সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

জাবিতে দুই হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাতভর সংঘর্ষ

জাবি প্রতিনিধি
  ০৬ মার্চ ২০২৪, ১৭:৫৮

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) দেয়াল অপসারণকে কেন্দ্র করে শহীদ রফিক-জব্বার হল ও শেখ রাসেল হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ইটপাটকেল ও পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের ঘটনায় দুই হলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং উভয় পক্ষের অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার (৫ মার্চ ) সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত একটা পর্যন্ত দফায় দফায় এ সংঘর্ষ চলে।

খোঁজ নিয়ে জোনা যায়, গত বছরের ২৯ জানুয়ারি নবনির্মিত শেখ রাসেল হল চালু হয়। এর আগের দিন ২৮ জানুয়ারি সকালে দুই হলের মধ্যবর্তী স্থানে স্থায়ী দেয়াল নির্মাণ করে শহীদ রফিক-জব্বার হলের শিক্ষার্থীরা। এতে যাতায়াতে অসুবিধাসহ বিভিন্ন ধরনের ভোগান্তির অভিযোগ এনে দেয়াল অপসারণের জন্য প্রশাসন বরাবর স্মারকলিপি দেন শেখ রাসেল হলের শিক্ষার্থীরা।

সর্বশেষ, গত সোমবার থেকে দেয়াল ভাঙার দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি করেন শেখ রাসেল হলের শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি জানাজানি হলে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে দেয়ালটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রাফিতি অঙ্কনের চেষ্টা করেন রফিক-জব্বার হলের ছাত্ররা। সে সময় শেখ রাসেল হলের ছাত্ররা দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর গ্রাফিতি অঙ্কনে বাঁধা দেন। এতে দুই হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হলে তা এক পর্যায়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় রূপ নেয়।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, দেয়াল ভাঙা নিয়ে দুই হলের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টির একপর্যায়ে শেখ রাসেল হলের ছাত্ররা রফিক-জব্বার হলের উদ্দেশ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। পরে উভয় হলের মধ্যে কয়েক দফায় ইটপাটকেল ও পেট্রোলবোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

এসময় উভয় হলের শিক্ষার্থীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে সামনাসামনি অবস্থান নেয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত সাতজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রফিক-জব্বার হলের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রেজাউল ও নিশাত গুরুতর আহত হন। তবে আহত অন্যদের পরিচয় জানা যায়নি।

এদিকে সংঘর্ষ চলাকালে পাল্টাপাল্টি ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় দুই হলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শহীদ রফিক জব্বার হলের দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম তলার এবং শেখ রাসেল হলের ডাইনিং, মসজিদ ও দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম তলার অধিকাংশ কক্ষের জানালার কাঁচ ভেঙে গেছে। দুপক্ষের ছোড়া ইটপাটকেল পড়ে আছে কক্ষগুলোর ভেতরে। পাশাপাশি পড়ার টেবিল, কাপড়চোপড়, বিছানাসহ রুমের মধ্যে যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ভাঙা কাঁচের টুকরো।

শেখ রাসেল হলের শিক্ষার্থীরা জানান, দেয়াল নির্মাণের কারণে প্রায় এক কিলোমিটার পথ ঘুরে বটতলায় খাবার খেতে যেতে হয়। আসন্ন রমজান মাসে ভোগান্তি কমাতে একাধিকবার প্রশাসনের কাছে দেয়াল ভাঙার দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু দেয়ালটি যাতে ভাঙা না যায়, সেজন্য রফিক-জব্বার হলের শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধুর গ্রাফিতি আঁকা শুরু করেন। এর ফলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাত একটার দিকে আশুলিয়া ও সাভার থানা-পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পুলিশের উপস্থিতিতে শেখ রাসেল শিক্ষার্থীরা হলের অভ্যন্তরে চলে যায়। তবে রাস্তায় অবস্থান করে রফিক জব্বার হলের শিক্ষার্থীরা। এসময় পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সাথে দেখা করতে যান প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল হাসান। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রক্টরের সাথে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে প্রক্টরকে ধাক্কাও দেন। এসময় পরিস্থিতি শান্ত না হওয়ায় পুলিশসহ পিছু হটতে বাধ্য হন প্রক্টর।

শহীদ রফিক জব্বার হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক শাহেদ রানা বলেন, সংঘর্ষের খবর পেয়ে হলে আসি। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। শেখ রাসেল হলে দিকের কক্ষগুলোর অধিকাংশই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। অর্ধশত কক্ষের জানালার কাঁচগুলো ভেঙে গেছে।

শেখ রাসেল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক তাজউদ্দীন সিকদার বলেন, হলে এসে ছাত্রদের শান্ত করার চেষ্টা করেছি। আমাদের হলটি একেবারে নতুন। এখানে ব্যবহৃত জানালার কাঁচ অন্যান্য হলের চেয়ে দামি। যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা ঠিক করতে মিনিমাম দুই-তিন লক্ষ টাকা লাগবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল হাসান বলেন, দুই হলের রাস্তার মধ্যবর্তী একটি দেয়ালকে কেন্দ্র করে মূলত সংঘর্ষের শুরু। প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা শিক্ষার্থীদের থামানোর চেষ্টা করেন, তবে তাঁদের থামানো যাচ্ছিল না। পরে পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। হলের ক্ষয়ক্ষতি যা হয়েছে তা অনাকাক্সিক্ষত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা অনাকাক্সিক্ষত। আমরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উভয় পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করেছি। উভয় হল প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে বসবো।

এদিকে রাতে দেয়াল ভেঙে ফেলার পর যাতায়াতের পথ স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে বুধবার সকালে ভাঙা দেয়ালের সম্মুখে এক্সাকেভেটর দিয়ে মাটি খুড়ে বিশাল পুকুর খনন করেছে রফিক-জব্বার হলের শিক্ষার্থীরা। সংকট সমাধানে উভয় হলের শিক্ষার্থীদের সাথে বুধবার বিকালে আলোচনায় বসেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে