোতেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এতে এসব চামড়া ভালো মানের চামড়ার তুলনায় গড়ে ৪৫ শতাংশ কম দামে বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

সোমবার (২৩ জুন) রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে 'বাংলাদেশের চামড়ার সাপ্লাই চেইন: কাঁচা চামড়ার গুণগত মান ও মূল্য নিশ্চিতকরণ' শীর্ষক গবেষণার মূল্যায়ন কর্মশালায় এ তথ্য তুলে ধরেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী তামিম আহমেদ। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) এবং লেদার সেক্টর বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলের (এলএসবিপিসি) সহায়তায় ও ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত চার মাস ধরে গবেষণাটি চালানো হয়।

'ফ্লে কাট' বলতে বোঝানো হয়, চামড়া ছাড়ানোর সময় অতিরিক্ত চাপ বা ভুলভাবে ধারালো অস্ত্র ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট ক্ষতচিহ্ন। এই দাগ ও ছেঁড়ার কারণে ভালো মানের চামড়াও নিম্নমানের বা অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ছে।

তামিম আহমেদ বলেন, 'অনভিজ্ঞতা ও অদক্ষতার কারণে বিপুল পরিমাণ কাঁচা চামড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের গবেষকরা সরেজমিনে গিয়ে কাটা ও ছেঁড়া চামড়া ফেলে দেওয়া অবস্থায় পেয়েছেন।'

গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরে কোরবানির পশুর সংখ্যা ২০ লাখ ছাড়ালেও পেশাদার কসাই আছেন মাত্র ১১ হাজার ৬০০ জন (বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির হিসাব অনুযায়ী)। সারাদেশের হিসেবে ২০২৫ সালের ঈদে মাত্র ৪.৮ শতাংশ গরু পেশাদার কসাই দিয়ে জবাই হয়েছে। ১৩.৩ শতাংশ ক্ষেত্রে কোরবানিদাতা নিজেই পশু জবাই করেছেন, আর ৮১.৯ শতাংশ কোরবানি হয়েছে মাদ্রাসা বা মসজিদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে; যাদের অধিকাংশই প্রশিক্ষিত কসাই নন।

তামিম আহমেদ বলেন, 'দক্ষ কসাই এবং কার্যকর কসাইখানার অভাবে চামড়া নষ্ট হচ্ছে। সঠিকভাবে চামড়া ছাড়ানো ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় দেশের চামড়াশিল্প ক্ষতির মুখে পড়ছে।'

সরকার নির্ধারিত দামে এবারের ঈদে ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া ৬০–৬৫ টাকা ও ঢাকার বাইরে ৫৫–৬০ টাকা দরে কেনার কথা। কিন্তু বাস্তবে মানের তারতম্যের কারণে ভালো মানের চামড়ার গড় দাম ছিল ৩৯ টাকা, আর কাটা ও দাগযুক্ত খারাপ মানের চামড়ার গড় দাম ২৭ টাকা।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবারের ঈদে দেশে কোরবানি হয়েছে ৯১ লাখ ৩৬ হাজার ৭৩৪টি পশু। এর মধ্যে গরু ও মহিষ ছিল ৪৭ লাখ ৫ হাজার ১০৬টি।

সাভারের হেমায়েতপুরের চামড়াশিল্প নগরে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জমি কেনার অনুমতি না থাকায় বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না বলেও গবেষণায় উঠে এসেছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কোরবানির সময় চামড়া সংরক্ষণের জন্য অনেকেই লবণ ব্যবহার করেননি। কোরবানিদাতাদের কেউই লবণ ব্যবহার করেননি, ৩৭ শতাংশ মাদ্রাসা এবং ৮৩ শতাংশ মৌসুমি ব্যবসায়ী লবণ ছাড়াই চামড়া বিক্রি করেছেন। ফলে চামড়ার গুণগত মান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তামিম আহমেদ বলেন, 'ভালো দাম পেতে হলে চামড়ার মান নিশ্চিত করতে হবে। সঠিকভাবে জবাই ও চামড়া ছাড়ানো এবং যথাযথ সংরক্ষণ জরুরি। আমরা দেখেছি বেঙ্গল মিট প্রতিটি গরু সঠিকভাবে জবাই করে চামড়া ছাড়ানোর ফলে সেটির চামড়া প্রায় ২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।'

গবেষণায় ঢাকাসহ বরিশাল, চট্টগ্রাম, নাটোর ও ময়মনসিংহ জেলার মোট ৭৬৮ জন অংশীজনের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তাদের মধ্যে ছিলেন কোরবানিদাতা, মাদ্রাসা ও এতিমখানার প্রতিনিধি, মৌসুমি ব্যবসায়ী, ব্যাপারী, আড়তদার, ট্যানারি মালিক ও কর্মচারীরা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। সভাপতিত্ব করেন বিটিএ চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ এবং প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে