বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকৃতির সান্নিধ্যে

রাহিমা আক্তার রিয়া
  ০৭ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
প্রকৃতির সান্নিধ্যে

অবসর সময়ে নিজেকে সতেজ করে নিতে বিনোদনের বিভিন্ন মাধ্যম বেছে নেওয়া নতুন কিছু নয়। যুগ যুগ ধরে এমনটাই হয়ে আসছে। বর্তমান সময়ে মানুষের কাছে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে ঘোরাঘুরি বা ভ্রমণ করা খুবই জনপ্রিয়। আমি ভ্রমণপ্রিয় একজন মানুষ। প্রকৃতি আমাকে ব্যাপকভাবে টানে। কেন জানি প্রকৃতির টান আমি সহজে অগ্রাহ্য করতে পারি না। আমি সচরাচর যাদের সঙ্গে ওঠাবসা করি তারাও আমার মতোই ঘোরাঘুরি করতে পছন্দ করে। একদিন জানতে হঠাৎ করে জানতে পারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রাম পার্বত্য জেলা উন্নয়ন বোর্ড এবং বাংলাদেশ অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু অ্যাডভেঞ্চার ফ্যাস্টিভাল আয়োজন করা হবে। এই সংবাদ শোনামাত্রই হৃদয়ের প্রতিটি জায়গায় এক ধরনের ভালোলাগার অনুরণন সৃষ্টি হয়। সত্যি বলতে সেই মুহূর্তের অনুভূতিটা বলে-কয়ে বোঝানো সম্ভব নয়। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিই আমি এই ফ্যাস্টিভালে অংশ নেবো। মূলত সেদিন থেকে প্রহর গুণতে থাকি কবে আসবে সেই কাঙ্ক্ষিত দিন। প্রকৃতির চিরাচরিত নিয়মে সময় ঘনিয়ে এলে অন্য সবার মতো আমিও নিবন্ধন করি। ফ্যাস্টিভালে অংশগ্রহণের সুযোগ পাই।

আমাদের দেশের অনেকের সাধারণত ধারণা নারীরা সবকিছু পারে না। আর অ্যাডভেঞ্চারজাতীয় কোনো কিছু তো নয়ই; কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় যখনই সুযোগ এসেছে নারীরা প্রমাণ করেছে তাদের সম্পর্কে মানুষের ধারণা সত্যি নয়। ক্ষেত্র বিশেষে নারীরা পুরুষদেরও ছাড়িয়ে গেছে। শিক্ষা থেকে শুরু করে পর্বত জয় কোনো কিছুতেই নারীরা আর পিছিয়ে নেই। বঙ্গবন্ধু অ্যাডভেঞ্চার ফেস্টিভাল ক্যাম্পে পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩ জেলার স্থানীয় ৫০ জন এবং দেশের বাকী জেলাগুলো থেকে ৫০ জন মোট ১০০ জন অংশগ্রহণ করেছিল যার মধ্যে ৪৩ জনই ছিল নারী। নারীদের এমন স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আমাকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। রাঙামাটি জেলার মারী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় এই ফ্যাস্টিভাল। প্রথমেই ১০০ জনকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়। তারপর ৩টি দলের একটিকে খাগড়াছড়ি, একটিকে রাঙামাটি এবং বাকী দলটিকে পাঠানো হয় বান্দরবনে। তিনটি জেলাতেই ছিল ভিন্ন ভিন্ন আয়োজন এবং চমকপ্রদ সব ইভেন্ট।

সবুজে ঘেরা বন-পাহাড়ের আঁকাবাঁকা, উঁচু-নিচু বন্ধুর পথে আমরা নারীরা পুরুষদের সঙ্গে সমানতালে হেঁটে যাচ্ছি। পাহাড়ের সৌন্দর্যের ফাঁক-ফোকরে লুকিয়ে থাকা প্রতিবন্ধকতাগুলো আমাদের দমাতে পারছে না দেখে দারুণ অনুভূতি হচ্ছিল তখন। পূর্ণ উদ্যমে ট্রাকিং, ক্যানিওনিং, ট্রেজার হান্ট, হাইকিং, কায়াকিং, ট্রেইল রান, রেপলিং, ট্রি টপ একটিভিটি ও জিপ লাইনিং-এর মতো কঠিন ধাপগুলো একটার পর একটা জয় করতে থাকি। তখন কখনো কখনো এগুলো নিজের কাছে অবিশ্বাস্য ঠেকলেও পরক্ষণেই মনে হচ্ছিল এ আর এমনকি কঠিন কাজ, না পারার কী আছে। সত্যি বলতে আমি এখনো বিশ্বাস করি শুধু আত্মবিশ্বাসের বলেই আমরা এগুলো সহজেই জয় করতে পেরেছিলাম, নতুবা সম্ভব ছিল না। বাংলাদেশ অ্যাডভেঞ্চার ক্লাবের এক দক্ষ ও দুঃসাহসিক দলের দিকনির্দেশনাও বেশ কাজে লেগেছিল। ক্যাম্পের ১০০ জনের সঙ্গে শুরুতে তেমন পরিচয় না থাকলেও একটা সময়ে গিয়ে সেই অপরিচিত মুখগুলোই হয়ে ওঠে যেন দীর্ঘদিনের চেনাজানা। আর চোখ জুড়ানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর পাহাড়ি জনপ্রতিনিধিদের আতিথেয়তা ভুলে যাওয়ার মতো নয়। এসবের মধ্যদিয়েই পরিসমাপ্তি ঘটে আমাদের রোমাঞ্চকর এক আনন্দঘন ভ্রমণের।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে