ভারত, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়াসহ এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশে মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে কোভিড সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ভাইরাসটির নতুন আরও সংক্রামক ধরন ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
ভারতে বর্তমানে কোভিড আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫ হাজার ৭০০ এর বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় এই ভাইরাস সংক্রমণে চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা এখনও তুলনামূলকভাবে কম হলেও ভারত সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জনগণকে সতর্ক থাকা, উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত পরীক্ষা করা এবং জনসমাগম এলাকায় মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে। বাংলাদেশে রোববার ৪ জন রোগীর নমুনা পরীক্ষা করে এদের মধ্যে ৩ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। একদিনের ব্যবধানে সোমবার করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দুইজন বেড়ে ৫ জনে এসে দাঁড়িয়েছে। করোনায় এরইমধ্যে একজনের মৃতু্্যও হয়েছে।
দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের বরাত দিয়ে ‘দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট’ পত্রিকা জানায়, ২০২৫ সালে থাইল্যান্ডে এ পর্যন্ত কোভিডে মারা গেছেন অন্তত ৭০ জন, যাদের বেশিরভাগই বড় শহরের বাসিন্দা। জনসংখ্যা অনুপাতে মৃত্যুর হার প্রতি ১ লাখে ০ দশমিক ১০৬। যা থেকে বোঝা যায়, ভাইরাসটি এখনও আগের মত প্রাণঘাতী হয়ে ওঠেনি।
ওদিকে, ইন্দোনেশিয়ায় কোভিড সংক্রমণ বাড়তে থাকায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সব হাসপাতালে নজরদারি জোরদারের নির্দেশ দিয়েছে। নতুন ধরনগুলো আগের তুলনায় বেশি সংক্রামক হলেও তুলনামূলকভাবে কম প্রাণঘাতী বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
“সংক্রমণ বাড়ছে ঠিকই, তবে যে ধরনগুলোর কারণে বাড়ছে সেগুলো অপেক্ষাকৃত কম প্রাণঘাতী,” বলেন ইন্দোনেশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বুদি গুনাদি সাদিকিন।
স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, ওমিক্রনের উপধরন এলএফ.৭ এবং এনবি.১.৮.১ এশিয়ায় কোভিড সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার জন্য দায়ী বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনও এই ধরনগুলোকে ‘ভয়ের ধরন’ হিসেবে ঘোষণা করেনি, তবে এগুলোকেই সাম্প্রতিক সংক্রমণের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
এনবি.১.৮.১ উপধরন এর আগে থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে শনাক্ত হয়েছিল। এটি করোনাভাইরাসের দুটি ধরনের মিলন ঘটে তৈরি হওয়া একটি পুনর্গঠিত ভাইরাস।
অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরাসবিদ লারা হেরেরো বলেন, এনবি.১.৮.১ অন্যান্য ধরনের চেয়ে বেশি ছড়ায় বলেই তার ধারণা।
ল্যাবরেটরিতে কৃত্রিম টিস্যুতে পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই ধরন মানব শরীরের কোষে প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় ‘এসিই-২’ রিসেপ্টরের সঙ্গে সবচেয়ে শক্তভাবে আবদ্ধ হতে পারে।
“গবেষণাগারে পাওয়া তথ্য বলছে, এনবি.১.৮.১- এ পর্যন্ত পরীক্ষা করা সব ধরনের মধ্যে এসিই-২ রিসেপ্টরের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি বন্ধন তৈরি করতে পারে—যা এটিকে কোষে ঢুকে পড়ার ক্ষেত্রে আরও কার্যকরী করে তোলে,” লিখেছেন হেরেরো।
নতুন ধরনের আক্রান্তদের মধ্যে ক্লান্তি, গলা ব্যথা, নাক বন্ধ এবং হজমে অস্বস্তির উপসর্গ বেশি দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বর্তমানে ব্যবহৃত টিকাগুলো নতুন ধরণের কারণে সৃষ্ট গুরুতর উপসর্গ থেকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম।
ভারতে অবশ্য এখনও নতুন সংক্রমণের অর্ধেকের বেশি পুরোনো জেএন.১ ধরন থেকেই হচ্ছে বলে জানিয়েছে দেশটির সার্স-কোভ-২ জিনোমিক্স কনসোর্টিয়াম।
সংক্রমিত অধিকাংশ মানুষের উপসর্গ হালকা, যা সাধারণ ওষুধ—যেমন কাশির সিরাপ, ব্যথানাশক বা ডিকনজেস্টেন্ট—দিয়ে নিয়ন্ত্রণে আসছে। তবে বয়স্ক ব্যক্তি কিংবা অন্য অসুস্থতায় ভোগা ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের উপসর্গ দেখা দিলে হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
যাদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, শরীর ভীষণ দুর্বল লাগছে বা অক্সিজেন মাত্রা ৯৫ শতাংশের নিচে নেমে যাচ্ছে- তাদেরকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।