এখন বাংলা আষাঢ় মাসের শেষ সময় আর কয়েক দিন পরেই শুরু হবে শ্রাবন বর্ষকালের এই মাঝ পথে যখন বর্ষার পানিতে থৈথৈ থাকার কথা মাঠ-ঘাট, কিন্তু এবছর বর্ষাকলের এই মাঝ পথে এসেও দেখা মিলছেনা বৃষ্টি পাতের, রৌদ্রের খরাতাপে মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে পড়েছে, মাঠে কোথাও পানি নেই, পানির অভাবে কৃষকরা আমন রোপন করতে পারছেনা।
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীসহ আশপাশের কয়েকটি উপজেলা এলাকার অবস্থা একই রকম। বর্ষকালের মাঝ পথে এসেও বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কৃষকরা আমন রোপন করতে পারছেনা। এদিকে সময় মতো আমন রোপন করতে না পারায় ফসলহানীর আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সুত্রে জানাগেছে, ফুলবাড়ী উপজেলায় ৩৪,ব্রি-৪৯, সম্পা কাটারী, ব্রি-৯৩, ৯৪, সোনামুখি, রঞ্জিত, এবং হাইব্রিড জাতের টিয়া, ধানিগোল্ড, এজেড ৭০০৬ জাতের রোপা আমন ধান চাষাবাদ হয়ে থাকে। এবছর এ উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভায় মোট ১৮ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে ৬১ হাজার ৯১৬ মেট্রিকটন রোপা আমন চাষাবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বীজতলা রোপনের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে ৯০৯ হেক্টর জমিতে, লক্ষমাত্রা ইতিমধ্যে বীজতলা তৈরী করা হয়েছে। প্রতি বছর আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে বৃষ্টির পানিতে আমন ধান রোপণ করেন কৃষক। কিন্তু এবছল মাসব্যাপী অনাবৃষ্টির কারণে পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এতে পানির অভাবে কৃষক ধান রোপণ করতে পারছেন না।
উপজেলার নদি রক্ষা আন্দোলনের আহবায়ক ডাক্তার ওয়াজেদুর রহমান বাবলু যায়যায়দিনকে বলেন যে ভাবে প্রকৃতির উপর আঘাত হানা শুরু হয়েছে, একই ভাবে প্রকৃতি বিপরিত মুখি অবস্থানে চলে যাচ্ছে। তিনি বলেন পরিবেশ বান্ধব গাছপালা কর্তন ও নদি দখলের কারনে প্রকৃতিক দুর্যোগ অতিখরা ও অতিবন্যা দেখা দিচ্ছে।
ডাক্তার ওয়াজেদুর রহমান যায়যায়দিনকে আরো বলেন নদিগুলো দির্ঘদিন খনন বা সংস্কার না করায় নদিগুলো পুরে উঠছে, এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নদিগুলো দখল করে নিচ্ছে একপ্রকার অসাধু প্রভাবশালী মহল, এর থেকে বাদপড়েনি ফুলবাড়ীর শাখা যমুনা নদিও, নদির উপর তৈরী হচ্ছে বড়বড় দালানকোটা। নদিতে পানি না থাকায় জলিয়বাস্প সৃষ্টি হচ্ছেনা যার ফলে বৃষ্টিপাত কমে যাচ্ছে, এছাড়া পরিবেশ বান্ধ গাছপালা কেটে ফেলায় এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এই কারনে বর্ষকালেও বৃষ্টির দেখা মিলছেনা।
দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন যায়যায়দিনকে জানায়, বৃহস্পতিার ও শুক্রবার (১৪ ও ১৫ জুলাই) জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তিনি বলেন এসময় এই জেলায় ১৬০ থেকে ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে, কিন্ত এবছল চলতি মাসে বৃষ্টি পাত হয়েছে মাত্র ১৭দশমিক ২ মিলিমিটার। যা অন্য বছরের তুলনায় একেবারে নগ্ন, যার কারনে তাপদাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে বৃষ্টি শুরু হতে পারে বলে তিনি আশাপ্রকাশ করেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোছাঃ রুম্মান আক্তার যায়যায়দিনকে বলেন সাময়িক পরিস্থিতি মোকাবিলার করনে বিকল্প উপায় সেচপাম্প গুলো চালু করার নির্দ্ধেশনা দেয়া হয়েছে, যাতে কৃষক সময় মতো আমন রোপন করতে পারে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন বর্ষকালের এখনো অনেক সময় রয়েছে এর মধ্যে বৃষ্টিপাত শুরু হলে এই সম্যসা সমাধান হয়ে যাবে । এই কর্মকর্তা আরো বলেন আগামী এক মাস পর্যন্ত আমন রোপন করার সময় রয়েছে হয়তো এর মধ্যে বৃষ্টি পাত শুরু হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
যাযাদি/ এস