শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

তোমাদের হেমন্ত এসেছে

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
  ০৫ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

ছোট্ট বন্ধুরা, তোমরা অবশ্যই জানো- কার্তিক-অগ্রহায়ণ দুই মাস হেমন্তকাল। এ সময় সকালে দেখা যায় কুয়াশা। একটু পরেই মিষ্টি রোদের আদর। গাছের পাতারা নাচতে নাচতে ঝরে পড়ে। এসবই তো হেমন্তের বৈশিষ্ট্য। প্রকৃতির নিয়মেই হেমন্ত নিয়ে আসে হিম হিম হালকা কুয়াশা। চারদিকে নতুন ধানের মিষ্টি গন্ধ। আবহমান কাল থেকেই হেমন্ত মানে কৃষকের মুখে অনাবিল হাসি। ধান কাটা-মাড়াই নিয়ে সে কী ব্যস্ততা। চলতে থাকে নবান্নের পিঠা-পায়েসের আয়োজন।

হেমন্তে কৃষকের গোলা ভরে যায় শান্তির পরশে। তাই তো হেমন্তকে বলা হয় ফসল তোলার ঋতু। হেমন্তের নতুন ধানে ঘরে ঘরে সুখ আসে। রাস উৎসবের আয়োজন করা হয়। চারদিকে খুশির ঝিলিক দেখা যায়। পলস্নীকবি জসীম উদ্‌দীন তার কবিতায় বলেছেন, 'আশ্বিন গেল কার্তিক মাসে পাকিল ক্ষেতের ধান/ সারা মাঠ ভরি গাহিছে কে যেন হলদি কোটার গান।/ ধানে ধান লাগি বাজিছে বাজনা, গন্ধ উড়ায় বায়ু/ কলমি লতায় দোলন লেগেছে, ফুরাল ফুলের আয়ু।'

\হকার্তিক মাসে হেমন্ত শুরু হলেও শীত আসতে শুরু করে এখনই। তোমরাও নিশ্চয়ই শীতের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছ? শীতের নতুন পোশাক কিনতে চাইছ। খেয়াল রাখবে, তোমাদের আশপাশে গরিব শিশু যারা আছে, তারা যেন শীতে কষ্ট না পায়। পারলে তোমার পুরনো শীতের পোশাকটি তাকে দিয়ে দিতে পার। তোমার বন্ধুর মুখে যদি তোমার কারণে হাসি ফোটে, তাহলে মন্দ কী?

হেমন্ত খেটে খাওয়া মানুষের ঋতু। হেমন্ত ফসলের, আনন্দের, বিরতির ঋতু। হেমন্ত অপরূপা সুন্দরী। ঋতুকন্যার প্রেমে হাবুডুবু খায় প্রকৃতি। হেমন্তে বাংলার ঘরে ঘরে আশ্বিনের ভাত কার্তিকে খাওয়ার ধুম পড়ে। আশ্বিনের শেষদিন রান্না করা ভাত রাতে পানি দিয়ে রেখে কার্তিকের প্রথমদিনে খাওয়া হয়। এটি গ্রামবাংলার সংস্কৃতি। প্রবাদ আছে, 'আশ্বিনের ভাত কার্তিকে খায়, যেই বর মাঙ্গে সেই বর পায়।' এভাবে স্বাগত জানানো হয় হেমন্তকে।

অনেকে হেমন্তকে হারানোর ঋতু বলেন। কারণ কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে গাছের পাতা ঝরে পড়ে। তাছাড়া হেমন্তের শুরুটা ফসল তোলার মাস। ফলে কৃষকের ঘরে খানিকটা অভাবও থাকে। তাই কার্তিককে 'মঙ্গার মাস' বলা হয়। তবে কার্তিকের শেষদিকে ফসলের মাঠ ধীরে ধীরে হলুদ হতে থাকে। চাষির চোখের স্বপ্ন একেকটি ধানের গোছা পাকা ধানের ভারে যেন নুয়ে পড়ে। তখন প্রকৃতির শোভা অপরূপ সুন্দর দেখায়।

অগ্রহায়ণের প্রথমদিন থেকে ধান কাটার মৌসুম শুরু হয়। তখন গ্রামের ঘরে ঘরে ফসল তোলার আনন্দ দেখা যায়। নতুন ধানের গন্ধে অন্যরকম পরিবেশ। ধানভানার গান ভেসে বেড়ায় বাতাসে। ঢেঁকির তালে মুখর হয় বাড়ির উঠান। নবান্ন আর পিঠাপুলির আনন্দে মাতোয়ারা হয় সবাই। মধুর বাতাস ও সবুজ বন ভিন্ন রূপ ধারণ করে। এভাবেই হেমন্ত আসে, মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়।

সবশেষে কুয়াশার চাদরে ঢাকা বাংলার আরেক ঋতু শীতের দরজা খুলে দিয়ে আসে হেমন্তের বিদায়ের পালা। তাই হেমন্ত বয়ে আনুক আনন্দের বার্তা। বয়ে আনুক শীতের আগমনী গান। মানুষ বাঁচুক হেমন্তের অপার সৌন্দর্য হৃদয়ে মেখে। তোমাদের মনেও হেমন্ত আসুক বারবার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে