শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বেগম রোকেয়া এবং নারীর ক্ষমতায়ন

মুসলিম নারী জাগরণের অগ্রদূত এবং প্রথম বাঙালি নারীবাদী প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, সাহিত্যিক ও সমাজসংস্কারক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ২০০৪ খ্রি. বাঙালি জরিপে বেগম রোকেয়া ষষ্ঠতম নির্বাচিত হয়েছিলেন। বেগম রোকেয়া নারীদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে আহ্বান জানিয়েছেন। নারী সমাজের মধ্যে বিরাজমান সব ধরনের বিভ্রান্তি ও আশঙ্কা দূর করে নারীদের সব প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করার শক্তিতে উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্য সামনে রেখে ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবস উদ্‌যাপন করা হয় দেশব্যাপী।
আরেফা বেগম
  ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০

আলস্নাহ পাকের অপূর্ব সৃষ্টি আদম ও হাওয়া। তারই ধারাবাহিকতায় এই বিশ্বমন্ডলে সৃষ্টি হয়েছে হযরত বিবি ফাতেমা (রা.), বিবি আয়েশা (রা.), বিবি খাদিজা (রা.), হযরত রাবেয়া বসরি ও মা হালেমা (রা.)সহ অনেক মহীয়সী নারী। উলিস্নখিত, মহীয়সী নারীরা যুগে যুগে পর্দার মধ্যে থেকে তারা ধর্মীয় কাজ থেকে শুরু করে নারীদের মর্যাদা রক্ষায় কাজ করে গেছেন। বিশ্বের অন্যতম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নারীদের অবস্থান পূর্বের চেয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছে। আধুনিক বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীদের অধিকার সংরক্ষণ আলাদা মর্যাদা পেয়েছে। বর্তমানে এগিয়ে যাচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে। দৃশ্যমান নান্দনিক বাংলাদেশও মমতাময়ী। বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন ও সম্ভাবনার স্বাক্ষর রেখেছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। মহাদেশের অন্যতম এগারো রত্নের গুণী ব্যক্তিত্ব মুক্তকেশী দেবী দত্ত। তাছাড়া বাংলার নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার ডাকে সাড়া দিয়েছে ঝাঁকে ঝাঁকে সচেতন নারী। বাংলাদেশের রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় বেগম রোকেয়ার অবস্থান। বাঙালি নারীবাদী লেখিকা ও সমাজসংস্কারক বেগম রোকেয়ার স্বামী সৈয়দ শাখাওয়াত হোসেন, বেগম রোকেয়া মুসলিম নারী জাগরণের অগ্রদূত এবং প্রথম বাঙালি নারীবাদী প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, সাহিত্যিক ও সমাজসংস্কারক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ২০০৪ খ্রি. বাঙালি জরিপে বেগম রোকেয়া ষষ্ঠতম নির্বাচিত হয়েছিলেন। বেগম রোকেয়া নারীদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে আহ্বান জানিয়েছেন। নারী সমাজের মধ্যে বিরাজমান সব ধরনের বিভ্রান্তি ও আশঙ্কা দূর করে নারীদের সব প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করার শক্তিতে উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্য সামনে রেখে ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবস উদ্‌যাপন করা হয় দেশব্যাপী। তারই ধারাবাহিকতায় জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ শীর্ষক আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ পালন করেন ২৫ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। বেগম রোকেয়ার কর্ম, আদর্শ আমাদের অনুপ্রাণিত করবে। তার মধ্যে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সারা চট্টগ্রামে যার বিচরণ ছিল বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। পরবর্তী সময়ে লেখনীর মাধ্যমে চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানের কথা তুলে ধরেছেন প্রাবন্ধিক ও সাহিত্যিক রমা চৌধুরী। এছাড়াও দেশবরেণ্য শিল্পী রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, অভিনেত্রী কবরী সরোয়ার, একুশে পদক উপাধি পেয়েছেন বোয়ালখালী আমুচিয়ার কণ্ঠশিল্পী প্রয়াত শেফালী ঘোষ। ব্যারিস্টার পূর্ণচন্দ্র সেনের পিসি বঙ্গবন্ধু সরকারের উপদেষ্টা বিনিতা রায় ও সাবেক সংরক্ষিত মহিলা এমপি হাসিনা মান্নানসহ আরও অনেক মহীয়সী নারী। বাংলার নারী মুক্তি আন্দোলনের ব্রিটিশবিরোধী শাসন আমল ছিল (১৮৫৭-১৯৪৭) নিষ্পেষিত পাকিস্তান শাসন আমল ১৯৭১ থেকে শুরু হয়ে এই তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। ব্রিটিশ শাসকরা এ দেশের শাসনের নামে প্রায় দুইশ বছর শোষণ করেছে। এই সময় নারী-পুরুষ সবাই ছিল অধিকার বঞ্চিত। নারীর অধিকার আদায়ে কিংবা ক্ষমতায়নে তখন দাবিতে ছিল সোচ্চার। তার ধারাবাহিকতায় আজ তৃণমূলে নারীর ক্ষমতায়নে যা দরকার- দক্ষতা, সুস্থ, সচেতনতা, সম্পদের মালিকানা প্রাপ্ত অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের নিযুক্তি, জ্ঞান, দক্ষতা, নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে একান্ত আবশ্যক। এই লক্ষ্যে তৃণমূল পর্যায়ে নারীকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নেওয়ার জন্য সরকার ১০টি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যথাক্রমে নারীর ক্ষমতায়ন, একটি বাড়ি একটি খামার ও পলস্নী সঞ্চায়ক ব্যাংক, কমিউনিটি ক্লিনিক ও আবাসিক আশ্রয়ণ প্রকল্প, ডিজিটাল বাংলাদেশ, শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচি, ঘরে ঘরে বিদু্যৎ, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, বিনিয়োগ বিকাশ ও পরিবেশ সুরক্ষা। এছাড়া বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃকালীন ভাতা, ভিজিডি-ভিজিপি কার্ড, বয়স্ক ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, কৃষি সহায়তা ট্যাক্সসহ আরও উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড। নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। তৃণমূলে অর্থাৎ স্থানীয় পর্যায়ে নারীর জনপ্রিতিনিধি রাখার বিধানটি আমাদের জন্য প্রশংসনীয়। বলাবাহুল্য, ১৯৯৭ সালে স্থানীয় সরকার আইনে সাধারণ আসনে নারীর প্রার্থী হওয়ার অধিকার অক্ষুণ্ন রেখে প্রতি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচনের বিধান রাখার মধ্য দিয়ে তৃণমূলে নারী ক্ষমতায়নের সুযোগ করে দেওয়া হয়। স্বাধীনতার পর থেকে নারী এক্ষেত্রে ধীরে ধীরে সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ১৯৮৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে সরাসরি ভোটে মাত্র পাঁচজন নারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতো। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী, সংসদ উপনেতা, স্পিকার এবং সংসদের বাইরে থাকা নেত্রী প্রত্যেকেই নারী। জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে ৫০টিতে নারী রয়েছে। বর্তমানে বিচারপতি, সচিব, ডেপুটি গভর্নর, সেনাবাহিনী সামাজিক নিরাপত্তার জাল বিস্তারে নারীরা কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে সংরক্ষিত মহিলা আসনে ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউপি সদস্য ও উপজেলা পর্যায়ে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, জেলা পর্যায়ে জেলা পরিষদের সদস্যাসহ আরও বিভিন্ন পদে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে নারীরা প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছে। আসুন, আমরা সবার প্রচেষ্টায় দেশ মাতৃকার উন্নয়নে কাজ করি এবং নারীর ক্ষমতায়নে ঐক্যবদ্ধ হই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে