রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

লক্ষ্য যাদের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

গত তিন বছরের মতো এ বছরও দেশের আটটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ৫ আগস্ট পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। যারা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখছো বা আগ্রহের তালিকায় রয়েছে, তাদের জন্য দিক-নির্দেশনামূলক কিছু পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী। লিখেছেন- মুসাদ্দিকুল ইসলাম তানভীর
মুসাদ্দিকুল ইসলাম তানভীর
  ২৯ জুলাই ২০২৩, ০০:০০

কৃষিতে রয়েছে সমৃদ্ধ ক্যারিয়ারের সম্ভাবনা

আশিকুর রহমান

কৃষি অনুষদ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

পৃথিবীর যেসব দেশ আজ শিল্পোন্নত তারাও সর্বপ্রথম কৃষি আধুনিকায়নের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। সুতরাং, কৃষির বিকল্প নেই। আর এই কৃষিকে আধুনিক জ্ঞানচর্চায় এগিয়ে নিতে এ দেশে কাজ করে যাচ্ছে একাধিক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। তবে অনেকের মনে একটি প্রশ্ন কাজ করে, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে নিজের ক্যারিয়ার কীভাবে গড়বেন। তাদের জন্য বলব, কৃষি গ্র্যাজুয়েটদের জন্য উচ্চশিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে দেশে-বিদেশে অফুরন্ত সুযোগ রয়েছে। ভালো পড়াশোনার মাধ্যমে কৃষি ও বিজ্ঞানপ্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক হিসেবে যোগদানের সুযোগ, বিসিএসে টেকনিক্যাল ও সাধারণ ক্যাডারসহ সর্বোচ্চ ক্যাডারে আবেদনের সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া বিনা, বারি, ধান গবেষণা, মৎস্য গবেষণা, বিএলআরআই, পাট, ইক্ষু, চা গবেষণাসহ বিভিন্ন সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে কৃষি গ্র্যাজুয়েটদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। শুধু তাই নয়- জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সার্ক এগ্রিকালচার সেন্টারসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানেও কাজ করার সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি সরকারি, বেসরকারি ব্যাংক, সার কারখানা, বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি, কীটনাশক তৈরির কারখানা, পশুর খামার, বিভিন্ন মাংস ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসহ ব্যক্তি মালিকানাধীন দেশের সনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে যোগদানের সুযোগ তো থাকছেই।

সহায়ক বই ও প্রশ্নব্যাংক সমাধানে জোর

মো. রাহাত রায়হান রাফি

চতুর্থ বর্ষ, ভেটেরিনারি অনুষদ

এ বছর পরীক্ষার প্রশ্নে অনুসরণ করা হবে এইচএসসি ২০২২ সিলেবাস। বিগত গুচ্ছ পরীক্ষার প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে সব বিষয়ের টপিক থেকেই বেসিক লেভেলের প্রশ্ন করা হচ্ছে। যারা মেডিকেল ভর্তি প্রস্তুতি নিয়েছে তারা পদার্থ, রসায়ন ও গণিতে বেশি জোর দেবে। এ ক্ষেত্রে অধ্যায়ভিত্তিক বেসিক পড়াশোনার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সূত্রসমূহ মুখস্থ রাখবে। মূলবই পড়ার পাশাপাশি বাজারে প্রচলিত সহায়ক বইগুলো অধ্যয়ন করলে উপকৃত হবে। বিগত পরীক্ষার প্রশ্নব্যাংক সমাধান করে টপিকভিত্তিক পড়া একজন শিক্ষার্থীকে এগিয়ে রাখবে। পরীক্ষার হলে ঠান্ডা মাথায় থাকতে হবে, যেহেতু নেগেটিভ মার্কিং রয়েছে অহেতুক ঝুঁকি নিয়ে সন্দেহজনক উত্তর দাগানো থেকে বিরত থাকতে হবে। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে কৃষির সব বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে একজন বিজ্ঞানী, গবেষক, শিক্ষক, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, উদ্যোক্তা কিংবা হোমমেকার হিসেবে গড়ে তুলতে কৃষিবিষয়ক সাবজেক্টগুলো তোমাকে যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। নিজেকে বিকশিত করার জন্য এখানে পাবে অবারিত সুযোগ। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিষয় বাছাই নিয়েও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি জরুরি

