শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অস্ত্র হাতে জাবি ছাত্রলীগের মহড়া, দুই সাংবাদিককে লাঞ্ছনা

জাবি প্রতিনিধি
  ২৩ মার্চ ২০২৩, ১১:৩৭
ছবি-যাযাদি

তুচ্ছ ঘটনায় মারামারিকে কেন্দ্র করে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শাখা ছাত্রলীগের মীর মশাররফ হোসেন হলের নেতাকর্মীরা। এসময় সংবাদ সংগ্রহকালে দায়িত্বরত দুই সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করে তারা।

বুধবার (২২ মার্চ) রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা নামক স্থানে এই ঘটনা ঘটে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পূর্ব শত্রুতার জেরে মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের কিছু শিক্ষার্থী। এই মারধরের প্রতিশোধ নিতে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগ নেতাদের নির্দেশে একদল শিক্ষার্থী রামদা, লোহার পাইপ, কাচের বোতল ও লাঠিসোটাসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হল থেকে মহড়া দিয়ে বটতলার ভাসানী চত্ত্বরে আসে। এসময় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন পদধারী নেতার উপস্থিতিতে সংবাদ সংগ্রহকালে বাংলাদেশ টুডের ক্যাম্পাস প্রতিনিধি জুবায়ের আহমেদ ও ডিবিসি নিউজের ক্যাম্পাস প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মামুনের উপর চড়াও হয়ে মারধরের চেষ্টা করে হল ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী। বিক্ষিপ্তভাবে হামলা করে জুবায়ের আহমেদের গায়ের জামা ছিঁড়ে ফেলা হয়।

শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেলিন মাহবুব (লোক প্রশাসন-৪৪), সহ-সভাপতি হাসান মাহমুদ ফরিদ (পরিবেশ বিজ্ঞান-৪৪), সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ফারুক ইমরান (ইতিহাস-৪৪), সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ (মার্কেটিং-৪৪), সহ-সভাপতি সজীব হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. বিপ্লব হোসেনের নির্দেশে মারধরের প্রতিশোধ নিতে হল থেকে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়ায় বের হয় শিক্ষার্থীরা। এছাড়া তাদের ইন্ধনেই সাংবাদিকদের মারধরের চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদিকে মীর মশাররফ হোসেন হলের শিক্ষার্থীদের অস্ত্রশস্ত্রসহ মহড়ার খবর পেয়ে পূর্ব থেকেই বটতলায় অবস্থান নেয় প্রক্টরিয়াল টিম। উত্তেজিত মীর মশাররফ হোসেন হলের নেতাকর্মীরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল অভিমুখে যাওয়ার চেষ্টা করলে প্রক্টরিয়াল টিম তাদের বাধা প্রদান করে। এতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের মধ্যে ঘণ্টা ব্যাপী বাকবিতণ্ডা হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের শিক্ষার্থী ও প্রক্টরকে উদ্দেশ্য করে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় স্লোগান ও গালাগাল দিতে থাকে।

ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন।

সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, আমি ক্যাম্পাসের বাইরে ছিলাম। তাই ঘটনাস্থলে আসতে দেরি হয়েছে। ছাত্রলীগের কেউ দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দিয়ে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ক্যাম্পাসে দেশীয় অস্ত্র থাকলে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় তো একরকম শঙ্কা তৈরি হয়। আমরা এসবের বিরুদ্ধে রয়েছি। এক্ষেত্রে হল থেকে এসব নির্মূলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমরা সর্বাত্মক সহায়তা করবো।

সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন বলেন, আমরা সাংবাদিককে হামলার ঘটনার সম্পর্কে জানতাম না। জানলে আসতামও না। এই ঘটনার জন্য দু:খ প্রকাশ করছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, আজকের ঘটনাটি অপ্রত্যাশিত। আমরা এই ধরনের ঘটনাগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে রেখে তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নিই। এক্ষেত্রেও সেটিই করা হবে। এর বাইরে কোন ধরনের অভিযোগ পেলে সেগুলোও খতিয়ে দেখা হবে। শিক্ষার্থীরা কি করেছে তোমরাও দেখেছো। তোমরা নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে যাও।

এদিকে সাংবাদিকের উপর হামলার ঘটনায় বিচার চেয়ে ভুক্তভোগী সাংবাদিক জুবায়ের আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগপত্রে তিনি লেলিন মাহবুব, হাসান মাহমুদ ফরিদ, আবুল কালাম আজাদ ও আব্দুল্লাহ আল ফারুক ইমরানকে অভিযুক্ত করেন।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে