জমকালো পিঠা উৎসব

বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অন্যতম অনুষঙ্গ পিঠা। শীত আসলেই চলে পিঠা খাওয়ার ধুম। তাইতো বছর শুরুর মাস জানুয়ারির ১৩ তারিখে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে চতুর্থবারের মতো আয়োজিত হয় জমকালো পিঠা উৎসব। এতে ২৬টি স্টলের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী। এর মধ্যে শ্রেষ্ঠ স্টলের তকমা অর্জন করে বাংলা বিভাগের স্টলটি।

গবিসাসের ১০ম বর্ষপূর্তি

বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি-গবিসাস। ক্যাম্পাসের পুরনো ও আলোচিত এ সংগঠনটির ১০ বছর পূর্ণ হয় ১৩ ফেব্রম্নয়ারি। এ উপলক্ষে সাংবাদিকদের আয়োজন কাঁপিয়ে দিয়ে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। নতুন প্রজন্মের পরিচিত ও বিদ্রোহী ব্যান্ড তাবিবের সঙ্গে গালিবয় খ্যাত রানার পারফর্ম এবং তৃতীয় লিঙ্গের নিরাপত্তারক্ষীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা জাগিয়ে তুলে পুরো ক্যাম্পাসকে।

ছোটগল্পের সেকাল ও একাল

ক্যান্টিন সংকট

ভাষার মাস শেষ হওয়ার ঠিক এক দিন আগেই ক্যাম্পাসে দানা বাঁধে স্বাস্থ্যকর ও সুলভমূল্যে খাদ্য সরবরাহের আন্দোলন। বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রার ২৫ বছরেও মানসম্মত ক্যান্টিন না থাকায় ৯ দফা দাবি নিয়ে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেন শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে দফায় দফায় আন্দোলন হলেও এখনো সুরাহা হয়নি এই সমস্যার। এ নিয়ে সংবাদ প্রচার ও গুজবের শিকার হয়ে প্রশাসনের হুমকি ও হয়রানির মুখোমুখিও হয় সাংবাদিক সংগঠন গবিসাস।

পরীক্ষা পেছানোর আন্দোলন

প্রতিরোধের মাস মার্চ। বছরটিতে গবিতেও যেন ছিল উত্তাল মার্চ। শুরুতে মার্চের ৬ তারিখ একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৬ মাস মেয়াদি সেমিস্টার পূর্ণ না হওয়ার পরেও প্রশাসনের পরীক্ষার সিদ্ধান্ত এবং রমজান মাসে পরীক্ষা দিতে শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি থেকে শুরু হয় ক্লাস বর্জন। ধীরে ধীরে আন্দোলন জোরালো হতে থাকে। মূল ফটক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করার এক পর্যায়ে জরুরি সভায় দাবি মেনে নিয়ে পরীক্ষা পেছাতে বাধ্য হয় গবি কর্তৃপক্ষ।

যাত্রী হয়রানির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ

অনিয়ন্ত্রিত ভাড়া ও সব রুটে সিএনজি ও অটোচালকদের যেতে অসম্মতির প্রতিবাদে মূল ফটকে অটোরিকশা আটকে দুই দফা দাবিতে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ক্যাম্পাসের সব শিক্ষার্থী। এ সময় তারা ন্যায্য ভাড়া আদায়ের একটি চার্টও তৈরি করে দেন। পরে তাদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে স্থানীয় চেয়ারম্যান ঐ চার্ট অনুযায়ী ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করে দেন। দাবি মেনে নেয় ঐ রুটে যান চলাচলকারী চালকও।

ডা. জাফরুলস্নাহ চৌধুরীর লোকান্তরপ্রাপ্তি

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং ট্রাস্টি ডা. জাফরুলস্নাহ চৌধুরী পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যান ১১ এপ্রিল। তার মৃতু্যতে শোকের ছায়া নেমে আসে পুরো ক্যাম্পাসে। স্তব্ধ হয়ে পড়ে গোটা বাংলা। আদর্শের তালিকায় অন্যতম নাম এবং নীতির প্রশ্নে আপোষহীন, মুক্তিযুদ্ধের লড়াকু সৈনিক অনেক কিছু চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেছেন? তার স্বপ্নের অনেক কাজ অসমাপ্ত থেকে গেলেও সে কাজ পূরণ করতে একতাবদ্ধ হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। তাকে স্বাস্থ্যহিরো হিসবেও উলেস্নখ করা হয়। কেননা তিনি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র নামক স্বাস্থ্য বিষয়ক এনজিওর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৮২ সালে প্রবর্তিত বাংলাদেশের 'জাতীয় ঔষধ নীতি' প্রণয়নকারী। মুক্তিযুদ্ধে তার তৈরি ফিল্ড হাসপাতাল রণাঙ্গনের অনেক সৈনিককে জীবনদান ও পুনর্বাসনে সহায়তা করেছে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সূচনা ভবন সংলগ্ন গণস্বাস্থ্যের সাবেক কর্মী শহীদ নিজাম ও শহীদ তাহেরের কবরের পাশে স্যারকে দাফন করা হয়।

উপাচার্য নিয়োগ

শোকের মধ্যেই আনন্দের দিশারি। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের চাওয়া ও আন্দোলনের ফসল বৈধ উপাচার্য নিয়োগ পায় ডা. জাফরুলস্নাহ চৌধুরীর মৃতু্যর দিনেই। এ যেন একদিকে উজ্জ্বল আলো অন্যদিকে অন্ধকার। তবে যা উজ্জ্বল হিসেবে ধরে নিয়েছিল শিক্ষার্থীরা তার উজ্জ্বলতা এখনো দেখতে পারেনি প্রায় ১ সহস্রাধিক আশাবাদী। আশ্বাসেই আটকে গেছে কালো গাউন আর মূল সার্টিফিকেট অর্জনের পথ। সমাবর্তনের ১০ বছর ধরে অপেক্ষাকৃত শিক্ষার্থীদের সমাবর্তনের চাওয়া অধরাই থেকে গেছে।

বিদেশে ইন্টার্নশিপে শিক্ষার্থীরা

শোকের মাসের শেষ দিকেই ঘটে এক চমকপ্রদ ঘটনা। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইন্টার্নশিপের জন্য নেপাল যাত্রা করেন ভেটেরিনারি অ্যান্ড আ্যনিমেল সাইন্সেস অনুষদের ৫ম ব্যাচের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। ২৯ এপ্রিল নেপালের খ্যাতনামা ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ দিনের ইন্টার্নির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ জন শিক্ষার্থী।

ফেসবুক পেইজ হ্যাকড

মে মাসের ৬ তারিখে ঘটে অপ্রীতিকর এক ঘটনা। হ্যাকিংয়ের শিকার হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ। ঐ পেইজ থেকে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন অশ্লীলতা পোস্ট ও ভিডিও। দায়িত্বপ্রাপ্ত অ্যাডমিনরা একাধিকবার চেষ্টা করেও পেজের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেননি। পরবর্তীতে আশুলিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে এবং সাইবার সিকিউরিটি বিভাগ এবং ফেসবুকে জানানো হয়েছে। এবং পেইজটি এড়িয়ে চলতে অনুরোধ করে কর্তৃপক্ষ।

পরিবেশ রক্ষায় ডাস্টবিন স্থাপন

শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ডাস্টবিন স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে প্রশাসন। পরবর্তীতে ৭ জুন ২০টির মতো পরিবেশবান্ধব ডাস্টবিন স্থাপনের চিত্র দেখা যায় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে।

কৃষি অনুষদের অনুমোদন

বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম এক প্রাপ্তির নাম নতুন অনুষদের সংযোজন। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে নতুন আরও একটি অনুষদ হিসেবে ১৫ জুন কৃষি অনুষদ চালুর অনুমোদন পায় বিশ্ববিদ্যালয়। বছরের জুলাই সেশনে সর্বোচ্চ ৩৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তির শর্তসাপেক্ষে এই অনুমোদন পায় কর্তৃপক্ষ, যা বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও সমৃদ্ধি করে।

তথ্য-প্রযুক্তি ও কৃষি খাতে উদ্ভাবনী প্রজেক্ট

আধুনিক প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান উন্নতির সাথে তাল মিলিয়ে আবারও চমক দেখায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ১৭ জুলাই ২৮তম ব্যাচের স্নাতক শ্রেণির ফাইনাল প্রজেক্ট ডিফেন্সে তিনটি চমকপ্রদ উদ্ভাবনী প্রজেক্ট তৈরি করে তাক লাগিয়ে দেন তারা। তাদের উদ্ভাবনগুলো হলো- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় রচিত লেখা শনাক্তকরণ অ্যাপ, ছাদ কৃষি বিষয়ক মোবাইল অ্যাপ ও বিনিয়োগ সহযোগী ওয়েবসাইট।

আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের শিরোপা

\হ

প্রতি বছরের মতো শেষের বছরেও গণ বিশ্ববিদ্যালয় অংশগ্রহণ করে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় চ্যাম্পিয়নশিপে। জুলাই মাসে আয়োজিত ইস্পাহানি প্রথম আলো আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টে ৩২ দলের লড়াইয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ৩২ একরের এই ক্যাম্পাস।

ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ

ফিলিস্তানের গাজায় ইসরাইলের হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে অক্টোবর মাসের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ফিলিস্তানের সাধারণ মানুষের হত্যা নিপীড়নের দ্রম্নত বিচার চেয়ে তারা এ প্রতিবাদ মিছিল করেন।

শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহণ সেবা

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে বাসের দাবি জানিয়ে আসছে। অবশেষে যেন ২৫ বছরের দাবি পূরণের দিন এসে গেল। বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি বহরে যুক্ত হচ্ছে নতুন দু'টি বাস। পুরাতন বাস থেকে দু'টি বাস দেওয়া হবে শিক্ষার্থীদের জন্য। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য ড. আবুল হোসেন জানান, 'বাসের সুবিধা পেতে অবশ্যই বিভাগীয় প্রধান বরাবর বাস চাহিদাপত্রের ফরম পূরণ করে নিশ্চিত করতে হবে।'