এরকম বাক্য নিশ্চয়ই শুনেছেন, 'ব্যবহার কর, নয়তো ক্ষয়ে যাবে' অথবা 'ফেলে রাখলে, মরচে পড়ে'। এ কথাগুলো মানুষের শরীরের জন্য অনেক প্রযোজ্য। আপনি যদি আপনার শরীর ব্যবহার নাও করেন, তবে তার ক্ষয় হবেই। আপনার পেশি হয়ে পড়বে থলথলে, নিস্তেজ ও দুর্বল। আপনার শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন হার্ট, ফুসফুস, লিভার এগুলো ঠিকঠাক মতো কাজ করবে না। আপনার শরীরের জয়েন্টগুলো হয়ে পড়বে অনমনীয়। বলা হয়ে থাকে, নিষ্ক্রিয়তা বা শরীর কাজে না লাগানো অনেকটা ধূমপানের মতোই তীব্র ক্ষতিকর। তাহলে এটা জানাও জরুরি যে, কী কী কারণে ব্যায়াম এত গুরুত্বপূর্ণ। চলুন দেখে নেয়া যাক :

ব্যায়ামের উপকারিতা

১. রোগ প্রতিরোধ করে

রোগ মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রম্ন। এমন কোনো মানুষ পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া অসম্ভব, যিনি কোনো প্রকার রোগে ভোগেননি। মানুষ হিসেবে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রচেষ্টা হচ্ছে, রোগমুক্ত থাকা। আর এই রোগ প্রতিরোধেই সাহায্য করে ব্যায়াম। নিয়মিত ব্যায়াম খুব প্রয়োজনীয় শারীরিক ফিটনেস ও ভালো স্বাস্থ্যের জন্য। এটা বড় বড় রোগ যেমন হৃদরোগ, ক্যানসার, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিকস ও অন্যান্য রোগ হওয়ার ঝুঁকি কমায়। ব্যায়াম আপনার চেহারার আবেদন বাড়াতে এবং দ্রম্নত বুড়িয়ে যাওয়া ঠেকাতে সাহায্য করবে। তাই সুস্থ থাকতে ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই।

নিরাপদ মাতৃত্ব : গর্ভবতী মায়ের বিপদ চিহ্ন ও প্রতিরোধে করণীয়

২. সহনশীলতা বাড়ায়

এটি মানসিক শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। আপনি যখন ব্যায়াম করেন, তখন আপনার শরীর শক্তি ব্যয় করে। আপনার শরীর যদি স্থূল, চর্বিযুক্ত ও কায়িক পরিশ্রমহীন হয়ে থাকে, তাহলে আপনি অল্প শারীরিক শ্রমেই অধিক ক্লান্ত হয়ে পড়বেন। আপনি যখন নিয়মিত ব্যায়াম করবেন, তখন কম ক্লান্তিতেই অধিক পরিমাণে কাজ করতে পারবেন। ভয় পাওয়া কঠিন কাজটিও দেখবেন, এক তুড়িতেই করতে পারছেন।

৩. ব্যায়াম মনকে চাঙা করে

ব্যায়ামের মাধ্যমে নানা রকম রাসায়নিক পদার্থ মস্তিষ্ক হতে নির্গত হয়। এসব রাসায়নিক উপাদান চিত্ত প্রফুলস্ন করে এবং শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তির পাশাপাশি চেহারায় লাবণ্য ও উজ্জ্বল্য বাড়ায়। যিনি নিয়মিত ব্যায়াম করেন তাকে বিষণ্ন্নতা কিংবা হতাশা সহজে গ্রাস করতে পারে না।

৪. ওজন নিয়ন্ত্রণ করে

সুস্থ থাকার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো শরীরের বাড়তি ওজন ও মেদ ঝরিয়ে ফেলা। কিন্তু বাড়তি ওজন কমাতে ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই। শারীরিক চর্চা করলে ক্যালোরি খরচ হয়। এভাবে আমরা যতই ব্যায়াম করব ততই আমাদের ক্যালোরি খরচ হবে এবং যার ফলে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

৫. শরীরের নমনীয়তা বাড়ায়

আমাদের শরীরকে ফ্লেক্সিবল (ঋষবীরনষব) করতে ব্যায়ামের কোনো জুড়ি নেই। আমাদের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও মাংসপেশি নমনীয় হওয়াটা জরুরি। তাহলে শরীরের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে। ছোটখাটো আঘাতে মচকে বা ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। তাই নিয়মিত ব্যায়াম করুন ও ভালো থাকুন।

৬. ব্যায়াম শরীরকে করে শক্তিশালী

মাংসপেশির গাঁথুনি যার যত ভালো, সে ততো বেশি শক্তিশালী। ব্যায়াম প্রতিটি পেশিকে আলাদা আলাদাভাবে গড়ে তোলে। পুরো ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে আপনার ওপর। কারণ আপনি ঠিক যেভাবে আপানার পেশিকে শক্তিশালী করতে চান, সেভাবেই করতে পারবেন।

৭. কর্মস্পৃহা বাড়ায়

আপনি যদি শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ না থাকেন, তাহলে কাজের প্রতি আপনার অনীহা তৈরি হবেই। ব্যায়ামের ফলে আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে অতিরিক্ত অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবারাহ হয়। এর ফলে সমস্ত শরীরে একটি সুস্থ প্রাণস্পন্দন ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। এটা আমাদের কর্মস্পৃহা বাড়ায়।

৮. যৌন জীবনের জন্য উপকারী

দাম্পত্য জীবনে যৌন সুখ পুরো সংসার জীবনেই প্রভাব পড়ে। যাদের যৌন জীবনে জড়তা কিংবা অনাগ্রহ এসেছে, তাদের জন্য ব্যায়াম অত্যন্ত উপকারী। নিয়মিত ব্যায়াম করলে যৌনস্পৃহা বাড়ে, যৌন মিলনের স্থায়ীত্বকাল বৃদ্ধি পায় এবং দাম্পত্য জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে।

৯. সুনিদ্রায় সহায়ক

আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন যে, আপনি যখন ক্লান্ত থাকেন, তখন খুব গাঢ় ও গভীর ঘুম হয়। তাই যাদের ঘুমের সমস্যা আছে তাদের জন্য ব্যায়াম অত্যন্ত উপকারী। ব্যায়াম অনিদ্রা দূর করে, অতি নিদ্রা হ্রাস করে। অবশ্য একেবারে ঘুমানোর আগে ব্যায়াম করা উচিত নয়। কারণ ব্যায়ামের পরে মানসিক চাঙাভাবের কারণে ঘুম আসা বিলম্বিত হতে পারে। তাই নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিত ব্যায়াম করুন।

সার্বিক জীবন ব্যবস্থার উন্নয়নে ব্যায়ামের রয়েছে অপরিসীম ভূমিকা। এতদিন তো হেলাফেলায় জীবন কাটালেন। আজ থেকেই শুরু করুন না! দেখবেন আপনার জীবনটা নিজের হাতের মুঠোয় রাখতে পারছেন।