সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

আদালতের আদেশ উপেক্ষা করায় তিন পুলিশ কর্মকর্তার বেতন বন্ধের নির্দেশ

বিচারিক আদালতে সাক্ষীর জন্য মামলা থাকলেও অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা ১১ থেকে ২২ কার্যদিবস আদালতের আদেশ কপি পেয়েও হাজির না হওয়ায় বিচারক ক্ষোভ প্রকাশ করেন- যা আদালত অবমাননার শামিল মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৩য় আদালতের বিচারক মো. মজনু মিয়া এ আদেশ দেন।
আইন ও বিচার ডেস্ক
  ১৭ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

আদালতের আদেশ উপেক্ষা করায় কুড়িগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তিন পুলিশ কর্মকর্তার বেতন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে পরবর্তী তারিখে সশরীরে হাজির হয়ে কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

বিচারিক আদালতে সাক্ষীর জন্য মামলা থাকলেও অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা ১১ থেকে ২২ কার্যদিবস আদালতের আদেশ কপি পেয়েও হাজির না হওয়ায় বিচারক ক্ষোভ প্রকাশ করেন- যা আদালত অবমাননার শামিল মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৩য় আদালতের বিচারক মো. মজনু মিয়া এ আদেশ দেন।

কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রুহুল আমিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আদালতের পৃথক তিনটি আদেশ মঙ্গলবার পেয়েছেন। এ ব্যাপারে আইনানুগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ সংক্রান্ত আদেশের কপি ডিআইজি রংপুর, পুলিশ সুপার কুড়িগ্রাম এবং সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জকে প্রেরণ করা হয়। আদেশের কপি পাঠানো হয় অভিযুক্ত তিন পুলিশ কর্মকর্তা বরাবর।

জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৩য় আদালতের পেশকার লিয়াকত আলী বলেন, রাজিবপুর থানার মামলায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৩য় আদালত থেকে (বিচারিক আদালত) তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজিবপুর থানার এসআই মো. আবু বক্কর সিদ্দিককে হাজির হয়ে সাক্ষ্য দিতে সমন ইসু্য করা হয় কিন্তু তিনি হাজির হননি। শুধু তাই নয়, বিচারিক আদালত থেকে পর্যায়ক্রমে ২২টি ধার্য তারিখ ইসু্য করা হলেও তিনি হাজির না হয়ে আদালত অবমাননা করেছেন। এ মামলার এসআই মো. আবু বক্কর সিদ্দিককে আগামী ১৩ ফেব্রম্নয়ারি সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে কারণ দর্শানোর জবাব দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রাজারহাট থানার একটি মামলার এজাহারকারী এসআই তসির উদ্দিন মামলায় সাক্ষী দিতে আসেননি ১১ ধার্য তারিখে। তাকে সশরীরে শোকজের জবাবসহ সাক্ষী দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আগামী ১৩ ফেব্রম্নয়ারি।

অপর মামলায় রাজারহাট থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. আশেদুজ্জামান বিচারিক আদালতে বিচারকের নির্দেশ উপেক্ষা করে গত ১৯ ধার্য তারিখে অনুপস্থিত ছিলেন। তাকে আগামী ১৪ ফেব্রম্নয়ারি সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব এবং মামলার সাক্ষী দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

রাজারহাট থানার মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী জিন্নাত আরা পারুল বলেন, এটি মাদক মামলা। আসামি ২ জন হায়বর ও বিপস্নব। মাদকের পরিমাণ ৫০ গ্রাম করে ১০০ গ্রাম গাঁজা রাখার অভিযোগ। প্রায় চার বছর ধরে মামলা চলছে। আসামিরা নিয়মিত হাজিরা দিলেও রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী না দেওয়ায় ন্যায়বিচার মিলছে না। আদালত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় এবং হয়রানি বন্ধে সাহসী আদেশ দিয়েছেন।

কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এস এম আব্রাহাম লিংকন বলেন, আদালতের এ আদেশের ফলে আগামীতে সব সরকারি দপ্তরের সাক্ষীদের অনুপস্থিতি হ্রাস পাবে- যা মামলা নিষ্পত্তিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ইচ্ছাকৃত অনুপস্থিতি রহিত হবে। বিভিন্ন মামলায় সাক্ষী দেওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পবিত্র দায়িত্ব। তা না হলে ব্যাহত হয় বিচার কার্যক্রম। হয়রানির শিকার হবে বিচার প্রার্থী। সময় নষ্ট হবে বিচার বিভাগের। অর্থের অপচয় ঘটে রাষ্ট্রের। এসব কারণেই মামলার জট ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে