কিশোরগঞ্জের সদর ও নিকলি উপজেলায় ‘বিনা উদ্ভাবিত সম্প্রসারণযোগ্য বোরো ধানের জাতসমূহের চাষাবাদ, বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ কলাকৌশল’ শীর্ষক কৃষক ও কৃষাণী প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) এবং কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে। প্রশিক্ষণ কর্মশালার অর্থায়নে রয়েছে বিনা'র গবেষণা কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ প্রকল্প।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় দুই উপজেলার মোট ১০০ জন কৃষক ও কৃষাণী অংশ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে ১ টন উন্নতজাতের ‘বিনা ধান২৪ ও বিনা ধান২৫’-এর বীজ বিতরণ করা হয়।
সকালে প্রথম কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয় কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার সম্মেলন কক্ষে। এটি পরিচালিত হয় সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত। সদর উপজেলার কর্মশালার সভাপতিত্ব করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোতালেব হোসেন।
দ্বিতীয় কর্মশালাটি বিকালে নিকলি উপজেলার সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। এটি দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চলে। নিকলি উপজেলার কর্মশালার সভাপতিত্ব করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাখাওয়াত হোসেন।
দুই কর্মশালারই উদ্বোধন করেন কিশোরগঞ্জ জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ। কর্মশালাগুলোর সঞ্চালনা করেন বিনার ফলিত গবেষণা ও সম্প্রসারণ বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তাহমিনা ইয়াসমিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিনার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাহবুবুর রহমান খান এবং ড. মোহাম্মদ নুরুন-নবী মজুমদার।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে বিনার ভূমিকা অনন্য। তাদের উদ্ভাবিত জাতগুলো কৃষকের জীবনমান উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। ‘বিনা ধান-২৪ ও বিনা ধান২৫’ চাষাবাদ করে কৃষকরা উচ্চফলন নিশ্চিত করতে পারবেন এবং অর্থনৈতিকভাবে আরও স্বাবলম্বী হবেন।
বিশেষ অতিথি ড. মাহবুবুর রহমান খান বলেন, বিনা শুধু ধান নয়, সরিষাসহ বিভিন্ন ফসলের উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে। আমাদের উদ্ভাবনগুলো কৃষকের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
ড. মোহাম্মদ নুরুন-নবী মজুমদার বলেন, বিনার গবেষণা ও উদ্ভাবন কৃষি খাতের উন্নয়নে বিপ্লব ঘটিয়েছে। এ কর্মশালাগুলোর মাধ্যমে কৃষকদের কাছে সেই উদ্ভাবনগুলো পৌঁছে দেওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য।
কর্মশালার দ্বিতীয় সেশনে কৃষকদের ‘বিনা ধান-২৪ ও বিনা ধান২৫’-এর সঠিক চাষাবাদ, বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণে আধুনিক প্রযুক্তি এবং কলাকৌশল শেখানো হয়।
উল্লেখ্য, বিনা এখন পর্যন্ত বোরো ও আমন ধানের ২৭টি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিনা উদ্ভাবিত জাতগুলো উচ্চ ফলন, রোগবালাই প্রতিরোধ এবং দ্রুত পরিপক্কতার কারণে কৃষকদের মধ্যে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
এ কর্মশালার মাধ্যমে কৃষকরা উন্নত প্রযুক্তি ও বিনার উদ্ভাবন কাজে লাগিয়ে কৃষি উৎপাদনে আরও স্বাবলম্বী হবে বলে আশা করছেন বিনার বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা।
যাযাদি / এআর