ছাত্রজীবন অনেকেই ভাবেন কেবল পড়ালেখার সময়, কিন্তু বর্তমান সময়ে এটি একসাথে দক্ষতা অর্জন ও আত্মনির্ভরশীল হওয়ার শ্রেষ্ঠ সময়ও বটে।
দিনদিন বাড়ছে পড়াশোনার খরচ, টিউশন ফি, আবাসন ব্যয়—এই অবস্থায় অনেক শিক্ষার্থীই খুঁজছেন আয় করার সহজ ও কার্যকর উপায়। একদিকে ক্লাস, অন্যদিকে সীমিত সময়—তাই এমন কিছু উপার্জনের পথ দরকার যা সহজ, বাস্তবসম্মত এবং শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
চলুন তাহলে জেনে নিই এমন ১০টি উপায়, যেগুলো বাস্তবসম্মত, পরীক্ষিত এবং একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আপনি খুব সহজেই শুরু করতে পারেন।—
টিউশনি করা – পড়িয়েই আয়
ছাত্রজীবনে আয় করার সবচেয়ে পরিচিত ও নিরাপদ উপায় হলো টিউশনি। আপনি যদি কোনো বিষয়ে ভালো পারেন সেই অনুযায়ী টিউশনি বেছে নিতে, যেমন গণিত, ইংরেজি বা বিজ্ঞান, তাহলে আপনার এলাকার স্কুলপড়ুয়া ছোট ছাত্রছাত্রীদের পড়িয়ে উপার্জন করতে পারেন।
মাসে ২–৩টি টিউশন করলেই আপনি ৩,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন। এই আয়ে যেমন পড়ালেখার খরচ মেটে, তেমনি নিজের শেখাও আরও গভীর হয়।
যাদের বাসায় কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ আছে, তারা অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং করে ঘরে বসেই আয় করতে পারেন।
Fiverr, Upwork, Freelancer-এর মতো সাইটগুলোতে গ্রাফিক ডিজাইন, ডেটা এন্ট্রি, অনুবাদ, কনটেন্ট লেখা, ভিডিও এডিটিং ইত্যাদি কাজ পাওয়া যায়। এই কাজগুলো শিখতে কিছুটা সময় লাগলেও, একবার দক্ষতা তৈরি হলে মাসে ১০,০০০–৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয় সম্ভব।
কনটেন্ট রাইটিং – লেখালেখিকে রূপ দিন পেশায়
আপনার যদি লেখার আগ্রহ ও দক্ষতা থাকে, তবে আপনি একজন কনটেন্ট রাইটার হিসেবে আয় শুরু করতে পারেন। বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ব্লগ, নিউজ পোর্টাল নিয়মিতভাবে কনটেন্ট লেখকের খোঁজ করে।
বাংলা বা ইংরেজি—দুই ভাষাতেই লেখার সুযোগ রয়েছে। প্রযুক্তি, শিক্ষা, ভ্রমণ, স্বাস্থ্য, ক্যারিয়ার গাইড—আপনার পছন্দের বিষয় নিয়েই লিখতে পারেন এবং প্রতিটি আর্টিকেলের জন্য পেতে পারেন ২০০–৫০০ টাকা বা তার বেশি।
হোমমেড পণ্য বিক্রি – নিজের তৈরি জিনিসেই আয়
যদি আপনি রান্না, সেলাই, বা হাতে তৈরি কোনো কাজ জানেন, তাহলে হোমমেড প্রোডাক্ট বিক্রি করে আয় করতে পারেন। যেমন—চকলেট, পিঠা, কেক, পুঁতির গয়না, মোমবাতি, হস্তশিল্প, হ্যান্ড পেইন্টেড মগ ইত্যাদি।
ক্যাম্পাসের বন্ধুবান্ধব, শিক্ষক, কিংবা আশেপাশের দোকানে এসব পণ্য বিক্রি করে ভালো আয়ের সুযোগ আছে। অনেকেই ছাত্রজীবনেই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হয়ে উঠছেন এই পথে।
পার্টটাইম কাজ – বাস্তব অভিজ্ঞতা ও আয়
পড়াশোনার পাশাপাশি একটা নির্দিষ্ট সময় পার্ট টাইম জব করা যেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ ক্যাম্পাসের পাশে থাকা দোকান, লাইব্রেরি, কফিশপ বা ফাস্টফুড আউটলেটে বিকাল বা সন্ধ্যার সময় পার্টটাইম কাজ করার সুযোগ পাওয়া যায়।
এতে দিনে ২–৪ ঘণ্টা সময় দিয়ে মাসে ৪,০০০–৮,০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। একই সঙ্গে সময় ব্যবস্থাপনা ও বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতাও বাড়ে, যা ভবিষ্যতের চাকরি বা ক্যারিয়ারে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
গ্রাফিক ডিজাইন – সৃজনশীলতাকেই রূপ দিন পেশায়
যারা ডিজাইনিং পছন্দ করেন বা একটু সৃজনশীল কাজ করতে আগ্রহী, তারা Canva, Adobe Photoshop, Illustrator-এর মতো টুল ব্যবহার করে ফেসবুক পোস্ট, লোগো, ফ্লায়ার বা ইউটিউব থাম্বনেইল ডিজাইন করতে পারেন। এসব কাজের জন্য লোকাল মার্কেট বা অনলাইন ক্লায়েন্টের কাছ থেকে ভালো পারিশ্রমিক পাওয়া যায়। আপনি চাইলে নিজের একটি ডিজাইন পোর্টফোলিও তৈরি করেও আয় বাড়াতে পারেন।
শখ যখন অর্থ উপার্জনে সহায়ক – ফটোগ্রাফি
অনেকেই শখের বসে ছবি তোলেন। কিন্তু চাইলে এই ফটোগ্রাফি দিয়েই আপনি ইনকাম শুরু করতে পারেন। আপনার কাছে যদি একটি ভালো মোবাইল ক্যামেরা বা DSLR থাকে, তাহলে স্কুল-কলেজের ইভেন্ট, জন্মদিন, ব্যাচ রিইউনিয়ন, কিংবা ক্যাম্পাস ফটোশুটে ছবি তুলে অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। একই সাথে Canva বা Lightroom দিয়ে ছবি এডিট শেখে নিলে পেশাদারভাবে কাজ করা যায়। এছাড়া আপনি ফেসবুক পেজ বা ইনস্টাগ্রামে নিজের কাজ শেয়ার করে ক্লায়েন্ট জোগাড়ও করতে পারেন।
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে অভিজ্ঞ হও – পরিকল্পনা করেই আয়
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, কনফারেন্স, ওয়ার্কশপ ইত্যাদি আয়োজনের সময় ছাত্রদের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকে। আপনি চাইলে রেজিস্ট্রেশন, অতিথি সেবা, স্টেজ ডেকোরেশন, সাউন্ড ম্যানেজমেন্ট বা বাজেট পরিকল্পনায় যুক্ত হয়ে আয় করতে পারেন। প্রতিটি ইভেন্টে পারিশ্রমিক পাওয়া ছাড়াও এতে ভবিষ্যতের ক্যারিয়ার গঠনের জন্য মূল্যবান অভিজ্ঞতা অর্জন হয়।
কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা
আপনি যদি নিজের বিষয়ে দক্ষ হন, তবে এলাকার কোচিং সেন্টার বা টিউশন ক্লাসে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করতে পারেন।
অনেক শিক্ষার্থী এই পথেই শিক্ষকতার অভ্যাস গড়ে তোলে এবং পরবর্তীতে বিসিএস বা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতা প্রস্তুতির জন্য একটি দৃঢ় ভিত্তি তৈরি হয়। এটি আয় ও অভিজ্ঞতা—দুইয়ের দিক থেকেই দারুণ লাভজনক।
জরিপ ও প্রজেক্ট ভিত্তিক কাজ
বিভিন্ন NGO, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা সরকারি সংস্থার জরিপ বা গবেষণা প্রকল্পে ছাত্রদের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে।
এই কাজগুলোতে সাধারণত মাঠপর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ, প্রশ্নপত্র বিতরণ, ডেটা এন্ট্রি ইত্যাদি করা লাগে। সময় অনুসারে পারিশ্রমিকও ভালো—প্রতিদিন ৫০০ থেকে ১,৫০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এতে হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা হয়, যা ভবিষ্যতে বড় কাজে লাগে।
ছাত্রজীবনে আয় করা শুধু প্রয়োজন নয়, এটি একজন শিক্ষার্থীর আত্মবিশ্বাস, কর্মদক্ষতা এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতির অংশ।
আপনি যে পর্যায়ে আছেন, সেই অনুযায়ী আপনার আগ্রহ ও দক্ষতা অনুযায়ী উপরের যেকোনো একটি বা একাধিক উপায় বেছে নিতে পারেন।