ইসরাত জাহান

তৃতীয় বর্ষ, কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ

নিজের স্বপ্নের তাগিদে বা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিযুদ্ধে নিজেকে প্রমাণ করতে ব্যর্থ যোদ্ধাদের আশা এখন কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় ভালো করার জন্য এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো হতাশাকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া। বিগত সালের প্রশ্ন থেকে প্রশ্নের ধরন এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বুঝে নিয়ে নিজের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। গণিতের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো যে বারবার অনুশীলন করা। বেশি অনুশীলন না করলে পরীক্ষার সময় মনে থাকবে না। জীববিজ্ঞানের মূল বইগুলো খুব ভালো করে পড়তে হবে। গণিতে যাদের দুর্বলতা রয়েছে জীববিজ্ঞান তাদের চান্স পাওয়ার একমাত্র হাতিয়ার। রসায়নে গাণিতিক সমস্যা খুব কমই আসে। জৈব যৌগ নিয়ে ভয়ের কারণ নেই। এই অধ্যায় থেকে প্রশ্নের সংখ্যা একটি বা দুটি। পদার্থবিজ্ঞানে গাণিতিক সমস্যাই বেশি আসে। প্রতিটি অধ্যায়ের গাণিতিক সমস্যাগুলো বারবার অনুশীলন ও সকল সূত্র মুখস্থ রাখতে হবে। বড় হিসাবের প্রশ্নে সময় নষ্ট না করে ছোট হিসাবের প্রশ্ন আগে দেখতে হবে। ইংরেজিতে সাধারণত গ্রামার থেকে বেশি প্রশ্ন আসে। গ্রামারের প্রতিটি টপিকের ব্যতিক্রম নিয়মগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে কৃষি নিয়ে পড়ার প্রয়োজনীয়তা হয়তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কৃষি এখন আধুনিক। যন্ত্রনির্ভর কৃষি যে উৎপাদন বাড়াতে কতটা জরুরি তা পত্রপত্রিকা ঘাটলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। দেশের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণের মহান পেশায় প্রতিনিয়ত কাজ করে দেশের সব কৃষিবিদ। এর অংশীদার কে না হতে চায়!

সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে পাঠ্যবইয়ে

অনিন্দ্য কুমার প্রামাণিক

১ম বর্ষ, ভেটেরিনারি অনুষদ

কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাংলাদেশকে কৃষি বিপস্নবের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। গত কয়েক বছরের মতো এ বছরও অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সমন্বিত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা, যেখানে অংশগ্রহণ করবে ৮০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী। তবে মোট আসন সংখ্যা মাত্র ৩৫৪৮। এখানে শিক্ষার্থীরা কৃষি, ভেটেরিনারি, পশুপালন, ফিসারিজ, কৃষি প্রকৌশল, কৃষি অর্থনীতি, ফুড সেফটি ম্যানেজমেন্ট, বায়ো ইনফরমেটিকস, জেনেটিক্সের মতো অনেক সাবজেক্টে পড়ার সুযোগ পাবে। এই সব বিষয়ে স্নাতক শেষ করার ফলে শিক্ষার্থীরা দেশে সরকারি, বেসরকারি, গবেষণাসহ বিদেশেও রয়েছে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ। তাই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রস্তুতিতে অবশ্যই পাঠ্যবইকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। পাঠ্যবইয়ের ছোট ছোট উদাহরণগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। রসায়ন, পদার্থ এবং জীববিজ্ঞানের বইগুলো খুব ভালো করে পড়তে হবে। সেই সঙ্গে অনুশীলনীর প্রশ্ন ও বিগত বছরের প্রশ্ন ব্যাংক সহায়ক হবে। গণিতের জন্য অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই ক্যালকুলেটর ছাড়া অঙ্ক করতে হবে। ইংরেজি বিগত সালের প্রশ্ন ও গত ১০ বছরের বিসিএসের প্রশ্ন সমাধান করলে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে