বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্য ড. শুচিতা শরমিনের পদত্যাগের একদফা দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতি শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়ে আগামীকাল থেকে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এছাড়া প্রশাসনিক কার্যক্রম পূর্বের মত শাটডাউন থাকবে৷
রবিবার দুপুরে শিক্ষকদের প্রতি এক খোলা চিঠিতে এ বিষয়গুলো জানান আন্দোলনকারীরা।
ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বনির্ধারিত চলমান সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা ব্যতীত সকল একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম শাটডাউন ঘোষনা করা হয়েছে। সরকার আমাদের দাবির প্রতি এখন পর্যন্ত কর্ণপাত করেনি। দীর্ঘদিন আন্দোলনের কারনে আমাদের আর পিছনে ফিরে যাওয়ার নূন্যতম জায়গা নেই। দাবি আদায়ের এই আপোষহীন লড়াইয়ে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনে আমরা ১২ মে, ২০২৫ তারিখ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য একাডেমিক শাটডাউন ঘোষনা করেছি।
চিঠিতে আরও বলা হয়, আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শীঘ্রই এই বাকরুদ্ধ পরিবেশ থেকে মুক্তি পেয়ে সৃজনশীল গতিময় একাডেমিক জীবনে ফেরত যাবো বলে আশাবাদী। ততক্ষণ আমাদের ন্যায্য দাবি আদায়ে ঘোষিত কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানিয়ে আপনাদের পূর্বনির্ধারিত সকল একাডেমিক ক্লাস বন্ধ রাখার সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি।
আমরা আমাদের অধিকার আদায়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। একযুগ ধরে অবকাঠামো উন্নয়নে বঞ্চিত দক্ষিণবঙ্গের এই সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ এবার যেকোন মূল্যে সরকারের অগ্রাধিকার পরিকল্পনায় রাখতে চায়। এজন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্মিলিত আপোষহীন প্রচেষ্টাই পারবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান প্রশাসনিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের স্থবিরতা কাটিয়ে তুলতে। সেজন্য আমাদের রাজপথের অসম লড়াইয়ে আপনাদের (শিক্ষকদের) সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করছি।
আমরা আশা করছি, শিক্ষার্থীদের কল্যাণের কথা চিন্তা করে আপনারা এই দুর্নীতিবাজ উপাচার্যের ফ্যাসিবাদী প্রশাসনের সকল লোভনীয় পদ থেকে অতিশীঘ্র পদত্যাগ করবেন।
আন্দোলনকারী ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মোশারফ হোসেন বলেন, “আমরা যেকোনো উপায়ে ২৫টি বিভাগের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য শিক্ষকদের কাছে আমাদের খোলা চিঠি পৌঁছে দিয়েছি। উপাচার্যের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।”
লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মোকাব্বেল শেখ বলেন, ”চলমান এক দফা দাবিতে আন্দোলনে আমাদের সাথে এখন পর্যন্ত ১৮টি ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীরা বিবৃতির মাধ্যমে সংহতি প্রকাশ করেছে। যেটা জোরালো জনমত হিসেবে কাজ করেছে। সকলের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে শিক্ষকদেরকে বিষয়টি অবহিত করেছি যেন শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে তারাও ক্লাস বর্জন করেন।”
উল্লেখ্য, গত ১৭ এপ্রিল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে স্বৈরাচারের পুর্নবাসন ও জুলাই আন্দোলনের পক্ষে অবস্থানকারীদের হয়রানির অভিযোগ তুলে উপাচার্য বিরোধী আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। গতকাল উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা পোষণ করে বিশ্ববিদ্যালয়টির ৪৬ জন শিক্ষক বিবৃতি দিয়েছে।