সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইবির দুই একাডেমিক ভবনের মাঝে মঞ্চ নির্মাণ না করার দাবি শিক্ষার্থীদের

ইবি প্রতিনিধি
  ০৫ মার্চ ২০২৪, ১৭:১৮

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দুই একাডেমিক ভবনের মাঝে ‘বৈশাখী মঞ্চ’ নির্মাণ না করার দাবি জানিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার এক মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এই দাবি জানান তারা। বেলা ১১ টায় অনুষদ ভবন এবং ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি একাডেমিক ভবনের মাঝে মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন বিভাগের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী এই কর্মসূচিতে অংশ নেন।

এসময় শিক্ষার্থীদের হাতে ‘সংস্কৃতি চাই, তবে শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংস করে নয়’, ‘শব্দ দূষণ নয়, এসো শিক্ষার ভূষণ রক্ষা করি ; বৃক্ষ নিধন নয়, এসো বৃক্ষ রোপন করি’, ‘একাডেমিক ভবনের সামনে মঞ্চ তৈরী বন্ধ করুন, পড়াশোনার পরিবেশ রক্ষা করুন’-সহ বিভিন্ন লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, প্রশাসন মঞ্চ নির্মাণের জন্য দুইটি একাডেমিক ভবনের মাঝের জায়গাটি বেছে নিয়েছে আর সেজন্য কয়েকটি প্রাচীন বৃক্ষও কাটা হয়েছে, যেটা অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত। দুই একাডেমিক ভবনের মাঝে মঞ্চটি স্থাপন করা হলে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করার ফলে পড়াশোনার পরিবেশ ধ্বংস হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও অনেক জায়গা ছিলো যেখানে একাডেমিক ব্যস্ততা কম। প্রশাসনের এমন কোনো জায়গা বেছে নেওয়া উচিত ছিলো।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবন এবং ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভবনের মধ্যখানে ‘বৈশাখী মঞ্চ’ তৈরির পরিকল্পনা করেছে কর্তৃপক্ষ। এজন্য গত ৩ মার্চ সেখান থেকে কয়েকটি প্রাচীন বৃক্ষ কর্তন করা হয়। ইতোমধ্যে মঞ্চ তৈরির জন্য ইট ও বালু নিয়ে এসেছে কর্তৃপক্ষ। ৪ মার্চ সকালে কর্তিত গাছ নিয়ে যাওয়ার সময় বাধা দেয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে সেখানে গাছ কাটার বিরুদ্ধে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদ। পরে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি, ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কন ও গণস্বাক্ষর গ্রহণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি করে ক্যাম্পাসের পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। এছাড়াও শাখা ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র মৈত্রীর নেতাকর্মীরাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এদিকে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে মঙ্গলবার একই স্থানে চারটি বৃক্ষ রোপন করেছে ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদ। সংগঠনটির সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, আমরা সংস্কৃতির চর্চায় বিরোধী নয়, তবে মঞ্চটি এমন জায়গায় স্থাপন করা হোক যেখানে একাডেমি কার্যক্রম বিঘ্ন না ঘটিয়ে অবাধ সাংস্কৃতিক চর্চার সুযোগ থাকবে।

এছাড়া একইদিনে মঞ্চ তৈরির পক্ষে-বিপক্ষে শিক্ষার্থীদের থেকে গণমতামত সংগ্রহ করেন শাখা ছাত্র মৈত্রী। এসময় অধিকাংশ শিক্ষার্থী দুই একাডেমিক ভবনের মাঝে নয়, বরং অন্য কোন স্থানে মঞ্চ তৈরি করার বিষয়ে মতামত দিয়েছেন বলে জানানো হয়।

এদিকে বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়ে বিকেলে ট্রেজারার দপ্তরে ৭ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি দিয়েছে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মঞ্চ (ঐক্যমঞ্চ)। তাদের দাবিগুলো হলো- অনুষদের মাঝখানে মুক্তমঞ্চ স্থাপনের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হবে কারণ অধিকাংশ সময় শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা এবং ক্লাস চলাকালীন সময়ে বৈশাখী মঞ্চ প্রাঙ্গণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সাফল্যমণ্ডিত করা অসম্ভব, মুক্তমঞ্চ স্থাপনের বিষয়টি ঐক্যমঞ্চের সাথে সমন্বয় সাধন করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত ছিল, মুক্তমঞ্চ তৈরির জন্য নির্বাচিত স্থানে কর্তনকৃত গাছের সম-পরিমাণ অর্থমূল্যের গাছ লাগাতে হবে, পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রেখে মুক্তমঞ্চ স্থাপনের ক্ষেত্রে সঠিক স্থান নির্বাচন করতে হবে, মুক্তমঞ্চ স্থাপনের ক্ষেত্রে সঠিক স্থান নির্বাচন করার বিষয়ে ঐক্যমঞ্চের মতামত গ্রহণ করতে হবে এবং ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে কর্তনকৃত বৃক্ষের পরিবর্তে যেসব বৃক্ষরোপন করা হবে সেগুলোর সঠিক পরিচর্যা করতে হবে।

এ বিষয়ে ঐক্যমঞ্চ’র আহবায়ক রাবেয়া খাতুন বলেন, আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকুক এবং সবাই যাতে সুন্দরভাবে সাংস্কৃতিক চর্চা করতে পারে। আর মঞ্চ তৈরির স্থান পরিবর্তন করে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার পরিবেশ নষ্ট না হয় এমন জায়গায় মঞ্চ তৈরি করতে হবে। এবং যে গাছগুলো কাটা হয়েছে তার সমপরিমাণ অর্থের গাছ লাগাতে হবে।

যাযাদি/এসএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে