শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মেডিকেল ভর্তিতে বিএমডিসির ভ্রান্ত  নীতিতে নাকাল শিক্ষার্থীরা

যাযাদি প্রতিবেদন
  ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:৫৪

গত ২২-২৩ ভর্তি সেশনের ঠিক আগ মুহূর্তে বিএমডিসি অনেকটা হুট করেই ‘অনলাইনে পছন্দের কলেজ নিশ্চয়নের নতুন নিয়ম চাপিয়ে দেয়ার কারণে মেডিকেল ও ডেন্টালের প্রচুর শিক্ষার্থী ভর্তি হতে ব্যর্থ হয়। যা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশসহ বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। মেডিকেল পড়ুয়া ও কলেজ সংশ্লিষ্টদের মতে এই নিয়ম মেডিকেল কলেজ, বিশেষ করে প্রাইভেট মেডিকেলের ক্ষেত্রে অত্যন্ত ভ্রান্ত তথা আত্মঘাতমূলক।

বিএমডিসি প্রণীত একই নীতিসমূহের বেড়াজালে দেশের প্রায় ২০টি ডেন্টাল কলেজে প্রায় ১৬ হাজার ছাত্রছাত্রী ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও ১৫ হাজার ৫শ জনকে ভর্তি হওয়ার জন্য পাওয়া যায়নি। মাত্র ৪৫০ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায় এবং কলেজগুলোর ৭০% সিট খালি পড়ে থাকে। যার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন জরিপে দেখা যায়, প্রায় ৫ হাজারের অধিক ছাত্রছাত্রী দেশের বাইরে পড়ার জন্য পাড়ি জমায়। ফলে দেশ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারায়। মেডিকেলের মতো ডেন্টালেও মেধাবী ও অসচ্ছল কোটায় বিনা বেতনে ভর্তির জন্যও শিক্ষার্থী পাওয়া যায়নি। অভিভাবকরা বলেন, ‘অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, হঠাৎ চাপিয়ে দেওয়া এই নিয়ম-নীতি আমাদের সন্তানদের স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়েছে। তারা অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে ভর্তি পরীক্ষায় পাসের পরও দেশের বেসরকারি ডেন্টাল কলেজসমূহে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে বিভিন্ন জেনারেল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে বাধ্য হয়েছে।’

বিএমডিসি প্রণীত ভ্রান্ত নীতিগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পাসকৃত শিক্ষার্থীদের পছন্দকে প্রাধান্য না দিয়ে বিএমডিসির নিজস্ব ঘোষিত নিয়মকে প্রাধান্য দেয়ার ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন মেধাবী ছাত্রকে তার নিজস্ব এলাকার মেডিকেল বা ডেন্টাল কলেজে ভর্তির সুযোগ না দিয়ে ৩০০-৫০০ কি.মি. দূরের একটি কলেজে ভর্তির জন্য সিলেকশন করে দেওয়া হয়। ফলশ্রুতিতে হোস্টেল ভাড়া, খাবার খরচ থেকে শুরু হয়ে নানাবিধ খরচের সংস্থান করতে না পেরে ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়।

ভর্তি প্রক্রিয়ায় নিশ্চায়ন, অটোমাইগ্রেশন, ঐচ্ছিক মাইগ্রেশনসহ নানাবিধ জটিল সব বিষয়কে ঢুকিয়ে দিয়ে অযথা কালক্ষেপণ এবং এক কলেজে ভর্তি করে আবার অন্য কলেজে পাঠানো। এভাবে দিনের পর দিন ছাত্র এবং অভিভাবকদের পেরেশানি বাড়িয়ে ভর্তিতে তাদের নিরৎসাহিত করা হয়।

অন্যদিকে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রথমে প্রায় এক হাজার টাকার ফরম পূরণ, একশ’ টাকার নিশ্চায়ন, ১ লাখ টাকার প্রাথমিক ভর্তির শর্ত পূরণ, পরবর্তীতে অন্য কলেজে আবার বিশাল অংকের টাকা পরিশোধে বাধ্যকরণ, এভাবে পদে পদে হয়রানিকর নীতিমালা অভিভাবকদের মাঝে হতাশার জন্ম দিয়েছে। ফলে সামর্থ্যবান বাবা মা তাদের সন্তানদের বিদেশে ভর্তি করিয়ে অনিশ্চয়তা থেকে পরিত্রাণ পেয়েছেন। ফলশ্রুতিতে প্রায় ৫ হাজারের এর অধিক ছেলেমেয়ে দেশের বাইরে চলে গেছে। প্রকট ডলার সংকটের মাঝেও দেশ থেকে চলে যাচ্ছে লাখো কোটি ডলার, যার জন্য দায়ী বিএমডিসির এসব ভুল তথা আত্মঘাতী নীতি।

বিএমডিসির নিতিমালার আরেকটি অন্যতম ব্যর্থতা হচ্ছে পাস করা ছাত্রছাত্রীদের সিটখালি থাকা সত্ত্বেও একবারে ভর্তির জন্য উপযুক্ত ঘোষণা না করা। পাসকৃত ৪৯,০০০ ছাত্রছাত্রীর মধ্যে প্রথমে ৩৫,০০০, তারপর ১০,০০০, তারপর ৪,০০০ ছাত্রছাত্রীকে ভর্তিযোগ্য ঘোষণা করা এবং এই প্রক্রিয়ায় প্রায় ৪ মাস কালক্ষেপণ করে ছাত্রছাত্রী এবং তাদের অভিভাবকদের মাঝে হতাশা সৃষ্টি করা হয়। যেখানে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ১,৬০,০০০ সিট পূরণে তারা সময় নেয় সবর্মোট ২ মাস।

এভাবেই আবারো ভুলে ভরা নিয়মনীতি প্রণয়ন করে দেশ ও জাতিকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করাসহ ছাত্রছাত্রী-অভিভাবকদের মানসিকভাবেও চরম ক্ষতিগ্রস্ত করছে বিএমডিসি।

বিএমডিসি মেডিকেলের মতো ডেন্টালেও একই ধরনের নিয়ম-নীতি চাপিয়ে দিয়েই শুধু ক্ষান্ত হয়নি, তারা শিক্ষা সংকোচন নীতিকে প্রাধান্য দিয়ে পাস মার্ক ৪০ এর স্থলে ৫০ করার প্রস্তাবনা দিয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হলে সেটা হবে আরও আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রতি সিটের বিপরীতে কমপক্ষে যেখানে ৫ জন পাস করানো হয়, সেখানে আমাদের দেশে প্রতি সিটের বিপরীতে মাত্র ২ জনও পাওয়া যায় না।

গত বছরের তুলনায় এবার জিপিএ ৫ প্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা অনেক কম, স্বাভাবিকভাবেই গত বছর ১,৩৯,০০০ ছেলেমেয়ে পরীক্ষা দিয়ে ৪৯,০০০ ছাত্রছাত্রী পাস করলেও এবার পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কমে যাবে প্রায় ২৫,০০০ থেকে ৩০,০০০। ফলে পাসের সংখ্যা কততে দাঁড়াবে বোঝা কঠিন। এর মধ্যে যদি বিএমডিসির এসব ভ্রান্ত নীতি কাজ করে এবং এবারও যদি ছাত্রছাত্রী ভর্তি না হয় তবে বেসরকারি মেডিকেল বা ডেন্টাল কলেজগুলো ছাত্রছাত্রী ভর্তির অভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। যার ফলে দেশ থেকে মেধা পাচার হয়ে যাবে, সঙ্গে যাবে কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রাও।

প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ২,০০০ বিদেশি ছাত্রছাত্রী মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে পড়তে আসে। তাদেরকেও নিরুৎসাহিত করতে বিএমডিসি আনছে ভিন্ন ভিন্ন নিতিমালা।

একমাত্র মেডিকেল শিক্ষার মাধ্যমে এদেশে প্রতি বছর প্রায় ২,০০০ বিদেশি ছাত্র ভর্তি হওয়ায় প্রায় ২,০০০ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জিত হয়। এই বিদেশি ছাত্রছাত্রী ভর্তির ক্ষেত্রেও বিএমডিসি নতুন নতুন উদ্ভট বিভিন্ন নীতিমালা তৈরি করছে। সারা পৃথিবীতে যেখানে ঘঊঊঞ বা তদরূপ ডিগ্রি গ্রহণ করে ভারতীয় ছাত্রছাত্রী ভর্তি করে নিচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ এই NEET এর সঙ্গে GPA তে ৩.৫ পাওয়ার শর্ত জুড়ে দিয়েছে।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে