বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২

ভারতের হামলায় ধ্বংস মসজিদেই  হাজার হাজার মানুষের নামাজ আদায়

যাযাদি ডেস্ক
  ০৮ মে ২০২৫, ১৩:২১
ভারতের হামলায় ধ্বংস মসজিদেই  হাজার হাজার মানুষের নামাজ আদায়
নামাজের পর মুসল্লিদের প্রচণ্ড বিক্ষোভ

জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলা ঘিরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনা যুদ্ধের রূপ ধারণ করতে চলেছে ইতোমধ্যে।

দুই সপ্তাহ ধরে চলা হুমকি-ধমকির পর এবার বাস্তবিকই পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মীরসহ বেশ কয়েকটি স্থানে বড় ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে দিয়েছে ভারত।

গত মঙ্গলবার (৬ মে) দিবাগত মধ্যরাতে সংঘটিত এ আকস্মিক হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে বেশ কয়েকটি মসজিদও।

সবচেয়ে বড় হামলাটি হয়েছে পাঞ্জাব প্রদেশের বাহাওয়ালপুরের আহমেদপুর শারকিয়ায়। সেখানে একটি মসজিদের আঙিনায় ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলে পাঁচজন নিহত হন, যাদের মধ্যে একটি তিন বছরের শিশুও রয়েছে। এছাড়া মুজাফফরাবাদ, কোটলি, মুরিদকে ও বাঘ এলাকায় হামলায় হতাহতদের খবর পাওয়া গেছে। মুজাফফরাবাদের বিলাল মসজিদেও হামলা চালানো হয়, যেখানে এক শিশু আহত হয়।

তবে, এত বড় হামলার পরও স্থানীয় বাসিন্দাদের মনোবলে ফাটল ধরেনি এতটুকু। যার প্রমাণ, ভারতের হামলা আতঙ্কের মধ্যেও মুরিদকেতে ও মারকাজে ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদেই ফজরের নামাজ আদায় করেছেন শত শত মুসল্লি।

বৃহস্পতিবার (৮ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এদিন পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে হামলা আতঙ্কের মধ্যেই ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদে ফজরের নামাজ আদায় করেছেন স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।

যুদ্ধ পরিস্থিতি বিবেচনায় ভারতীয় সীমান্তের কাছের এলাকাগুলো সম্পূর্ণ ব্ল্যাকআউটের আওতায় থাকা সত্ত্বেও দমে যাননি বাসিন্দারা। পালিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে সংহতি প্রকাশের জন্য ফজরের ওয়াক্তে মারকাজে একত্রিত হয়েছিলেন পুরো এলাকার বাসিন্দারা।

পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত ছিল যে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি মসজিদটি ঘিরে ফেললে প্রায় দাঙ্গা শুরু হয়ে যায়, বাসিন্দাদের সকালের নামাজ পড়তে বাধা দেওয়া হয়।

তবে, স্থানীয়দের চাপের মুখে পুলিশ অবশেষে নতি স্বীকার করে এবং বাসিন্দারা ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদে নামাজ আদায় করেন।

এ ব্যাপারে স্থানীয় নেতা শেখ তামোইর বলেন, ভারত থেকে আসা চারটি ক্ষেপণাস্ত্র আট মিনিটের মধ্যে আমার মাঠের কয়েকশ ফুট দূরে মারকাজ তাইবা, মুরিদকেতে আঘাত করে। প্রথম ক্ষেপণাস্ত্রটি ভূমিকম্পের মতো মাটি কাঁপিয়ে দিয়েছিল এবং নাঙ্গার সাদাইনের গ্রামবাসীদের তাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য করেছিল।

পরে আরও তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে, যার একটির আঘাতে প্রাসাদীয় একটি মসজিদ ভেঙে যায়। এরপরও ঝুঁকি উপেক্ষা করে স্থানীয় বাসিন্দাদের ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদে নামাজ আদায়ের ঘটনা, তাদের দৃঢ় মনোবলেরই প্রমাণ।

প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীরে এটিই সবচেয়ে বড় হামলা। পরোক্ষভাবে পাকিস্তান এ হামলায় জড়িত, এমন অভিযোগ তুলে বুধবার দেশটির সঙ্গে ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে ভারত।

পাশাপাশি আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় দেশটি। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান। স্থগিত করে দেওয়া হয় ভারতের সঙ্গে সবরকম বাণিজ্যও।

এরপর থেকে দুদেশের পাল্টাপাল্টি হুমকি-ধমকিতে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠতে শুরু করে পরিস্থিতি, রীতিমতো যুদ্ধের রূপ ধারণ করেছে যা এখন।

গত মঙ্গলবার (৬ মে) মধ্যরাতে পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মিরের অন্তত ৯টি স্থানে একযোগে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। এতে অন্তত ৩১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে বলে দাবি করছে পাকিস্তান।

ভারতের হামলার পরপরই দেশটির ৫টি অত্যাধুনিক বিমানসহ একটি সেনা সদরদপ্তর গুঁড়িয়ে দিয়েছে তাদের সেনারা। এমনকি ভারতকে কঠিন জবাব দিতে প্রয়োজনীয় যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের অনুমতিও পেয়ে গেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী।

শুধু তাই নয়, ভারতের হামলায় ঝরা প্রতি ফোঁটা রক্তের চরম বদলা নেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে