বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

​​​​​​​উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে কঠোর আন্দোলনে শাবি শিক্ষার্থীরা

শাবি প্রতিনিধি
  ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ১৭:৩৮
আপডেট  : ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ১৭:৫৩

তিনদফা নিয়ে ছাত্রীদের আন্দোলনে পুলিশের হামলার পর কঠোর আন্দোলনে শাহজলাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। এ আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অংশন্রহণ করেন।

সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সকাল ৮ টা থেকে তারা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করে।

এর মধ্যে সোমবার সকাল ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে শিক্ষার্থীরা। এরপর দুপুর ১২টার আগে হল ত্যাগের নির্দেশকে ও ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা । প্রতিটি হলের প্রভোস্টের অফিসের মধ্যে তালা ঝুলিয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা। সেই সাথে রাষ্ট্রপতি বরাবর ভিসিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার একটি স্মারকলিপি দিবেন বলে তারা জানিয়েছেন।

এর আগে সকাল ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল হলের নিয়ন্ত্রণে নেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে সকল প্রশাসনিক ভবন ও ৪টি একাডেমিক ভবনে তালা লাগিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। এসময় ভিসির ভবনের সামনে বেলা আড়াইটা থেকে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করতে দেখা যায়। এরপর বিকেল ৩ টার দিকে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের ব্যাঙ্গচিত্র প্রদর্শন করেন শিক্ষার্থীরা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরের রেলিং এ ঝুলিয়ে রাখেন।

পরে বিকাল ৪টা থেকে উপাচার্য বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এসময় তারা, ভিসি তুই স্বৈরাচার গদি থেকে সরে যা, ক্যাম্পাসে পুলিশ কেনো, প্রশাসন জবাব চাই, স্বৈরাচারী বোমা মারে আমার ভাইয়ের রক্ত ঝড়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা।

এছাড়া তারা হাতের সাথে হাত মেলাও একসাথে ভিসি হটাও, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী সময় থাকতে এক হও নইলে হাতে পড়ো কাচের চুড়ি, অবাঞ্ছিত ভিসি ও তার সিন্ডিকেট এর অবিলম্বে পদত্যাগ চাই'' লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রতিবাদ করে শিক্ষার্থীরা।

এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ( বিকাল সাড়ে ৫টা) শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে আন্দোলন করছেন।

শিক্ষার্থীদের এখন একটাই দাবি, উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে পদত্যাগ করতে হবে।

এ বিষয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদ বলেন, আমাদের দাবি একটাই, উপাচার্যের পদত্যাগ। পদত্যাগের দাবিতে তাদের কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো। সেই সাথে ক্যাম্পাস আমরা ছেড়ে যাবো না। আমাদের ক্যাম্পাস আমরাই থাকবো। "

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবস্থান কি জানতে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সাথে মুঠোফোনে অনেকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

এদিকে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে সোমবার সকালে জানান তিনি।

কোষাধ্যাক্ষ বলেন, গতকাল রোববার রাতে জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এই কমিটি গঠন করা হয়। এতে ফিজিক্যাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো রাশেদ তালুকদারকে সভাপতি ও রেজিস্ট্রার মো. ইশফাকুল হোসেনকে সদস্য সচিব করে এই কমিটি গঠন করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অনুষদের ডিন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতিকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আবেদীন বলেন, :" আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। ভিসির অপসারণের দাবিতে বেলা আড়াইটা থেকে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করছি। এই গণস্বাক্ষরসহ রাষ্ট্রপতি বরাবর ভিসির অপসারণের জন্য স্মারকলিপি প্রদান করবো। "

এর আগে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে উদ্ধার করার জন্য আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উপর লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। এতে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কয়েকজন আহত হন। এছাড়া ছুড়া গুলিতে পুলিশের নিজেদের মধ্যে কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে জানতে প্রশাসনের কয়েকজনকো ফোন দিয়ে তাদের সাড়া মেলেনি।

এর আগে, দুপুর আড়াইটার দিকে একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং শেষে রেজিস্ট্রার ভবন থেকে বের হলে উপাচার্যের পিছু নেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে এম এ ওয়াজেদ মিয়া ভবনে এসে আশ্রয় নেন উপাচার্য।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে