কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি করা ব্যায়ামাগার দখল করে দীর্ঘদিন সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়েছে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এই কক্ষটি ছাত্রলীগ ব্যবহার করতো 'টর্চার সেল' হিসেবে। এই কক্ষেই শিক্ষার্থীদের ধরে এনে নির্যাতন চালানো হতো। এখন সেই কক্ষ ফিরেছে আগের রূপে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন কক্ষটি দখলমুক্ত করে আবারো ব্যায়ামাগার স্থানান্তর করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবরে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী ব্যায়ামাগারটি উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর থেকেই ব্যায়ামাগারের নিয়ন্ত্রণ নেয় শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ। অতীতে দখলকৃত এ ব্যায়ামাগার থেকে শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল দপ্তরের তথ্যমতে, প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ব্যায়ামাগারের জন্য ভবনটি নির্মিত হয়। নিয়ম অনুযায়ী ব্যায়ামাগারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কার্যালয়ের কাছে হস্তান্তর করার কথা থাকলেও ছাত্রলীগের দাপুটে নেতাকর্মীদের কারণে তা সম্ভব হয়নি।
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ছাত্রলীগের সকল ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সরকার পতনের প্রায় ১০ মাস পর ব্যায়ামারটি শারীরিক শিক্ষা বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার দ্বিতীয় তলার উন্মুক্ত স্থানে ব্যয়ামাগারের কার্যক্রম চলে আসছিল। এখন প্রশাসনিক ভবনের পূর্বপাশে অবস্থিত টিন শেড বিল্ডিংয়ে ব্যায়ামাগারটি স্থানান্তর করা হয়েছে।
ব্যামাগারে আসা শিক্ষার্থী শান্ত দেবনাথ বলেন, 'অনেক প্রতীক্ষার পরে একটা ব্যায়ামাগার পেয়েছি। তবে ব্যায়ামাগারে সরঞ্জাম অনেক কম। বৃষ্টি হলে পানি চুইয়ে ভিতরে আসে। যদি একজন প্রফেশনাল ট্রেইনার নিয়োগ করা হয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে ব্যায়াম করতে পারবে।'
আরেক শিক্ষার্থী সৌরভ নন্দী বলেন, 'ব্যায়মাগার সকাল নয়টা থেকে রাত্রি নয়টা পর্যন্ত খোলা থাকে। আমাদের সকাল নয়টায় ক্লাস থাকায় সকালে আসতে শরীরচর্চা করতে আসতে পারনি। সকাল ছয়টা থেকে খোলা থাকলে সকালে এসে শরীরচর্চা করতে পারতাম। ব্যামাগারে সরঞ্জাম বাড়ানোর কথা বললেও বাড়ায়নি। এছাড়া ব্যায়ামাগারে পানি এবং পাখার কোনো ব্যবস্থা নাই।'
ব্যায়ামাগার উদ্বোধনের পর স্থানান্তরের দীর্ঘ সূত্রতার বিষয়ে শারীরিক শিক্ষা কার্যালয়ের উপ পরিচালক মনিরুল আলম বলেন, 'কর্তৃপক্ষ আমাকে বলেছিল অন্য জায়গায় শিফট করতে, তাই করেছিলাম। এখন বলেছে নির্ধারিত জায়গায় শিফট করার জন্য এজন্য শিফট করেছি।'
ব্যায়ামাগারের সরঞ্জাম এবং সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর বিষয় তিনি বলেন, 'সরঞ্জাম এবং ট্রেইনারের বিষয়টি প্রশাসন দেখবে।'
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হায়দার আলী বলেন, 'আগে তো ব্যায়ামাগার ক্যাফেটেরিয়ার দোতলায় ছিল, শিক্ষার্থীরা এসে দাবি জানালো ব্যায়াগার নেই। খোঁজ নিয়ে জানলাম ব্যায়ামাগার জন্য নির্ধারিত ভবন রয়েছে। পরে সেখানে স্থানান্তরিত করেছি। এই অর্থবছরে পর্যাপ্ত বাজেট নেই। নতুন অর্থবছরে বাজেট আসলে ক্রীড়া কমপ্লেক্সে দোতলায় কাজ সম্পন্ন করে সেখানে ব্যায়ামাগার স্থানান্তর করব ইনশাআল্লাহ।'