বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

সরঞ্জামের অভাবে ৬ বছর ধরে আজমিরীগঞ্জে সিজারিয়ান বন্ধ

মোঃ আবু হেনা, আজমিরীগঞ্জ (হবিগঞ্জ)
  ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:৩১
সরঞ্জামের অভাবে ৬ বছর ধরে আজমিরীগঞ্জে সিজারিয়ান বন্ধ

আজমিরীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না এ উপজেলার লোকজন। দীর্ঘদিন ধরে গাইনি বিভাগে চিকিৎসক না থাকায় জরুরী প্রসূতিরা সেবা থেকে বঞ্ছিত হচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- হাওরবাসী প্রসূতিরা সরকারি হাসপাতালের - সেবা পাচ্ছেন না। হাসপাতালের গাইনী বিভাগ চলছে বিশেষজ্ঞ ছাড়াই। প্রায় ছয় বছর ধরে সিজারিয়ান কার্যক্রম বন্ধ। নরমাল ডেলিভারীতেও অন্য অঞ্চলের তুলনায় এ উপজেলা হাসপাতাল পিছিয়ে আছে। অব্যবহৃত থাকায় যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয়ভাবে পর্যাপ্ত সেবা না থাকায় চিকিৎসা সেবা নিতে আসা গর্ভবর্তী নারীরা সামান্য জটিলতা নিয়েই জেলা সদর হাসপাতালে যাচ্ছেন। পুরো উপজেলার লোকজন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। যেতে-আসতেও দুর্ঘটনার শঙ্কা থাকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৫ সালের শেষ দিকে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনী বিভাগে একজন জুনিয়র কনসালটেন্ট যোগ দেন। এরপর তিনি অনিয়মিতভাবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকলেও গর্ভবতী প্রসূতি মায়েরা কিছুটা সেবা পেতে থাকেন। তবে ২০১৮ সালের শুরুতে তিনি বদলি হয়ে চলে যাওয়ার পর আরও কোন চিকিৎসক এই পদে আসেননি।

হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানান, এখানে ২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ সিজার করা হয়েছিল। এরপর চিকিৎসক সংকটে আর কোনো সিজারিয়ান অপারেশন হয়নি। হাসপাতালে সব ব্যবস্থা থাকলেও এ সেবা থেকে হাওরাঞ্চলের লোকজন বঞ্চিত হচ্ছেন।

আজমিরীগঞ্জের পাঁচ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় জনসংখ্যা আড়াই লাখের বেশি। তাঁদের সরকারি চিকিৎসা সেবার একমাত্র মাধ্যম ৩১ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নতি করা হলেও এখনও কার্যক্রম চালু করা হয়নি। ১৪ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন ১১ জন। অতি গুরুত্বপূর্ণ জুনিয়র কনসালটেন্ট গাইনী, জুনিয়র কনসালটেন্ট অ্যানেসথেসিওলজি ও জুনিয়র কনসালটেন্ট ডেন্টিস্ট পদে কোন চিকিৎসক নেই।

রোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হাসপাতালে কয়েকজন সিনিয়র নার্স থাকায় কিছু প্রসূতি মা সেবা পেলেও সামান্য জটিলতা দেখা দিলেই তাদের জেলার হাসপাতালে পাঠানো হয়। তখন নিরুপায় হয়ে জেলা সদর হাসপাতাল অথবা কোন বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়। সেখানে তাঁদের মোটা অংকের টাকা ব্যয় করতে হয়।

কয়েকজন বলেন, যদি আজমিরীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে সিজার কার্যক্রম চালু থাকতো তাহলে স্বল্প খরচে সিজার করানো যেত। সরকারের উচিত এ সেবাটি নিশ্চিত করা।

কয়েকদিন আগে দিপা রাণী দাস নামে এক প্রসূতির প্রসব ব্যাথা শুরু হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। সেখানে থাকা নার্স ও ডাঃ তাকে আল্ট্রাসনোগ্রাম করার পরামর্শ দেন। পরে ডাক্তারের পরামর্শে তাঁরা একটি স্থানীয় বেসরকারি ক্লিনিকে গিয়ে আল্ট্রাসনোগ্রাম করান। পরে ১৬ হাজার টাকার বিনিময়ে সেখানেই সিজারিয়ান অপারেশন করানো হয়।

হাসপাতালে আসা সমর আলী মিয়া বলেন, "কিছুদিন আগে আমার ছেলের বউকে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে সিজার করিয়েছি। সেখানে আমাদের নবজাতকের শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক হবিগঞ্জ পাঠিয়ে দেন। জেলা শহরে আসা-যাওয়াসহ সবকিছু মিলিয়ে অর্ধ লাখ টাকা ব্যয় হয়। এ টাকাগুলো আমাকে ধার করে আনতে হচ্ছে।

একই কারণে নানাভাবে সমস্যার সম্মুখীন হওয়া লোকজন হাওরবাসীর এটুকু সেবা নিশ্চিতের জন্য আজমিরীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন গাইনী বিশেষজ্ঞ নিয়োগের আবেদন জানাচ্ছেন।

আজমিরীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ ইকবাল হোসেন বলেন, চিকিৎসক সংকটের পাশাপাশি সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য কিছু সরঞ্জামেরও সংকট রয়েছে। দ্রুত এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে