শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

যে কারণে ইসরাইলে ছুটছে ভারতীয়রা

যাযাদি ডেস্ক
  ০৭ মার্চ ২০২৪, ০৯:১১
ছবি: সংগৃহীত

ঘটনাটি গত সোমবারের (৪ মার্চ)। উত্তর ইসরাইলের একটি বাগানে লেবানন থেকে হিজবুল্লাহর ছোড়া ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়ে। তাতে এক ভারতীয় নাগরিক নিহত হয়েছে। দু’জন আহত হয়েছেন। নয়াদিল্লিতে ইসরাইলি দূতাবাস এক্স-এ লিখেছেন, হিজবুল্লাহ ‘মার্গালিওটের উত্তর গ্রামে শান্তিপূর্ণভাবে কৃষিকাজ করা কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। ঘটনার সময় ওই কৃষিশ্রমিকরা বাগানে চাষ করছিল। এই হামলা কাপুরুষোচিত নাশকতা।’ কিন্তু, এখানেই প্রশ্ন উঠছে, কেন ওই ভারতীয় কৃষি শ্রমিকরা ইসরাইলে গিয়েছিল? আর যদি সংঘাত গাজায় হয়, তাহলে উত্তর ইসরাইলের শ্রমিকরা কেন হামলার মুখে পড়ছেন?

ইসরাইলের হিজবুল্লাহ সমস্যা ইসরাইলের উত্তর সীমান্তে রয়েছে লেবানন। বহু বছর ধরে এই সীমান্ত অশান্ত। ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর, দক্ষিণ ইসরাইলে হামাসের হামলার পরদিনই, লেবাননের শিয়া রাজনৈতিক দল হিজবুল্লাহ, ফিলিস্তিনিদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে ইসরাইলে রকেট হামলা চালায়। তারপর থেকে, ইসরাইল প্রায় ১২০ কিলোমিটার সীমান্ত বরাবর বিমান ও কামান হামলা চালিয়েছে। এতে কমপক্ষে ২২ জন সাধারণ নাগরিকসহ ২৪০ জনেরও বেশি লেবাননবাসীর মৃত্যু হয়েছে। এমনটাই দাবি সংবাদ সংস্থা আলজাজিরার।

জাতিসঙ্ঘ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন অনুযায়ী, ৮ অক্টোবর দক্ষিণ লেবানন থেকে ৮৭,০০০-এরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

পালটা চেষ্টা চালাচ্ছে ইসরাইল

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরাইল তার সীমান্ত এবং লেবাননের জনসংখ্যার মধ্যে একটি ‘বাফার স্পেস’ তৈরি করতে চেষ্টা চালাচ্ছে। যাতে হিজবুল্লাহর আক্রমণ থেকে বাঁচা যায়। এরই জেরে সোমবার হিজবুল্লাহ রকেট হামলা চালিয়েছে। এতে এক ভারতীয় নাগরিক প্রাণ হারিয়েছে। আর দুই ভারতীয় নাগরিক গুরুতর আহত হয়েছে। লেবাননের গৃহযুদ্ধের সময় (১৯৭৫-৯০), ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ গড়ে ওঠে। তারা ইসরাইলের বিরোধী। পশ্চিম এশিয়ায় ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চেষ্টা চালাচ্ছে। এর লক্ষ্য অনেকটাই গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের মতই।

ইসরাইলে ভারতীয় শ্রমিকরা কাজ করছে ইসরাইলে জনসংখ্যা কম। সেই চাহিদা মেটাতে তারা শ্রমিকদের আমদানি করে। ৭ অক্টোবরের হামলার আগে, ফিলিস্তিনি এবং আরবরা ইসরাইলে কাজ করত। এর মধ্যে ফিলিস্তিনিদের সংখ্যাই ছিল সবচেয়ে বেশি। শুধুমাত্র ইসরাইলের নির্মাণ শিল্পেই প্রায় ৮০ হাজার ফিলিস্তিনি কাজ করত। কিন্তু, ৭ অক্টোবরের হামলার পর ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের কাজের অনুমতিতে স্থগিতাদেশ দেয়। অন্য বহু বিদেশী কর্মী নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগে ইসরাইল ছেড়ে চলে যায়। এই পরিস্থিতিতে ইসরাইলে ব্যাপক শ্রম ঘাটতি শুরু হয়। যে ঘাটতি এখন ভারতীয়রা পূরণ করছে। ইসরাইল ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ভারতীয়দেরকে নির্মাণ এবং কৃষি খাতে কর্মসংস্থানের ভিসা দেয়া শুরু করে। প্রথম দফা ভিসা ইস্যুর পর, ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় ৮০০ ভারতীয় ইসরাইলে কাজ করতে যান।

এগ্রি ভিসার জন্য ব্যাপক খরচ একটি এগ্রি ভিসা পেতে প্রায় ৪ লাখ রুপি খরচ হয়। তার মধ্যেই এজেন্ট এবং রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর ফি-ও রয়েছে। কেরলের কিছু কর্মী, যারা এখন ইসরাইলে আছেন, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছে যে বর্তমানে ইসরাইলে যারা কাজ করছে, তাদের বেশিভাগই কেরল, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা এবং উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। মৃত ৩১ বছরের প্যাট নিবিন ম্যাক্সওয়েল এবং আহত আরো দুই ভারতীয়, সকলেই কেরলের বাসিন্দা। তারা বাগিচা শ্রমিক হিসেবে ইসরাইলে গিয়েছিল। তবে, ইসরাইলে বর্তমানে কৃষি মরশুম চলে গেছে। ওই কারণে ওই বিভাগে নিয়োগ স্থগিত করা হয়েছে। তবে, অন্যান্য চাকরিতে নিয়োগ চলছে। হাজার হাজার ভারতীয় ওই সব কাজে নিযুক্ত হচ্ছেন।

ইসরাইলে ভারতীয় পরিচর্যা কর্মীরা ইসরাইলে ভারতীয় শ্রমিকদের উপস্থিতি অবশ্য নতুন নয়। মোটামুটি ১৮,০০০ ভারতীয় গত অক্টোবরে সেদেশে কাজ করছিলেন। তারা প্রায় ১৪,০০০ বয়স্ক ইসরাইলিকে দেখভাল করছিলেন। নার্সিং কর্মীরা সেখানে ভালো বেতন পাচ্ছে। তবে, ইসরাইলে কেয়ারগিভার ভিসা পেতে ১০ লাখ রুপি খরচ করতে হয়। পরিচর্যা কর্মীরাও খুব ভালো উপার্জন করে। প্রতিমাসে ১ লাখ রুপিরও বেশি। এর পাশাপাশি তারা বিনামূল্যে খাবার, বাসস্থান এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা পান। পাশাপাশি আছে ওভারটাইমও।

বর্তমান সংঘাতের সময়, পরিচর্যার কাজ সেখানে অনেক বেশি নিরাপদ। কারণ, কর্মীরা বেশিরভাগই উচ্চ-সুরক্ষিত ইসরাইলি শহরগুলোয় থাকেন। আর, কৃষি শ্রমিকদের বেশিরভাগই কাজ করেন লেবানন সীমান্তে। তাই তাদের ওপর হামলার আশঙ্কাও বেশি থাকে। সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

যাযাদি/এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে