শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে এইডস শনাক্তের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছেনা 

মোঃ হাসান মোল্লা
  ১৫ মার্চ ২০২৩, ২১:৪৫

বাংলাদেশে এইডস আক্রান্ত অনুমানিক ১৪ হাজার রোগীর মধ্যে ৩৭ শতাংশ এখনো শনাক্তের বাইরে। শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে চিকিৎসার বাইরে রয়েছে ২৩ শতাংশ রোগী। শনাক্ত ও চিকিৎসার বাইরে থাকা রোগীদের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে এইডস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুসারে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে এইচআইভি বা এইডস রোগ নির্মূলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তা অর্জনে এখন পর্যন্ত ৯৫ শতাংশ এইডস রোগী শনাক্ত করতে পারার কথা। কিন্তু বাংলাদেশ মাত্র ৬৩ শতাংশ রোগী শনাক্ত করতে পেরেছে।

এসডিজির শর্ত ৩.১ অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব থেকে এইডস নির্মূলে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জাতিসংঘের দেয়া দ্বিতীয় স্ট্র্যাটেজি গ্রহণ করা হয়েছে, যা ৯৫-৯৫-৯৫ নামে পরিচিত। প্রথমে ২০৩০ সালের মধ্যে ৯৫ শতাংশ এইচআইভি আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করতে হবে। দ্বিতীয়ত এসব রোগীর সবাইকে আনতে হবে চিকিৎসার আওতায়। তৃতীয়ত, যেহেতু এইচআইভির এখনো পরিপূর্ণ কোনো চিকিৎসা আবিষ্কার হয়নি, তাই ৯৫ শতাংশ চিকিৎসারত ব্যক্তির রক্তে ভাইরাসের মাত্রা রাখতে হবে নিয়ন্ত্রিত।

সরকারের এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রামের তথ্য বলছে, প্রথম ৯৫ শতাংশ রোগী শনাক্তের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সাফল্য অর্জন হয়েছে মাত্র ৬৩ শতাংশ। দ্বিতীয় লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সাফল্য অর্জন হয়েছে ৭৬ শতাংশ। তৃতীয় লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সাফল্য ৯৩ শতাংশ।

২০২১ সালে দ্য গ্লোবাল ফান্ডের আর্থিক সহায়তায় দেশের ৫টি হাসপাতালে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর এইচআইভি সেবাকেন্দ্র চালু করা হয়। এর আওতায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল, পাবনা জেনারেল হাসপাতাল, সিরাজগঞ্জের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতাল, যশোর জেনারেল হাসপাতাল এবং বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর এইচআইভি প্রতিরোধ সেবা, এআরটি, ওএসটিসহ অন্যান্য সেবা দেওয়া হচ্ছে।

গত ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব হাসপাতালে এইচআইভি পরীক্ষা করা হয়েছে ৪৪৫ জনের। এর মধ্যে ৪১ জন এইচআইভি পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। যাদের বেশির ভাগই শিরায় মাদক গ্রহণকারী।

এইডস নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দিকনির্দেশনায় কাজ করছে সরকার।

জানা গেছে, দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে মাত্র ২৩টিতে এইচআইভি শনাক্তের সুবিধা রয়েছে। বাকি ৪১ জেলায় এখনো এই সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া বিদেশফেরতদের এইচআইভি পরীক্ষা বাধ্যতামূলক না হওয়ায়ও অনেক রোগী শনাক্তের বাইরে থেকে যাচ্ছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি নজরদারি করেছে। এতে দেখা গেছে, যৌনকর্মী, শিরায় মাদক গ্রহণকারী, সমকামী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের হার ১.৪ শতাংশ। এর মধ্যে শিরায় মাদক গ্রহণকারীদের মধ্যে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া পুরুষ যৌনকর্মী/সমকামীদের মধ্যে এইআইভি সংক্রমণের হার বেড়েছে প্রায় ২ শতাংশ।

ইউএনএইডসের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৫৯ সালে প্রথম বেলজিয়ান কঙ্গোর কিনশাসায় মারা যাওয়া এক ব্যক্তির রক্তের নমুনায় এইচআইভি শনাক্ত হয়। এরপর থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বে প্রায় ৪ কোটি মানুষ এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। বাংলাদেশে প্রথম ১৯৮৯ সালে এইচআইভি আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে মোট রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার। এর মধ্যে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৮ হাজার ৭৩২ জনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। শনাক্তদের মধ্যে ৭৬ শতাংশ সরকারি ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসার আওতায় রয়েছেন। যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে